প্রসঙ্গ: ‘ডাবল ১২’ কেনাকাটা দিবস ও চীনা ভোক্তাবাজার
2020-12-14 12:19:57

 

 

ডিসেম্বর ১৪: বছরের শেষের দিকে, ‘ডাবল ১২’ তথা ১২ ডিসেম্বর অনলাইন কেনাকাটা দিবস। এদিন চীনারা আবারও প্রচুর কেনাকাটা করেছে। এ থেকে আবারও চীনাদের ক্রয়ক্ষমতা প্রমাণিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন অর্থনীতি মহামারীপরবর্তী যুগে চীনা ভোক্তাবাজারের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আগামী বছর এর বিস্ফোরক বৃদ্ধির সূচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমি এ বিষয়ে আলোচনা করব।

 

‘আমি কয়েকটি লিপস্টিক, ফেস টোনার এবং কিছু নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনেছি। কেনার সময় আমি সাধারণত অনলাইনের সংশ্লিষ্ট সরাসরি অনুষ্ঠান দেখি, লাইভ ব্রডকাস্ট রুমের দাম সাধারণত স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সময়ে অনলাইনে জিনিস কেনা তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদও বটে।’

‘বাসায় ব্যবহৃত আইটেম, যেমন হাঁড়ি, জলপাই তেল ও চশমাসহ সেই জিনিসগুলো ডাবল ১২ কেনাকাটা দিবসে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় সস্তা’।

‘ডাবল ১১’ তথা ১১ নভেম্বরের অনলাইন কেনাকাটা দিবসের পর, ২০২০ সালে চূড়ান্ত শপিং শিখর হিসাবে অনেক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ডাবল ১২-এ আরও বেশি তত্পর ছিল। বছরের এবারের ‘ডাবল ১২’ কেনাকাটা দিবসে জেডি ডট কম বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা অফার করে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ‘পিডিডি’ তথা ‘পিনতুওতুও’ কর্তৃপক্ষ জানায়, বছরের শেষের দিকে আমদানিকৃত ফলের দামে ডিসকাউন্ট দিলে বিক্রি বাড়ে।  এবার বিক্রির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। চীনা জনগণের ক্রয়ক্ষমতা প্রবল হওয়ার প্রেক্ষাপটে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক চাং চিয়ান পিং বলেন

 

‘বছরের শেষার্ধে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উত্পাদনকাজ পুনরায় শুরু হয় এবং এক অন্ত্যন্ত ভাল অবস্থায় চলে আসে। এতে চীনে সামগ্রিক ভোগ বাড়ে এবং ভোক্তাবাজার চাঙ্গা হয়। বছরের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিক থেকে আমাদের ভোগের অবস্থা উন্নত হচ্ছে। বিশেষ করে, বিগত দুই মাসে ভোগ খাতে ইতোমধ্যেই নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।  ভোক্তাদের উত্সাহ দেওয়া দরকার। দেশে ‘ডাবল ১২’ অনলাইন কেনাকাটা দিবস হচ্ছে ‘ডাবল ১১’ অনলাইন কেনাকাটা দিবসের পর আরও একটি নতুন ব্যবস্থা যা গ্রাহকদেরকে ভোগে আকৃষ্ট করে।’

সুনিং ডটকমের তথ্য অনুসারে, তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সাথে সাথে ১২ ডিসেম্বর শুধু গরমের পণ্য বিক্রি বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪২৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে কম্বল বিক্রির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে; স্পোর্টস জ্যাকেট বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ গুণেরও বেশি। তা ছাড়া, ভোক্তারা বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পুষ্টিকর স্বাস্থ্য পণ্যগুলোর ওপর দৃষ্টি বেশি রেখেছেন। এর মধ্যে স্মার্ট টয়লেট বিক্রির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫০ শতাংশ বেড়েছে; মাইক্রো স্টিমিং এবং বেকিং মেশিনের বিক্রির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্ট র‍্যাক ও বিশেষ সোফাসহ উন্নত পণ্যগুলোও ভোক্তাদের বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পারিবারিক মেডিকেল পণ্যগুলোর বিক্রির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলণায় ৩০০ শতাংশ বেশি ছিল।

এ বছরের শুরুর দিক থেকেই, নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর প্রেক্ষাপটে, অফলাইনের অনেক স্টোর বন্ধ হয়ে যায়, যা অনলাইন অর্থনীতির দ্রুত বিকাশে আরও বেশি সুযোগ বয়ে এনেছে। এই সম্পর্কে চাং চিয়ান পিং বলেন

 

‘মহামারীর কারণে অনলাইন অর্থনীতি ও অনলাইন বিক্রয় প্ল্যাটফর্মের বৈশিষ্ট্য ও ভূমিকা আরও বেড়েছে। চীন এ বছরের প্রথমার্ধে মহামারীকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে, সুতরাং দেশের সামষ্টিক সামাজিক ও ব্যবসায়িক ব্যবস্থা এবং লজিস্টিক ব্যবস্থা পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এই প্রক্রিয়ায় ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম আরও কার্যকর ও সুবিধাজনকভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। সুতরাং, বর্তমানে আমাদের অনলাইন কেনাকাটা ও এর প্রবৃদ্ধির হার ক্রমশ বাড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সাল হচ্ছে চীনের ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার’ সূচনা-বছর। চীনা অর্থনীতি আরও দ্রুত পুনরুদ্ধারের প্রবণতা দেখাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)