রোববারের আলাপন-২০১২২০
2020-12-18 23:26:49

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চায়না মিডিয়া গ্রুপের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আলিম এবং শিয়েনান আকাশ।

বন্ধুরা, এ বছরে উহান শহরে কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর সময়, দেশব্যাপী অনেক চিকিতসক ও নার্স উহানে গিয়ে সহায়তা করেছেন। তাদের চিকিৎসায়, তাদের ভালবাসা ও যত্নে রোগীরা সুস্থ হয়েছেন। এ সময় অনেক সুন্দর কাহিনীর জন্ম হয়েছে।  আজ তেমন একটি গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।

২ নভেম্বর সকালে, ৭৪ বছর বয়সী উহানবাসী জনাব হুয়াং কেন পেন ৬০০ কিলোমিটারের সাইকেলযাত্রা শুরু করেন। তার এবারের যাত্রার লক্ষ্য হচ্ছে কৃতজ্ঞতা জানানো। তিনি একটা সিল্কের ব্যানারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনসূচক কথা লিখেছেন। তুলে দেবেন নানচিং শহরের কু লও হাসপাতালের চিকিৎসকদের হাতে। জনাব হুয়াং বলেন, “কু লও হাস্পাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি কৃতজ্ঞ! তাঁরা আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছেন!”  

২৭ অক্টোবর সকালে, শ্বাসযন্ত্র রোগের চিকিৎসক তাই চিং হং একটি খুদে বার্তা পান। এতে লেখা হয়েছে: “পরিচালক তাই, শুভ সকাল! আমি ইতোমধ্যে সাইকেল করে উ হান থেকে রওয়ানা দিলাম। আমি নানচিং আসছি আপনার সঙ্গে দেখা করতে!” তাই চিং হং এ দেখে অনেক আবেগাপ্লুত হন ও আনন্দ পেয়েছেন। উহানে বিদায়ের পর, ৭৪ বছর বয়সী জনাব হুয়াংয়ের শারীরিক অবস্থা এখন অনেক ভাল মনে হয় । তিনি শিগগিরি বার্তার জবাব লিখেন। তিনি লেখেন: সাবধানে আসবেন, গরম কাপড় পরে আসবেন।

২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায়, জনাব হুয়াং লাল পোষাক পড়ে সাইকেলে করে এসেছেন। তিনি চিকিৎসক তাই চিং হংকে দেখতে যান। তিনি কিছুটা দৌড়ে তার কাছে গিয়ে তার সঙ্গে করমর্দন করতে শুরু করেন। এবারে, তিনি প্রথমবারের মতো  মুখোশবিহীন পরিচালক তাইকে দেখছেন, ৩৫ দিন একসাথে ছিলেন, এজন্য জনাব হুয়াং তাঁকে দেখেই চিনে ফেলেন। “ইনি হচ্ছেন নার্স লি ইয়াং পিং!” জনাব হুয়াং একজন পর একজন চিকিৎসক ও নার্সের সাথে সাক্ষাত করেন। তিনি বলেন, “এ মেয়ে আমার চুল ধুয়ে দিয়েছে ও চুল শুকিয়েও দিয়েছে।”

এ বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে, জনাব হুয়াংর জ্বর ও কাশি হয়। তারপর তাঁর শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস শনাক্ত হয় এবং ৮ ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাস্পাতালের ১৫ দিনে, তিনি জ্বরে ভুগতে থাকেন, রোগের অবস্থা গুরুতর হতে থাকে এবং একসময়, তাঁর শ্বাস নিতে কষ্ট হতে থাকে। খেতেও পারতেন না, তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। উহানকে সহায়তা দানকারী কু লৌ হাস্পাতালের চিকিৎসকদলের অব্যাহত প্রচেষ্টা ও যত্নে জনাব হুয়াংয়ের অবস্থা আস্তে আস্তে ভাল হতে থাকে এবং অবশেষে তিনি ভাইরাইসকে জয় করেন। 

২৯ মার্চ, জনাব হুয়াং সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যান। চলে যাওয়ার আগে তিনি পরিচালক তাইয়ের হাত ধরে বলেন, “পরিচালক তাই, যখনই আমার শরীর সম্পুর্ণভাবে সুস্থ হবে তখনই আমি সাইকেলে করে নান চিং গিয়ে আপনাকে দেখে আসবই!” ৭ মাস পর, তিনি তার কথা পূরণ করেছেন।

জনাব হুয়াং ইতোমধ্যে ৭৪ বছর বয়সী। তারপরও তাঁর শরীর অনেক ভাল। তিনি সাঁতার কাটেন ও সাইক্লিং পছন্দ করেন। ২০১৭ সালে, তিনি সাইকেলে করে ছেং তু থেকে ২০০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে তিব্বতে গিয়েছিলেন। 

উ হান থেকে নান চিং যেতে সাইকেল করে প্রায় ৬০৫ কিলোমিটার। জনাব হুয়াং বিস্তারিত সাইক্লিংয়ের পরিকল্পনা তৈরি করেন। তিনি বলেন, “প্রতিদিনের সাইক্লিংয়ের দূরত্ব নির্দিষ্ট। সিডিউল পূরণ করতে হবে ও প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।” তিনি নানচিংয়ে পৌঁছানোর পর, দ্রুত কু লৌ হাসপাতালে গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, তিনি চিকিৎসকদের জানাতে চান যে তিনি এখন অনেক ভালো আছেন এবং এভাবে তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করতে চান।