বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রবল চালিকাশক্তি যুগিয়েছে চীন
2020-12-16 11:18:31

 

ডিসেম্বর ১৬: গত ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জলবায়ু উচ্চাভিলাষ সম্মেলনে, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীনের জাতীয় স্বতন্ত্র অবদান বাড়াতে, চারটি নতুন পদক্ষেপের ঘোষণা করে বেইজিং। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রবল চালিকাশক্তি যুগিয়েছে চীন। নতুন পদক্ষেপগুলো চীনের ‘কার্বন শিখর’ এবং ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ লক্ষ্যকে আরও স্পষ্ট ও পরিষ্কার করেছে। সমাজকে অবশ্যই সবুজ ও নিম্ন-কার্বন উত্পাদন নিশ্চিত করতে হবে। আজকের ‘সংবাদ পর্যালোচনা’য় আমি এ বিষয়ে আলোচনা করব।

চীনের জাতীয় স্বতন্ত্র অবদান বাড়াতে এই চারটি নতুন পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে: ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির প্রতি ইউনিটে গড়ে চীনের কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ ২০০৫ সালের তুলনায় ৬৫ শতাংশ কম হবে; অ-জীবাশ্ম শক্তি প্রাথমিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রায় ২৫ শতাংশ হবে; বনভূমির পরিমাণ ২০০৫ সালের তুলনায় ৬ বিলিয়ন কিউবিক মিটার বৃদ্ধি পাবে; এবং বায়ুশক্তি ও সৌরবিদ্যুতের মোট ইনস্টলেশান ক্ষমতা ১.২ বিলিয়ন কিলোওয়াটেরও বেশি হেবে। গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কে চীন তার ‘কার্বন নিঃসরণ শিখর লক্ষ্য’ এবং ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ লক্ষ্যের পর, আরও একটি বড় জলবায়ুনীতির ঘোষণা দেয়।

চীনা বিজ্ঞান একাডেমির ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি স্ট্র্যাটেজিক কনসাল্টিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ই গত সোমবার বেইজিংয়ে বলেন,

 

‘আসলে জলবায়ু ইস্যুটি চূড়ান্তভাবে একটি উন্নয়নের বিষয়। এটি পরোক্ষভাবে চীনের ভবিষ্যতের বিকাশের দিক নির্ধারণ করেছে,  যা হলো উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নের দিক ও লক্ষ্য।’

চীনের জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির উপ-পরিচালক হ্য চিয়ান খুন বলেন, লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পুরো সমাজের মতৈক্য দরকার এবং বিভিন্ন ব্যবস্থার সমন্বিত প্রয়োগ দরকার। এতে উচ্চমানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য ধীরে ধীরে শিল্প রূপান্তরকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

 

‘একদিকে, সর্বোপরি আমাদের অবশ্যই শিল্প রূপান্তর ও আপগ্রেডিংকে উত্সাহিত করতে হবে, সবুজ ও নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন শিল্পব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে; ডিজিটাল অর্থনীতি, উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্প ও আধুনিক পরিষেবা শিল্পের বিকাশ করতে হবে; ইস্পাত, সিমেন্ট, পেট্রোকেমিক্যালস ও রাসায়নিকসহ শক্তি-নিবিড় শিল্পের বিকাশ রোধ করতে হবে; এবং জ্বালানি খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যদিকে, কম-কার্বন শক্তি কাঠামোকে ত্বরান্বিত করার জন্য আমাদের জোরেশোরে নতুন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উত্স বিকাশ করতে হবে। এটি হবে মহামারীর পরে একটি নতুন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।’

জাতীয় জলবায়ু কৌশল কেন্দ্রের পরিচালক সু হুয়া ছিং মনে করেন, গোটা সমাজে একটি আদর্শিক বিপ্লব, জ্বালানি বিপ্লব ও ভোগের বিপ্লব শুরু করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সবুজ ও স্বল্প-কার্বন উত্পাদন এবং ‘সবুজ জীবনযাত্রা’র পক্ষে প্রচার চালাতে হবে। এ  সম্পর্কে তিনি বলেন,

 

‘আমাদের পুরো সমাজ এবং আমাদের বাজারের প্রধান অংশের জন্য আমাদের অবশ্যই দেশের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো এবং নীতি নির্দেশিকাটি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হবে, সবুজ পুনরুদ্ধার ও জলবায়ু প্রশাসনের নতুন চিন্তাকে মেনে চলতে হবে।’

চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ-উপমন্ত্রী চাও ইংমিন জোর দিয়ে বলেছেন, চীনের উত্থাপিত এই পদক্ষেপগুলো কেবল চীনের ‘কার্বন শিখর’ এবং ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হবে, তা নয়; বরং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চালিকাশক্তি যোগাবে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,

 

‘চীন একটি বড় দায়িত্বশীল দেশ। সুতরাং, আমরা মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থজড়িত কমিউনিটি গড়ে তুলছি। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের প্রভাবশালী শক্তি বাড়াতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সম্পর্কে এবারের চীনের পদক্ষেপগুলো ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তির’ সার্বিক ও কার্যকর বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।’ (ওয়াং হাইমান/আলিম/ইয়াং)