ডিসেম্বর ১১: যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ই-কমার্স ইউনিকর্ন কোম্পানি ‘উইশ’ সম্প্রতি মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে ‘প্রাথমিক পাবলিক অফার প্রসপেক্টাস’ জমা দিয়েছে এবং নাসডাক-এ শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করেছে। প্রসপেক্টাসে দেখা যায়, ৯০ শতাংশেরও বেশি বিক্রেতা চীন থেকে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের আন্তর্জাতিক ই-কমার্স খুব দ্রুত গতিতে উন্নত হচ্ছে। অধিক থেকে অধিকতর চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিদেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনা পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে।
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত উইশ ২০১৩ সালে মোবাইল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত হয়। এই ই-কমার্স প্লাটফর্ম প্রধানত নারীদের কাপড়, ঘড়ি ও স্নিকার্সসহ সস্তা দামের ছাড়যুক্ত পণ্য বিক্রি করে। প্রসপেক্টাসে দেখা যায়, বর্তমানে এই ই-কমার্স প্লাটফর্মে শতাধিক দেশ ও অঞ্চলের ১০ কোটিরও বেশি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। প্লাটফর্মে পাঁচ লাখেরও বেশি বিক্রেতা চুক্তি স্বাক্ষর করে পণ্য বিক্রি করেন এবং সেগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বিক্রেতা চীনের।
তৃতীয় পক্ষীয় বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অধিক থেকে অধিকতর চীনা ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা ও প্রস্তুতকারক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পণ্য বিক্রি করছে। চীনা বিক্রেতার সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল ২৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে এসে তা ৩৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণা একাডেমির আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণালয়ের উপপ্রধান পাই মিং মনে করেন, চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্লাটফর্মে সমাদর পায়। এর অর্থ হলো ‘মেইড ইন চায়না’ আরো বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে তা স্বীকৃতি পাচ্ছে। এটি চীনের বিদেশি বাণিজ্যের নতুন প্যাটার্ন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন,
‘প্লাটফর্ম না থাকলেও অফলাইনে অনেক পণ্য বিদেশি গ্রাহকরা পছন্দ করছেন। প্লাটফর্মে স্বীকৃতি দেওয়ার মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। আমাদের বিদেশি বাণিজ্য উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যের রূপান্তর সফল হয়ে উঠেছে। অধিক থেকে অধিকতর অফলাইন বাণিজ্য অনলাইনে চালানো হচ্ছে; যা আমাদের বিদেশি বাণিজ্যে আরো বেশি সুযোগ এনে দিয়েছে।’
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স বিভিন্ন দেশে জোরেসোরে উন্নত হচ্ছে। বিশেষ করে চলতি বছর নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আন্তর্জাতিক ই-কমার্স উন্নয়নের গতি বাড়িয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিশ্বায়নের নতুন সুযোগ বয়ে এনেছে। অধিক থেকে অধিকতর চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্লাটফর্মের কল্যাণে বিদেশে বাজার সম্প্রসারণ করেছে। কুয়াংতোংয়ের একটি কফি মেশিন কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চেং ছিউ পিং বলেন,
‘আগে একটি কফি মেশিন রপ্তানির মুনাফা ছিল মাত্র দুই মার্কিন ডলার। এখন আমরা সরাসরি গ্রাহকের কাছে তা বিক্রি করি এবং আমাদের মুনাফা হয়েছে ৩ মার্কিন ডলার। মুনাফা বৃদ্ধির হার ৫০ শতাংশ।’
ধারাবাহিক নীতিগত সুবিধা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বায়ন বাস্তবায়নে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উত্সাহ দেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণা একাডেমির ই-কমার্স গবেষণালয়ের উপপ্রধান তু কুও ছেন বলেন,
‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার ই-কমার্স খাতের উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। নানা নীতিমালার সাহায্যে আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্সের সার্বিক পরীক্ষামূলক এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুল্কনীতি, বৈদেশিক মুদ্রানীতি এবং শুল্ক ছাড়ের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সুবিধাজনক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ খাত জোরদার করা হচ্ছে।’
তবে, চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিদেশে যাওয়ার পথ পুরোপুরি সুষ্ঠু হয় নি। তু কুও ছেন বলেন, বিগত কয়েক বছর বিদেশি বাণিজ্য ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে বিদেশে উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় কিছু সাফল্য অর্জন সত্ত্বেও ব্র্যান্ড নির্মাণ, স্ট্যান্ডার্ড ডকিং, ডেলিভারি ও মেধাবীদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো অনেক সফলতা অর্জন করতে পারছে।
(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)