ডিসেম্বর ২৪: সম্প্রতি চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯৪ সাল থেকে বছরের শেষের দিকে, বিগত বছরের অর্থনৈতিক কাজের সংক্ষিপ্তসার, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ, নতুন বছরের অর্থনৈতিক কাজের সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তা এবং প্রধান কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রতিবছর একবার করে আয়োজিত চীনের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলনের উদ্দেশ্য। এটি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র দেশ পরিচালনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা।
১৯৯৪ সালে, জিডিপি’র দিক দিয়ে চীন ছিল বিশ্বের অষ্টম দেশ। তখন চীনের জিডিপি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি’র ৭.৭ শতাংশের সমান। আর চলতি চীনের মোট জিডিপি মার্কিন জিডিপি’র ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিগত ২৬ বছর ধরে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমসহ চীনা অর্থনীতিকে সমন্বয় করেছে; বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে এবং বিভিন্ন অসুবিধা ও বাধা অতিক্রম করে চীনা অর্থনীতি সামনে এগিয়ে গিয়েছে।
বিদায়ী ২০২০ সাল মানব ইতিহাসে তাত্পর্যপূর্ণ এক বছর। আকস্মিকভাবে কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এই বছরেই। মহামারির কারণে বিশ্বের অর্থনীতি থমকে দাঁড়ায়। একের পর এক দেশে লকডাউন জারি করা হয়; অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির বদলে মন্দাবস্থা দেখা দিতে থাকে। একই সময়ে, আধিপত্যবাদ, একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে বিশ্বের অর্থনীতিতে। আর এর ভোগান্তির শিকার হতে হয় বিশ্বের মানুষকে। তাদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
দি গার্ডিয়ান সম্প্রতি জানিয়েছে যে, ব্রিটেনে কোভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন একটি স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়ছে। এই ভাইরাস আসল ভাইরাসের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দেশটিতে নতুন দফার লকডাউন শুরু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য জরুরি প্রকল্পের প্রধান মাইকেল রায়ান বলেছেন, কিছু দেশ মহামারীর প্রথম ধাক্কাই এখনও সামলে উঠতে পারেনি। মোদ্দা কথা, বর্ধিত অনিশ্চয়তা হতে যাচ্ছে ২০২১ সালের বৈশ্বিক অর্থনীতির মূল সুর।
চীনের বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। বছরের প্রথম প্রান্তিকে মহামারির কারণে চীনের অর্থনীতি ৬.৮ শতাংশ সংকুচিত হয়। কিন্তু চীন মহামারির প্রথম ধাক্কা সামলে নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উত্পাদনকাজ পুনরায় শুরু করতে সক্ষশ হয়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনা অর্থনীতি ৩.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। গত নভেম্বর মাসের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে বলা হয়, শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবৃদ্ধির হার ২০১৯ সালের তুলনায় ৭.০ শতাংশ বেশি। ভোক্তাসূচকও বেড়েছে; খুচরা বিক্রি বেড়েছে ৫.০ শতাংশ। বিভিন্ন অর্থনৈতিক তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, চীনা অর্থনীতি ইতোমধ্যেই মহামারির ধাক্কা পুরোপুরি সামলে উঠেছে এবং চীনের অর্থনীতি সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।
যাই হোক, বিশ্বব্যাপী মহামারি পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল নয়। অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সমস্যা তো আছেই। ৯৫ শতাংশ মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা শোচনীয়। মহামারি-পরবর্তী যুগে চাহিদা হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, ক্রেতাদের আয় কম হবে।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভিত্তি খুবই দৃঢ় না হওয়ার প্রেক্ষাপটে, চীন ‘ডাবল লুপ’ নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো বাস্তবায়ন করছে। এটি চীনা অর্থনীতির উন্নয়নে কৌশলগত নির্দেশনা দিয়েছে। চীনের আরও বিশাল উন্নয়নের জন্যও সহায়ক হবে এই কাঠামো। সম্প্রতি জাপানি প্রতিষ্ঠান ‘জেত্রো’-র কুয়াং চৌ কার্যালয়ের প্রধান শিমিকু জেনজি বলেন, ‘চীনে টাকা উপার্জন করা না-গেলে, বিশ্বে আর কোথায় টাকা উপার্জন করা যাবে?’ (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)