চলুন বেড়িয়ে আসি: সুইজাল্যান্ডের জুরিখ থেকে
2020-12-18 19:34:07

 

জুরিখ সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর। যা সুইজারল্যান্ডের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে সুপরিচিত। ইউরোপের প্রধান শিল্প ও অর্থনৈতিক রাজধানীগুলোর মধ্যে জুরিখ পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে আনন্দদায়ক এবং আকর্ষণীয় স্থান। সাংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য এখানে আছে বেশকিছু জাদুঘর এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা। পর্যটকদের দর্শনের জন্য জুরিখ সেরা সুইস শহরগুলির মধ্যে অন্যতম।

জুরিখে যা যা দেখবেন

লেক জুরিখ: পরিষ্কার এই হ্রদটি বেল্লেভিউ এলাকা থেকে শুরু হয়ে তিফেনব্রুনেন পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে অবকাশ যাপনের জন্য এই লেক আদর্শ জায়গা। লেক জুরিখের জলে সাতার কাটা কিংবা নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে।

 

জুরিখ অলস্টাড : জুরিখ অলস্টাড বিংশ শতাব্দীর পূর্বের ঐতিহাসিক শহরের অন্তর্ভুক্ত একটি এলাকা। এখানে জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষণ এবং স্থাপত্য নিদর্শনের মধ্যে আছে বেশ কয়েকটি ল্যান্ডমার্ক, প্লাজা, লিনহেনহফ, ফ্রমুমুনস্টার, সেন্ট পিটার্স চার্চ, নিউ মার্কেট এবং পুরানো মধ্যযুগীয় রাথাউস আবাসস্থল।

 

ইউটিলিবর্গ: যারা পাহাড়ের উপর থেকে জুরিখ শহর এবং লেক জুরিখের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তারা ইউটিলিবুর্গ চলে যেতে পারেন। এখানে পাহাড়ের উপর উটো কুলম নামে ছোট্ট একটি হোটেল এবং দুটি টাওয়ার রয়েছে। টাওয়ারগুলোর একটি টেলিভিশন সংকেতের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং অন্যটিতে নিদৃষ্ট ফি দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আলটিসগেটলি, ট্রাইমলি বা অ্যালবিস্রিডেন থেকে ইউটিলিবুর্গে যাওয়ার হাটা পথ রয়েছে এছাড়া জুরিখ থেকে ট্রেনে ইউটিলিবুর্গ যাওয়া যায়। ইউটিলিবুর্গ ক্যাম্পিং এবং হাইকিং এর জন্য আদর্শ স্থান।

 

ফরাসুস্টার: নারী গির্জার বা ফরাসুস্টার জুরিখের ৪ টি প্রধান চার্চের মধ্যে অন্যতম। ৮৫৩ সালে জার্মান নাগরিক লুইস তাঁর মেয়ে হিল্ডগার্ডের উপাসনার এটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে গির্জাটি উপাসনা এবং ভ্রমণের জন্য চালু রয়েছে। গির্জাটির অন্যতম আকর্ষনীয় দিকের মধ্যে রয়েছে ৩০ ফুট উঁচু কাচের জানালা, শিল্পী পল বোডার এবং টাওয়ারের ফ্রেসকো ঘড়ি।

 

সুইস ন্যাশনাল মিউজিয়াম : এই মিউজিয়ামে প্রস্তর যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের সংস্কৃতি এবং জীবন দর্শনের বিভিন্ন উপাদান সংরক্ষিত আছে। ১৮৯৮ সালে গুস্তাভ গুল এই মিউজিয়ামটি স্থাপন করেন। সুইজারল্যান্ডের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে এর থেকে উত্তম স্থান আর দ্বিতীয়টি নেই।

