আজকের টপিক- বড় আকারে উত্পাদনের জন্য প্রস্তুত চীনের করোনা টিকা
2020-12-22 13:16:16

আজকের টপিক- বড় আকারে উত্পাদনের জন্য প্রস্তুত চীনের করোনা টিকা

ডিসেম্বর ২২: চীনের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রস্তুত করোনার টিকার মধ্যে ৫টির তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকল পরীক্ষা চলছে। এক্ষেত্রে পৃথিবীতে প্রথম সারিতে আছে চীন।  ‘আজকের টপিক’-এ চীনের টিকার উত্পাদন ও নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে আলোচনা করব।

বর্তমানে চীনে মোট ৫টি প্রযুক্তির ব্যবহারে তৈরি  ১৫টি করোনা টিকা ক্লিনিকল পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকল পরীক্ষা চলছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষ জানায়, চীনের করোনা টিকা বড় আকারে উত্পাদনের জন্যও প্রস্তুত। এসব টিকার বটলিং ও কোল্ড-চেইন পরিবহনের প্রস্তুতি চলছে।

১. চীনের একাধিক টিকার-কোম্পানির উত্পাদনক্ষমতা ১০ কোটির ওপরে

চীনের উত্পাদিত করোনা টিকা বিশ্বের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। সিনোফার্মের টিকা উত্পাদনক্ষমতা আগামী বছর ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। সিনোভেকের বর্তমান উত্পাদনক্ষমতা ৩০ কোটি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত তাদের দ্বিতীয় উত্পাদন লাইন প্রস্তুত হওয়ার পর উত্পাদনক্ষমতা ৬০ কোটিতে উন্নীত হবে। আগামী বছরে ফোসুন ফার্মার অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এসআরএনএ-র করোনা টিকার উত্পাদন অন্তত ১০ কোটি হবে।

২. ইতোমধ্যে ১০ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছে, কোনো গুরুতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি

গত জুলাই থেকে চীনে করোনা টিকার জরুরি ব্যবহার শুরু হওয়ার পর, ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের টিকা দেওয়া হয়েছে। তারা স্বেচ্ছায় টিকা গ্রহণ করেছেন।  এ পর্যন্ত এমন ১০ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই কোনো গুরুতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

শুধু চীনের মধ্যে নয়, গত ৯ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাস্থ্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চীনের সিনোফার্মের করোনা টিকা ব্যবহার শুরু করে। কয়েকদিন পর সিনোফার্মের টিকা বাহরাইনেও ব্যবহার শুরু হয়। এ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকল পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, এর কার্যকারিতা ৮৬ শতাংশ।

অন্যদিকে, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টিকা পরামর্শক মনস্ফ স্লোই স্বীকার করেছেন যে, উত্পাদনের সময় ভুল হওয়ার কারণে মোর্ডেনা কম্পানি ইতোমধ্যে ৪ লাখ অযোগ্য টিকা ধ্বংস করেছে। সম্প্রতি ফাইজার কম্পানির টিকা নেওয়ার পর ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকজনের শরীরে গুরুতর অ্যালার্জি দেখা দেয়। একজন মার্কিন নার্স টিকা নেওয়ার পর অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এর আগে ফাইজারের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকল পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক মুখের পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন। মোর্ডানারের ক্লিনিকল পরীক্ষায়েও ৩টি বিরূপ ঘটনা ঘটেছিলো।

৩. বটলিং ও কোল্ড-চেইন পরিবহন সুনিশ্চিত

টিকা গবেষণার পর নিরাপদ ও কার্যকর পরিবহন একটি চ্যালেঞ্জ। ফাইজার ও মোর্ডেনার টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য মাইনাস ৭০ ও মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে হয়। তা না হলে টিকা নষ্ট হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক টিকা এমন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, যা বেশ ব্যয়বহুল ও জটিল।

কিন্তু চীনের সংশ্লিষ্ট পক্ষ জানায়, চীনের সিনোফার্ম ও ক্যানসিনোবাইও’র করোনা টিকা মাইনাস ২ থেকে মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা যাবে।

সম্প্রতি চীনের সিনোফার্মার দুটি দল করোনার টিনা পরিবহনের ড্রিল করেছে। দেশের ৩১টি প্রদেশের টিকা পরিবহনসংশ্লিষ্ট সকল শাখা কার্যালয় এতে অংশগ্রহণ করেছে। টিকার অর্ডার পাওয়া থেকে সিস্টেম স্কেডুলিং, পিকাপ ও গুদাম থেকে বের করা, বিভিন্ন প্রাদেশিক সংরক্ষণকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া, শ্রেণিবিভাজন করা, তারপর জেলা পর্যায়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া—পুরো প্রক্রিয়াটির ড্রিল করা হয়েছে। এতে মানদন্ড পরীক্ষা, তথ্য বিনিময়, ক্রেতা সেবা, সংরক্ষণ ও পরিবহন—ইত্যাদি সব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করা হয়েছে।

তা ছাড়া, চীনের টিকা শিল্প সমিতি সম্প্রতি জানায়, চীনের টিকা বোতলজাত করার কাজেও কোনো সমস্যা হবে না; এক্ষেত্রে উত্পাদনক্ষমতা প্রতিবছরে ৮০০ কোটির উপরে। চাহিদা মেটাতে কোনো সমস্যা হবে না। (স্বর্ণা/আলিম/ছাই)