করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও নতুন ধরন: সতর্ক বাংলাদেশের নজর টিকায়
2020-12-27 19:12:17

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও নতুন ধরন: সতর্ক বাংলাদেশের নজর টিকায়_fororder_1227yang3

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ পার করছে গোটা বিশ্ব। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হয়েছে অতি সংক্রামক নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে বাংলাদেশেও এ ভাইরাসের অস্তিত পাওয়া গেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে প্রথম থেকেই বাংলাদেশ তৎপর ছিল। করোনার নুতন ধরন শনাক্ত হওয়ার পর এ বিষয়েও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ।

গত নভেম্বরে বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিসিএসআইআরের ঢাকায় সংগৃহীত নমুনা সিকোয়েন্সিংয়ে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস মিলেছে। প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খান জানান, ১৭টি নমুনা সিকোয়েন্সিং করে তারা ৫টিতে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছেন। এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাওয়া ভাইরাসের ধরনের অনেকটা মিল রয়েছে। ওই ভাইরাসটি ৭০ গুণ বেশি সংক্রমাক। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে অভিমত ড. সেলিমের। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হবার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশ এখনো বিমান চলাচল বন্ধ করেনি। ২৪ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে আসা ১৬৫ জনকে হোমকোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।  বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রয়োজনে যুক্তরাজ্যসহ সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেবেন তারা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও নতুন ধরনে বিস্তার ঠেকাতে বিমান বন্দরে স্ক্রিনিং বাড়ানোসহ বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। আর করোনা চিকিৎিসায় হাসপাতাল ও পরীক্ষাগার প্রস্তুত রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

এদিকে, করোনা সতর্কতার পাশাপাশি গোটা বিশ্বের মতোই বাংলাদেশের নজর এখন করোনা টিকা সংগ্রহ ও জনগণকে টিকা দেয়ার দিকেই নিবদ্ধ। ২১ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৩ কোটি ডোজ আর মে-জুনের মধ্যে ৬ কোটি ডোজ করোনা টিকা আসবে বাংলাদেশে। ফলে মে জুনের মধ্যেই সাড়ে চার কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে।

মন্ত্রিসভার ওই বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ইপিআই ও সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে মূলত টিকা দেওয়া হবে। তবে বেসরকারি হাসপাতালকেও এ কর্মসূচির আওতায় আনার চিন্তা-ভাবনা সরকারের রয়েছে। এরই মধ্যে গ্রাম পর্যায়ে টিকা দেওয়ার প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

দেশের মানুষকে টিকা দেওয়ার একটি খসড়া পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। এতে বলা হয়েছে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ ১৪ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে।  বিশাল এ জনগোষ্ঠীর টিকা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে তিনটি জাতীয় কমিটি। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, দেশের ১৮ বছরের নিচে ৪০ শতাংশ ও গর্ভবতী ও গুরুতর রোগী মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে না।

জাতীয় পর্যায়ে টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় রয়েছে চারটি ধাপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এমআইএস বিভাগের পরিচারক ডা.হাবিবুর রহমান জানান, প্রথম ধাপে রয়েছেন করোনা চিকিৎসায় সরাসরি জড়িত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। তারপর পর্যায়ক্রমে মাঠপর্যায়ে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মাচারীসহ পেশাজীবীরা পাবেন করোনা টিকা। সাংবাদিকরাও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন। টিকাপ্রাপ্তিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে বয়স্ক ও গুরুতর রোগীদের।

তৃণমূল পর্যায়ে টিকা বিতরণের জন্য তৈরি করা হচ্ছে একটি বিশেষ অ্যাপস। যেখানে জন্মসনদ বা এনআইডি দিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন টিকা প্রত্যাশীরা। তবে কবে থেকে টিকা নিবন্ধন শুরু হবে সে দিনক্ষণ এখনো ঠিক করা হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরকার টিকা সংগ্রহের বিষয়ে এ পর্যন্ত যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে করোনা বিষয়ক কারিগরি কমিটি ও টিকা বিতরণ কর্মসূচির সদস্য বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলছেন, লজিস্টিক সাপোর্ট ও জনবল বাড়ানো না হলে টিকা বিতরণ কর্মসূচি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। টিকা বিতরণে যাতে কোনো অনিয়ম না হয় সে জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।