‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় চীনের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করবে জার্মানি: জার্মান রাজনীতিক
2020-12-24 17:16:55

জার্মান সরকারের সাবেক মুখপাত্র ফ্রিডহেল্ম উস্ট সম্প্রতি জানান, চীনের ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা অনেক সুফল বয়ে এনেছে। বর্তমানের চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের  আওতায় চীনের সঙ্গে জার্মানির সহযোগিতা জোরদার করবে। 

তিনি অনেক বছর ধরে চীনের অগ্রগতির উপর নজর রেখে আসছেন উল্লেখ করে ফ্রিডহেল্ম বলেন, ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা চীনে অসাধারণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। এতে কেবল দেশের জনগণের জীবনমানের গুণগত উন্নয়ন হয়েছে তা নয়, বরং বিশ্বের উন্নয়নের জন্যও সুযোগসুবিধা বয়ে এনেছে। সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি’কে দেয়া এক বিশেষ স্বাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, “চীনের ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা নতুন প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। অনেক জার্মান শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে মটর গাড়ি, রাসায়নিক ও কারিগড়ি যন্ত্র তৈরির শিল্প্রতিষ্ঠানগুলো চীনে বড় আকারে পুঁজি বিনিয়োগ করে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের বেচাকেনাও অনেক ভালো। আমরা এসব ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীরতর করবো, আরও পুজিঁ বিনিয়োগ করে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করব এবং আরও বেশি সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব খুঁজে বের করব। পাশাপাশি ইউরোপে, বিশেষ করে জামার্নিতে, অনেক চীনা শিল্প্রতিষ্ঠানও পুঁজি বিনিয়োগ করেছে।চীনের বিনিয়োগ এসব দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরিতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে আসছে।” 

তিনি মনে করেন, চীনই সর্ব প্রথম কার্যকরভাবে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং তার অর্থনীতি ও উৎপাদন পূনরুদ্ধার এগিয়ে নিয়েছে। আর তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মহামারি প্রতিরোধে পথ বাতলিয়েছে চীন। 

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন বিস্ময়কর সফলতা অর্জন করেছে। বতর্মানে বিশ্বব্যাপী চীন হচ্ছে একমাত্র মৌলিক অর্থনীতি যা ২০২০ সালে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২১ সালেও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আমার মনে হয়। চীনের শক্তিশালি অর্থনৈতি পূনরুদ্ধার গোটা বিশ্ব ও বড় বাণিজ্যিক দেশ জার্মানির জন্যও দারুণ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি চীনের নতুন চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা সেদেশে থাকা বিদেশি বিনিয়োগকারী ও  প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরও বেশি সুযোগসুবিধা সৃষ্টি করবে। কারণ চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনায় ‘শক্তিশালি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণ করা’র কথা বলা হয়েছে। এতে তাদের জন্য অনেক সুবিধা বয়ে আনবে।”

তিনি জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, জার্মানি ও চীন সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে অব্যাহতভাবে উন্নয়ন করেছে। দু’দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিনিময় হার  দিন দিন বেড়েই চলছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ দু’দেশের নানা খাতের বিনিময় ও সহযোগিতা আরও ত্বরান্বিত করছে। 

তিনি বলেন,“প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কর্তৃক ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ উত্থাপনের মাধ্যমে বৈশ্বিক বিষয়ে চীনের ইতিবাচক অংশগ্রহণের মনোভাবের প্রতিফলন হয়। এতে অসংখ্য দেশই উপকৃত হবে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে সম্পৃক্ত দেশগুলো ও চীন সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মের্কেল ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে এক বিশাল সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছেন। বিশেষ করে এর আওতায় তিনি চীনের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে আগ্রহী।”
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, চীনের নেতা সম্প্রতি আবার ঘোষণা করেন যে, বাস্তব কার্যক্রমের মাধ্যমে বহুপক্ষবাদকে রক্ষা করবে চীন। এ ধারণার সঙ্গেও তিনি একমত প্রকাশ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচিৎ পারস্পরিক যোগাযোগ জোরদার করা, পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং হাতে হাত রেখে ঝুঁকি মোকাবিলা করা। তিনি প্রত্যাশা করেন যে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ এর আওতায় ইউরোপ- চীন , বিশেষ করে জার্মানি- চীন ‘একসঙ্গে নির্মাণ, একসঙ্গে অংশীদারিত্বে’র নীতিতে বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করবে এবং শান্তি ও উন্নয়নের পথে অগ্রসর হবে। 

তিনি বলেন,“আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর দুটিকে সংযুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে ইউরোপ ও চীন। এটি কেবল একমুখি পথ নয়, বরং মাল, ধারণা ও নতুন প্রযুক্তি বিনিময়ের দ্বৈত পথ। দীর্ঘ সময় ধরে জার্মানি ও চীন রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখে আসছে। দু’পক্ষেরই উচিৎ এ অংশীদারিত্বমূলক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখা।”