‘যৌথভাবে নতুন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত
2020-12-23 16:57:05

গত মঙ্গলবার চীনের আন্তর্জাতিক অধ্যায়ন ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ‘যৌথভাবে নতুন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীরা জানান, কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা আরও জটিল ও কঠিন হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ এ ব্যাপরে সহযোগিতা আরও জোরদার করা। একসঙ্গে সন্ত্রাসবাদসহ অপ্রচলিত সকল নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলা করা, দ্বৈত নীতির বিরোধিতা করা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাকে রাজনীতিকরণ থেকে বেরিয়ে আসা। 

ওই সেমিনারে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লৌ চাও হুই তাঁর ভাষণে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহযোগিতার চারটি প্রস্তাব পেশ করেন। যথা: আন্তর্জাতিক মতৈক্য দৃঢ়ভাবে রক্ষা করা, ইতিবাচকভাবে কার্যকর কর্যক্রম গ্রহণ করা, অভিন্ন মানদন্ড বজায় রাখা, এবং সন্ত্রাসীদের উৎস নির্মূল করা। 

তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী ঘটমান সন্ত্রাসী হামলাগুলো আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, সন্ত্রাসীরা দূরে চলে যায় নি। আমাদের সামনে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনের অনেক কাজ রয়েছে। তাই বৈশ্বিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে হবে। সন্ত্রাসবাদ দমনে আমাদের বহুপক্ষপাদ, সমন্বয়, ও অভিন্ন মানদন্ড, এবং উন্মুক্ত ও শহনশীলতা বজায় রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, তথা-কথিত ‘পূর্ব তার্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলন’ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসী সংস্থার তালিকাতে রয়েছে। তাই একে দমন করাই চীনের সন্ত্রাসবাদ দমনের মূল উদ্দেশ্য এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। 

তিনি বলেন,“অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, কিছু দেশ সন্ত্রাসবাদ দমনে দ্বৈত নীতি গ্রহণ করে থাকে। তারা প্রকাশ্যে তাদের সন্ত্রাসী সংস্থার তালিকা থেকে ‘পূর্ব তার্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলন’কে বাদ দিয়ে এ সন্ত্রাসী গুষ্টিকে ‘ক্লিন চিট’ দিয়ে সন্ত্রাস করার আশকারা দিচ্ছে।এতে আন্তর্জাতিক মতৈক্য ভেঙ্গে পড়ে এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের সহযোগিতাকে নষ্ট করেছে। আমরা বিশ্বাস ও প্রত্যাশা করছি যে, বিভিন্ন পক্ষের উচিৎ  ‘পূর্ব তার্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলন’ এর সহিংস ও সন্ত্রাসী রূপকে উপেক্ষা না করা। একে নির্মূল করতে হাতে হাত রেখে কাজ করা।” 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, একতা ও সহযোগিতা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ দমনের সবচেয়ে শক্তিশালি অস্ত্র। জিরো-সাম নীতি পরিহার করে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের পক্ষে সকলকে দাড়ানো উচিৎ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনের মতৈক্যকে নষ্ট করার একতরফাবাদ, অহমিকা, ও তর্জস-গর্জনের বিরোধিতা করতে সকলের প্রতি তিনি আহবান জানান। 

তিনি বলেন,“একথা কখনোই বিবেচ্য হওয়া উচিৎ নয় যে, সন্ত্রাসীরা কোন দেশের বা কোন ধর্মের অনুসারি। তাদেরকে শক্তহাতে দমন করতে হবে। মতবাদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব ছেড়ে দিয়ে দ্বৈত নীতি পরিহার করতে হবে।” 

তিনি আরো বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা উচিৎ।

মিশরের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মেদ ফোয়াদ আহমাদ বলেন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে হলে সর্বাঙ্গীণ ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ নানা খাতে এ ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে। 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সকল সন্ত্রাসী সংস্থার প্রতি একই নীতি গ্রহণ করা উচিৎ। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সব সন্ত্রাসী সংগঠনকে একই পাল্লায় মাপতে হবে।”

উক্ত সেমিনারে রাশিয়া, ফ্রান্স, মিশর, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখাস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান ও সিরিয়াসহ মোট ১২টি দেশের সরকারি কর্মকর্তা  এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী গবেষণা সংস্থার প্রধান ও বিশেষজ্ঞগণ  আনলাইনে অংশগ্রহণ করেন।