গ্রসমুনস্টার : “Great Minister” খ্যাত এই গির্জাটি শার্লেম্যান প্রতিষ্ঠা করেন। গির্জার টুইন টাওয়ারকে জুরিখের সবচেয়ে স্বীকৃত ল্যান্ডমার্ক হিসাবে ধরা হয়। ১২ শতকে গির্জাটি আধুনিকায়ন করে বিখ্যাত শিল্পী অগাস্টো গিয়াকোমেট্টি এবং অট্ট মঞ্চের ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যের দরজা স্থাপন করা হয়। গির্জার অভ্যন্তরে ফেলিক্স ও রেগুলা, জুরিখের স্রষ্টা এবং শার্লেম্যানের সন্মানে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।

 

লিন্ডেনহফ: লিম্মত নদীর তীরে অবস্থিত সবুজে ঢাকা লিন্ডেনহফ শহরের আছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। লিন্ডেনহফ পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই শহরে আছে রোমান কাসেল, নাগরিক সমাবেশের স্থান, পুরাতন প্রাসাদ, মেসোনিক লজ এবং লিন্ডেনহফ দুর্গ। ঐতিহ্যবাহী এই শহরে পায়ে হেটে ভ্রমণ আপনার মনকে নিঃসন্দেহে প্রশান্ত করে দেবে।

রিটবার্গ মিউজিয়াম: ১৮৫৭ সালে জার্মান শিল্পপতি জন্য নির্মিত নিক্লাসাসিকাল ভিলাটি ব্যারন এডুয়ার্ড ভন ডের হায়দতের সংগ্রহশালা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রোমের ভিলা আলাবানি মডেলের অনুকরনে নির্মিত রিটবার্গ মিউজিয়ামটি সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত বিশ্ব ঐতিহ্য নিদর্শনের একমাত্র যাদুঘর। এখানে ভারতীয়, তিব্বতী, চীনা, আফ্রিকান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায।

জুরিখ চিড়িয়াখানা (Zurich Zoo) : ইউরোপের অন্যতম সেরা এই চিড়িয়াখানায় প্রায় ৩৬০ প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী রয়েছে। এখানে বন্যপ্রাণীদের তাদের অনুকুল প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখা হয়েছে। 

কুন্ঠাউস জুরিখ: কার্ল মোজার এবং রবার্ট কারজেলের ডিজাইনে নির্মিত কুন্ঠাউস জুরিখ জাদুঘরটি ১৯১০ সালে উন্মুক্ত করা হয়। 

জুরিখ ভ্রমণের সময়

বছরের যেকোন সময়ই জুরিখ ভ্রমণে যেতে পারেন তবে গ্রীষ্মকাল জুরিখ ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। 

জুরিখ কিভাবে যাবেন

বিমানে চড়ে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি জুরিখ যাওয়া যায়। সুইজারল্যান্ড দূতাবাস থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। ব্যবসায়িক কাজে যেতে হলে বিজনেস ভিসার দরকার হয়। এছাড়া সেনগেন ভিসা নিয়ে সু্ইজারল্যান্ড ঘুরে আসাতে পারবেন।

জুরিখ ভ্রমণের কিছু পরামর্শ

·        পরিবহণ খরচ এবং মিউজিয়ামে প্রবেশের অর্থ সাশ্রয় করতে জুরিখ পাস কিনতে পারেন। ২৪ এবং ৭২ ঘন্টা মেয়াদে জুরিখ পাস কিনতে ২৪ CHF এবং ৪৮ CHF লাগে।

·        জুরিখে এককালীন ২০ CHF পরিশোধ করে ১ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন বাইক স্ট্যান্ড থেকে বাইক ভাড়ায় নেয়া যায়।

·        জুরিখে মাংসের দাম তুলনামূলক বেশি তাই খরচ কমাতে খাবার থেকে মাংসের আইটেম বাদ দিতে পারেন।

·        আবাসন খরচ কমাতে স্থানীয়দের সাথে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন।

·        প্রয়োজনে সরাসরি ট্যাক্সি ভাড়া না করে উবারের মত রাইড শেয়ার অ্যাপস ব্যবহার করুন।