হুনান প্রদেশের সাং চি জেলার দারিদ্র্যমুক্তির গল্প
2020-12-22 13:05:11

চীনের হুনান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত সাং চি জেলা উ লিং পাহাড়ের হতদরিদ্র এলাকার একটি অংশ। গত ২০১৪ সালে এতদাঞ্চলের দারিদ্র্যের হার ছিল ২৮.২৮ শতাংশ। চীনের মেধাস্বত্ব ব্যুরো ১৯৯৪ সাল থেকে সাং চি জেলাকে সহায়তা দিতে শুরু করে।  স্থানীয় লোকজন ওই এলাকার ভৌগলিক বৈশিষ্টের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। সাং চি জেলার দারিদ্র্যমুক্তির অভিজ্ঞতা অন্য জায়গায় কাজে লাগতে পারে।

 

সাং চি জেলায় একটি সাদা চা কারখানায় একজন দরিদ্র নারী কাজ করছেন। তাঁর নাম লি ইয়ান পিং। তাঁর স্বামী গত ১০ বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ছেলে বাইরে লেখাপড়া করছেন। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে লি ইয়ান পিং সাদা চা কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন এবং তার মাসিক আয় ৩ থেকে ৪ হাজার ইউয়ান। তিনি বলেন, ‘এখানে কাজ করার পর আমার জীবনযাপনের মান অনেক উন্নত হয়। বাড়ি থেকে কারখানায় আসতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগে। আমি স্থায়ী একটি চাকরি পেয়েছি। পাশাপাশি বাড়িতে সব কাজও করতে পারি’।

 

সাং চির সাদা চা এখন চীনে খুবই বিখ্যাত। এটি ভৌগলিক বৈশিষ্টপূর্ণ পণ্য। কারণ ওই স্থানের সাদা চা তার নিজস্ব মান, স্বাদ, ও গুনের জন্য খ্যাতি লাভ করেছে। এমন চা কেবল সাং চিতেই পাওয়া যায়।

 

বার্তমানে সাং চি জেলায় প্রায় ৫২৬৭ হেক্টর জমিতে সাদা চা চাষ করা হয় এবং সাদা চা সমবায়ের সংখ্যা সেখানে ৯৫টি। সাং চি সাদা চার বিখ্যাত ব্র্যান্ড রয়েছে ২০টিরও বেশি। সাদা চা শিল্পে জড়িত আছেন ৭৪.৫ হাজার শ্রমিক। এর মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্র মানুষ।

 

সাদা চা ছাড়া সাং চি জেলায় চাষ করা হয় মুলা, মধু,বাঁশের পাতা ইত্যাদি। সবই ভৌগলিক বৈশিষ্টসম্পন্ন পণ্য। অর্থাৎ অন্য কোন এলাকায় এমন মান সম্পন্ন এসব পণ্য পাওয়া যায় না। বর্তমানে সারা জেলায় আরও ৪০ হাজার লোক বাঁশের পাতা বাছাইয়ের কাজ করেন এবং এ শিল্পের মাধ্যমে ১২ হাজার লোক দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন।

 

ভৌগলিক বৈশিষ্টপূর্ণ পণ্য চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন চীনের মেধাস্বত্ব ব্যুরোর নেয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ। সাং চি জেলার ছাং কুয়ান ইউয়ু গ্রামের সিপিসির সম্পাদক ও চীনা জাতীয় মেধাস্বত ব্যুরোর কর্মকর্তা সি পেং বলেন, ভৌগলিক বৈশিষ্টপূর্ণ পণ্য চাষাবাদের মাধ্যমে গ্রামের বাসিন্দারা আবিষ্কার করেন যে, আগে তারা কেবল কিছু খাদ্য চাষ করতে পারতো, তবে এখন তারা একদিকে জমি বর্গা দেয়ার মাধ্যমে আয় করতে পারে অন্যদিকে কারখানায় কাজ করেও উপার্জন করতে পারে।

 

বর্তমানে সাং চি জেলার সাদা চা ও বাঁশের পাতা দুটির শিল্পমূল্য ৪৫ কোটি ইউয়ান। সাং চি জেলার উপপ্রধান চাও ইউন হাই বলেন,

স্থানীয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এবং নিজের প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে জাতীয় মেধাস্বত ব্যুরো ভৌগলিক বৈশিষ্টপূর্ণ পণ্য চাষের প্রস্তাব দেয়। একটি ব্র্যান্ড ও বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন পণ্য তৈরির মাধ্যমে লোকজনকে দারিদ্র্যমুক্ত করা হয়।

 

বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার চীনে নিযুক্ত কার্যালয়ের পরিচালক লিউ হুয়া বলেন,তিনি খুব খুশি যে, মেধাস্বত্ব ব্যবহার করে দারিদ্র্যবিমোচন করছে চীন। ভবিষ্যতে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোও সাং চি জেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে।

 

তিনি বলেন, “আমার মতে, মেধাস্বত্বের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন বিশেষ একটি বৈজ্ঞানিক ও রিসোর্সফুল পদ্ধতি। এ দারিদ্র্যবিমোচন প্রকল্প এখানে নিয়ে আসে মেধাস্বত্ব ব্যুরো। আমরা এখানে মেধাস্বত্বরে ধারণা প্রচার করেছি এবং আরও বেশি মানুষ মেধাস্বত্ব থেকে উপকৃত হবে”।

(শিশির/এনাম/ আকাশ)