প্রসঙ্গ: চীনের সফল চন্দ্রাভিযান এবং চাঁদের নমুনাসহ ‘ছাং এ ৫’ রিটার্নারের পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন
2020-12-17 12:13:54

প্রসঙ্গ: চীনের সফল চন্দ্রাভিযান এবং চাঁদের নমুনাসহ ‘ছাং এ ৫’ রিটার্নারের পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন

ডিসেম্বর ১৭: বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় গতকাল (বুধবার) দিবাগত মধ্যরাত ১টা ৫৯ মিনিটে ‘ছাং এ ৫’ চন্দ্রযানের রিটার্নার সাফল্যের সঙ্গে ইনার মঙ্গোলিয়ার নির্দিষ্ট এলাকায় অবতরণ করে। রিটার্নার সঙ্গে করে নিয়ে আসে প্রায় ২ কেজি চন্দ্রনমুনা। পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহ থেকে এবারই প্রথম চীন সাফল্যের সঙ্গে নমুনা সংগ্রহ করল।

চীনের চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের প্রধান এবং জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর মহাপরিচালক চাং খ্য চিয়ান ‘ছাং এ ৫’ মিশনকে সম্পূর্ণ সফল বলে ঘোষণা করেছেন। ‘ছাং এ ৫’ চন্দ্রযানের রিটার্নার পৃথিবীতে চন্দ্রনমুনা নিয়ে ফিরে এসেছে। আর এর মাধ্যমে ‘ছাং এ ৫’ চন্দ্রযানের প্রায় ২০ দিনের যাত্রা শেষ হলো।

চাঁদের মাটি ও পাথর বহনকারী রিটার্নারকে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল পর্যন্ত বহন করে নিয়ে আসে অরবিটার। বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে রিটার্নারকে নিয়ে অরবিটার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। পরে, অরবিটার ও রিটার্নার দক্ষিণ আটলান্টিকের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার উপরে পৃথক হয়ে যায়।

রাত ১টা ৩৩ মিনিটে ‘ছাং এ ৫’-এর রিটার্নার পৃথিবীর মাটি থেকে ১২০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রবেশ করে। তখন এর গতিবেগ ছিল সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার। পূর্বনির্ধারিত উচ্চতায় নামার পরে, রিটার্নারটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বিশেষভাবে বাউন্স করে উপরে উঠে যায়, তারপর আবার নামতে শুরু করে। এরপর সেটি দ্বিতীয়বার বায়ুমণ্ডলে বাউন্স করে উপরে উঠে যায়, এবং তারপর আবার বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। একাধিকবার বাউন্স করার উদ্দেশ্য ছিল রিটার্নারের গতি কমিয়ে দেওয়া। এরপর পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার উচ্চতায় এসে রিটার্নারের প্যারাসুট খুলে যায়। পরে প্যারাসুটের সাহায্যে রিটার্নার ইনার মঙ্গোলিয়ার নির্ধারিত স্থানে অবতরণ করে। অনুসন্ধান ও পুনরুদ্ধারের কাজে নিয়োজিত দায়িত্বশীল কর্মীরা পরে রিটার্নারকে খুঁজে বের করে।

জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক উ ইয়ানহুয়া সাংবাদিকদের বলেন, মিশন সফল হয়েছে; দশে দশ যথেষ্ট নয়। এ সাফল্যের জন্য আরও বেশি নম্বর দিতে হবে। তিনি বলেন

 

‘মিশন সম্পূর্ণ সফল। চন্দ্র প্রদক্ষিণ, চাঁদে অবতরণ, ও চাঁদের নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন—তিনটি ক্ষেত্রেই মিশন সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। মিশনের সমাপ্তি একটি মাইলফলক ঘটনা। একদিকে, মিশন থেকে প্রাপ্ত চন্দ্রনমুনা চীনা ও বিশ্বের বিজ্ঞানীদের গবেষণার নতুন রসদ যোগাবে; অন্যদিকে, এই সফল মিশন মহাবিশ্বের রহস্য অন্বেষণ করতে এবং পরবর্তী অনুসন্ধান ও অন্যান্য মিশনের ভিত্তি স্থাপন করবে।’

জানা গেছে, ‘ছাং এ-৫’ চন্দ্রযানের রিটার্নারকে বেইজিংয়ে আনার পর সেটি খোলা হবে। চাঁদের নমুনা হস্তান্তরের জন্য জাতীয় মহাকাশ ব্যুরো একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করবে। চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের তৃতীয় দফার প্রধান ডিজাইনার হু হাও বলেন,

 

‘আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। ল্যান্ডিং পয়েন্টটি খুব সঠিক হয়েছে। রিটার্নারের প্যারাসুট খোলার সময় ও অবতরণের স্থান বাতাসের গতিবিধির ওপর নির্ভর করছিল। এখনও সুনির্দিস্ট তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে নির্ধারিত অবতরণ পয়েন্টের খুব কাছাকাছিই রিটার্নার অবতরণ করেছে। চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পকে সফল করতে আমরা ধাপে ধাপে খুব কঠিন কঠিন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছি।’

‘ছাং এ ৫’ মিশনের মাধ্যমে চীন এই প্রথম তিনটি কাজ একসঙ্গে করতে পেরেছে: চাঁদ প্রদক্ষিণ, চাঁদে অবতরণ, ও চাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে তা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। এ ছাড়া, চাঁদের কক্ষপথে অরবিটারের সঙ্গে অ্যাসেন্ডারের মানববিহীন ডকিংও ছিল চীনের বিশেষ অর্জন। ‘ছাং এ ৫’ ছিল এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে জটিল মহাকাশ প্রকল্প। চীন তার নিজস্ব প্রযুক্তিতে এই জটিল প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ মিশনকে বিদেশি বিজ্ঞানীরা ‘দুঃসাহসী’ বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন। বস্তুত, এই মিশনের সাফল্য মহাকাশ গবেষণায় আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল চীনকে তথা গোটা বিশ্বকে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)