চাঁদের সংগৃহীত নতুনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আগ্রহী চীন
2020-12-18 14:44:59

চাঁদের সংগৃহীত নতুনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আগ্রহী চীন

 

ডিসেম্বর ১৮: ১৭ ডিসেম্বর ভোর ১টা ৫৯ মিনিটে ‘ছাং এ ৫’  রিটার্নার চাঁদের নমুনা নিয়ে পূর্বনির্ধারিত অঞ্চলে নিরাপদে অবতরণ করে। এর মাধ্যমে চন্দ্র অন্বেষণ প্রকল্প ‘ছাং এ ৫’ মিশন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। আর ৪৪ বছর পর মানবজাতি আবারও চাঁদের নমুনা হাতে পায়। ‘ছাং এ ৫’ মিশনের সাফল্য চীনকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। এদিন চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে সমান ও পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে চাঁদের নমুনা নিয়ে গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট তথ্য ভাগাভাগি করতে আগ্রহী চীন।

‘ছাং এ ৫’ মিশন হচ্ছে চীনের সবচেয়ে জটিল মহাকাশ অভিযান। বিগত ২৩ দিনের মধ্যে ‘ছাং এ ৫’ চন্দ্রযান সাফল্যের সঙ্গে একবার ডকিং, ছয়বার পৃথকীকরণ, দুই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ এবং পাঁচবার নমুনা স্থানান্তরকাজ সম্পন্ন করেছে। এই প্রক্রিয়ায় ১১টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ও মূল পদক্ষেপ ছিল। চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক এবং চন্দ্র অন্বেষণ প্রকল্পের উপ-প্রধান উ ইয়ানহুয়া রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন,

 

“এই মিশনে চীন প্রথমবারের মতো পাঁচটি ক্ষেত্রে সফল হয়েছে বলা চলে। এগুলো হচ্ছে: পৃথিবীর বাইরের কোনো উপগ্রহ বা গ্রহ থেকে নমুন সংগ্রহ ও তা প্যাকেটজাতকরণ; পৃথিবীর বাইরের কোনো উপগ্রহ বা গ্রহ থেকে কোনো যন্ত্রের উড্ডয়ন ও সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রবেশ; চাঁদের কক্ষপথে মানববিহীন দুটি যানের সংযুক্তি; রিটার্নারকে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে বাউন্স করিয়ে এর গতি কমানো; চীনে চন্দ্রনমুনার স্টোরেজ, বিশ্লেষণ ও গবেষণাব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই মিশনের সফলতা হচ্ছে চীনের মহাকাশ শিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীন মহাকাশযানকে চাঁদে পাঠিয়ে তা আবার ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছে। চাঁদের প্রদক্ষিণ, চাঁদে অবতরণ, ও চাঁদের নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন—তিনটি ক্ষেত্রেই মিশন সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে চীনের চন্দ্র ও গ্রহ নিয়ে গবেষণার জন্য দৃঢ় ভিত্তি সৃষ্টি করেছে।

 ‘ছাং এ ৫’ মিশন থেকে প্রাপ্ত চাঁদের নমুনা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত হবে। এ সম্পর্কে চীনের একাডেমি অফ সায়েন্সের জাতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষক এবং চন্দ্র অন্বেষণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্বের উপ-প্রধান ডিজাইনার লি ছুন হুয়া বলেন

 

“চাঁদের নমুনার অধিকাংশ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত হবে। আমরা পরীক্ষাগারে দীর্ঘমেয়াদী ও বিস্তারিত গবেষণাকাজ পরিচালনা করবো। এর মধ্যে রয়েছে নমুনার কাঠামো, বৈশিষ্ট্য, রাসায়নিক গঠন, খনিজ বৈশিষ্ট্য, ভূতাত্ত্বিক বিবর্তন, ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা। এটি চাঁদের উত্স এবং বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি গভীরতর করতে সহায়ক হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

জানা গেছে, ‘ছাং এ ৫’ মিশন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় ইএসএ, আর্জেন্টিনা, নামিবিয়া ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করেছে চীন। চন্দ্রযানের উত্ক্ষেপণ সরাসরি উপভোগ করতে চীনে বহু দেশের রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানায় চীন। কোনো কোনো দেশের নেতৃবৃন্দ, মহাকাশ সংস্থা ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা এবং অনেক আন্তর্জাতিক সহকর্মী ও বন্ধুরা বিভিন্ন মাধ্যমে চীনকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এ সম্পর্কে চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক উ ইয়ানহুয়া বলেন, ‘মহাকাশ চুক্তি’ অনুযায়ী মহাকাশের সম্পদ হচ্ছে মানবজাতির যৌথ সম্পদ। ‘মহাকাশ চুক্তি’ অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সমমনা প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে চন্দ্রনমুনা ভাগাভাগি করতে চীন আগ্রহী।

তিনি আরও বলেন, ‘ছাং এ ৫’ মিশনের সফলতাকে সূচনা হিসেবে নিয়ে, চন্দ্র অনুসন্ধানের পরবর্তী ধাপের পথচলা শুরু করবে চীন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)