ডিসেম্বর ১৭: গত ১২ ডিসেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তৃতীয় প্যারিস শান্তি ফোরামে দেওয়া ভিডিও-ভাষণে পুনর্ব্যক্ত করেন যে, চীন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজের অবদান বাড়াবে। পাশাপাশি, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের জন্য চেষ্টাও করবে চীন। এর জন্য সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। ইউরোপ ও ফ্রান্সের সঙ্গে আগামী বছর পৃথক পৃথকভাবে জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রকৃতি সুরক্ষাসম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সুযোগে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা চালাতেও চীন আগ্রহী।
বস্তুত, সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং চীন-ইইউ সবুজ সহযোগিতার প্রশ্নে চীনা শীর্ষ নেতাদের ধারাবাহিক বক্তব্য বৈশ্বিক আস্থা বৃদ্ধি করেছে। এটি ইউরোপে ব্যাপক মনোযোগও আকর্ষণ করেছে। ‘আজকের টপিক’ আসরে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব।
ড্যানফোস ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ডেনমার্কে এর সদর দফতর অবস্থিতি এবং এটি একটি বহুজাতিক সংস্থা। এটি বিদ্যুতায়ন, ডিজিটালাইজেশন এবং স্মার্ট উত্পাদন ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা হিসাবে বিবেচিত। চীনে একটি ইউরোপীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ড্যানফস চীনের কার্বন-নিরপেক্ষ লক্ষ্যটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করে? সংশ্লিষ্ট এক আলোচনায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রেডউইন বলেন, “যখন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ৭৫তম জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সম্মেলনে চীনের কার্বন-নিরপেক্ষ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, তখন আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম। আজকাল, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনসম্পর্কিত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ হ্রাস পেয়েছে; জাতিসংঘের ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে এবং মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন সরকারের এজেন্ডার শীর্ষে উঠে এসেছে। এমন সময়ে চীনা সরকার এতো বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আস্থা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে বলা চলে।”
প্রেসিডেন্ট সি’র উক্ত বক্তব্যের আগে, চীন ও ইইউ চীন-ইইউ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেছিল। উভয় পক্ষই পরিবেশ ও জলবায়ুসংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ-স্তরের সংলাপ আয়োজন এবং সবুজ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়। প্রেসিডেন্ট সি’র বক্তব্যের আগে ইউরোপীয় কমিশনও ঘোষণা করেছিল যে, এটি তার গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে নির্গমন ৫৫ শতাংশ হ্রাস করার পরিকল্পনা করবে। আমরা বিশ্বাস করি, চীন ও ইউরোপের কার্বন নিরপেক্ষতা লক্ষ্য এবং সবুজ বিকাশের সম্ভাবনা ভালো। চীন ও ইইউর মধ্যে গভীরতর সহযোগিতা এবং দুটি পক্ষের দ্বারা ঘোষিত উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলো এই প্রক্রিয়াটিকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
চীন ও ইউরোপের সবুজ ক্ষেত্রের সহযোগিতাসম্পর্কিত আলোচনায় চেয়ারম্যান রেডউইন বলেন, “সবুজ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে চীন ও ইইউর মধ্যে ভবিষ্যতের সহযোগিতার অনেক সুযোগ রয়েছে। এই সহযোগিতা দুই পক্ষকে কেবলমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে, শুধু তা নয়, বরং অন্যান্য দেশ এবং অঞ্চলের জন্য দিক্-নির্দেশনাও দিতে পারে। চীন ও ইইউ এই ক্ষেত্রে যা করছে তা বিশ্বের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ। চীনের ঘোষিত ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষ হওয়ার পরিকল্পনা বিশ্বের উষ্ণায়ন হ্রাস করতে সহায়তা করবে। চলতি শতাব্দীর শেষের দিকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ০.২ থেকে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ইইউ ও চীনের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা অন্যান্য বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এর প্রেক্ষাপটে তাদেরও একই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্যদেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বিশ্বের মোট নির্গত কার্বনের ৭৮ শতাংশ। বিশ্বের শীর্ষ চারটি কার্বন নির্গমনকারী দেশের কার্বন নির্গমন বৈশ্বিক নির্গমনের অর্ধেকেরও বেশি। চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পদক্ষেপ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি অন্যান্য নির্গমনকারী দেশগুলোর ওপর থাকবে। ফলে তারাও ইতিবাচক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলে আশা করা যায়। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)