চীন বিভিন্ন দেশকে মহামারি প্রতিরোধে সাহায্য করার মাধ্যমে ‘মানবস্বাস্থ্যের অভিন্ন কমিউনিটি’ গড়ে তুলছে
2020-12-29 14:59:47

ডিসেম্বর ২৯: নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া হল শত বছরে মানবজাতির সম্মুখীন বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ মহামারি। বিশ্বে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীন প্রয়োজনীয় দেশগুলোতে চিকিত্সক দল পাঠিয়েছে, বিভিন্ন দেশের প্রতিরোধমূলক কাজে সাহায্য করেছে এবং বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে মানবজাতির অভিন্ন ভাগ্যের ‘স্বাস্থ্য কমিউনিটি’ গড়ে তোলার চেতনা বাস্তবায়ন করছে। এ পর্যায়ে আমরা বিশ্বের ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধ যুদ্ধে’ ‘চীনা শক্তির’ পর্যালোচনা করবো।

এই কথাগুলো বলেছেন, সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচি। গত ২১ মার্চ বেলগ্রেড বিমানবন্দরে চীনা চিকিত্সক দলকে স্বাগত জানিয়ে এক ভাষণ দেন তিনি। ভাষণে তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লড়াই শেষ না হলেও, তারা সার্বিয়ান ভাইদের সাহায্য করতে কোনো দ্বিধা করে নি। এ অনুভূতি সার্বিয়ার জনগণ কখনওই ভুলবে না। চীন সার্বিয়ার পুরানো বন্ধু এবং এই মৈত্রী কালোত্তীর্ণ হয়ে থাকবে।

 

স্বাগত অনুষ্ঠানে ভুচিচি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি চীনের জাতীয় পতাকায় আন্তরিকভাবে চুমু দেন। চীনা বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় দেশটির মহামারি সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। সে দেশে ৮২ দিন কাজ করার পর চীনা চিকিত্সক দল গত ১০ জুন চীনে ফিরে আসে।

 

যখন করোনাভাইরাসের মহামারি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বিপদ উপেক্ষা করে বিভিন্ন দেশে মহামারি প্রতিরোধের ফ্রন্ট লাইনে দাঁড়িয়েছিল।

 

গত ১২ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় দশ-বারো ঘণ্টা বিমানযাত্রার পর চীনের নয়জনের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক দল ৩১ টন চিকিত্সাসামগ্রী নিয়ে রোমের ফিয়ামিকিনো বিমানবন্দরে পৌঁছায়। তাঁরা ইতালির কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধ করতে গিয়েছিলেন। ইতালিতে পাঠানো চীনের প্রথম বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক দলের প্রধান, সিছুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ওয়েস্ট চায়না হাসপাতালের শ্বাস ও জটিল সেবা বিভাগের পরিচালক লিয়াং জুং আন বলেন, যেখানেই আমরা গিয়েছি সেখানেই আমরা দেখেছি যে, ইতালির লোকজন বুড়ো আঙ্গুল উঁচু করে বা করতালির মাধ্যমে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। ইতালির একটি মেয়ে ছবি আঁকে; যার বিষয়বস্তু- চীন ও ইতালির চিকিত্সকরা যৌথভাবে ইতালির মানচিত্র তুলে ধরেছে।

 

বাংলাদেশে চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক দলের গমন স্থানীয় গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, যৌথভাবে মহামারি প্রতিরোধের মাধ্যমে দু’দেশের মৈত্রী আরও দৃঢ় হবে। তিনি বলেন,

উহানে করোনাভাইরাসের মহামারি দেখা দিলে বাংলাদেশ চীন সরকারকে কিছু সাহায্য দিয়েছিল। পরে চীন সরকার আমাদের আরও বেশি সাহায্য দিয়েছে। চীন সরকারের পাশাপাশি চীনের নানা সংস্থা সাহায্য দিয়েছে। যেমন, জ্যাক মা ফাউন্ডেশন ও আলিবাবা ফাউন্ডেশন আমাদের কয়েক লাখ প্রতিরোধক পোশাক ও ভাইরাস পরীক্ষার কিট দিয়েছে। আমরা এজন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা চীন সরকার ও চীনা জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। যখন আমরা কঠিন বিপদের সম্মুখীন হই, তখন চীন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা খুব খুশি, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হতে যাচ্ছে।

 

এ ছাড়া চীন ইইউ, আসিয়ান ও আফ্রিকান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলন করেছে, চীনের প্রকাশিত করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া চিকিত্সার প্রস্তাব এবং প্রতিরোধ প্রস্তাব বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চীন ১৫০টিরও বেশি দেশ ও ৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সাহায্য দিয়েছে। বিশ্বের ৩৪টি দেশে ৩৬টি বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক দল পাঠিয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে ২০ হাজার কোটিরও বেশি মাস্ক, ২০০ কোটি প্রতিরোধক পোশাক এবং ৮০ কোটি ভাইরাস পরীক্ষার কিট দিয়েছে চীন।

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)