চারটি পরিবারের ঘটনা থেকে চীনের দারিদ্র্যমুক্তকরণ প্রক্রিয়া অনুধাবন
2020-12-11 13:29:51

২০২০ সাল হলো চীনে সার্বিক দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্য পূরণের শেষ বছর। চীনের হ্যপেই প্রদেশের ফুপিং জেলা আগে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা ছিল। এখন জেলাটি সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। ফুপিং জেলার পরিবর্তন কীভাবে ঘটেছে? সম্প্রতি চীনের সংবাদদাতা আগে দরিদ্র ছিল- এমন চারটি পরিবারে যান, তাদের পরিবর্তনের ঘটনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। তাদের দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া হলো ফুপিং জেলার এক লাখেরও বেশি মানুষের দারিদ্র্যমুক্তির সুন্দর উদাহরণ। আজকের অনুষ্ঠানে তাদের গল্পগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

 

আবহাওয়া ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আসছে। ফুপিং জেলার মাশরুম উত্পাদন কেন্দ্রে কৃষক দু ইয়ু মিং মাশরুম চাষের কাজে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের চাষের কেন্দ্র থেকে গ্রামের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। মাশরুম চাষের জন্য বছরে মধ্যে আট মাস আমি এখানে থাকি। কৃষক দু আরো জানান, তিনি এই প্লাস্টিকের গ্রিনহাউস ভাড়া করে মাশরুম চাষ করেন, প্রতি বছর তাঁর আয় হয় এক লাখ ইউয়ানের বেশি।

সাংবাদিক জানতে চান, তিনি কি সবসময় শুধু মাশরুম চাষই করেন?

তিনি বলেন: না।

২৪ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল।  তখন পরিবার প্রধানত কুল চাষের মাধ্যমে জীবনযাপন করত।

 

ফুপিংয়ে চীনের বিখ্যাত কুলের চাষ হয়। ২০১২ সাল থেকে কুলে এক ধরনের রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া দেশের অন্য জায়গায় কুল চাষ শিল্পও আস্তে আস্তে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। এই দুটি কারণে ফুপিং জেলায় পরিশ্রম ও সময় দিয়ে কুল চাষ করলেও কৃষকদের আয় কম হতে শুরু করে। স্থানীয় লোকজন অন্য ভালো কোনো কাজ খুঁজে না পেয়ে কুল চাষের কাজেই ব্যস্ত থাকে।

 

কুল চাষের অবস্থা ততটা সন্তোষজনক না হলেও অন্য কোনো পথ নেই। তাই, যখন চীনে দারিদ্র্যমুক্তকরণ অভিযান শুরু হয়, তখন দু শুধু আরও বেশি কুল গাছ চাষের আশা করতেন। কৃষক দু জানান, চাষ করা থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত, প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কুল বাগানে থাকতে হয়। এত কষ্টের পরও সারা বছরের আয় ব্যয়ের চেয়েও কম হয়। দু আসলে কয়েকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি আর কুল চাষ করবেন না। তবে তিনি ভীষণ অনুতপ্ত বোধ করেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে কুল চাষ করেছেন তিনি। কুল গাছ তার নিজের সন্তানের মতো, কীভাবে এ কাজ ছেড়ে দেবেন তিনি!

 

 ২০১৫ সালে রোগাক্রান্ত হয়ে বাগানের সব কুল নষ্ট হয়ে যায়। এসময় বাগান করার প্রতি কৃষক দু’র সব আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। ‘আর চাষ করবো না, জেলার বাইরে গিয়ে চাকরি করে ভালো আয় করতে পারবো’— এমন কথাও ভেবেছেন তিনি।

আসলে দু একা নন। শুরুতে জেলায় দারিদ্র্যমুক্তির জন্য কুল চাষের সঙ্গে জড়িত কৃষকদের বাছাই করা হয়। সেসময় কৃষকদের ঝুঁকি প্রতিরোধের সামর্থ্য একদম ছিল না বলা যায়। অনেক কুল চাষি সে বছর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়।

 

জেলা প্রশাসনও এ বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দেয় এবং এ ব্যাপারে অনেকবার সম্মেলন আয়োজন করে। কর্মকর্তারা প্রত্যেক গ্রামে গিয়ে পরিদর্শন করেন, বাজারের অবস্থা দেখেন, সমস্যা সমাধানের উপায় খোঁজেন। তখন তারা আবিষ্কার করেন যে, ফুপিং জেলার ভৌগোলিক অবস্থা ভালো, আবহাওয়া উষ্ণ। এ আবহাওয়া মাশরুম চাষের জন্য অনুকূল।

তাহলে এখন থেকে মাশরুম চাষ করা হবে। জেলা প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর জেলা প্রশাসনের সাহায্যে বড় বড় মাশরুম প্রতিষ্ঠানগুলো জেলায় আসে। দরিদ্র কৃষকরা একযোগে মাশরুম চাষ শুরু করে। প্লাস্টিক দিয়ে গ্রিনহাউস তৈরি, চাষের কৌশল শেখানো, ব্রান্ড গড়ে তোলা এবং প্রচার করা ও বিক্রি করার পদ্ধতি গড়ে তোলা হয়।

 

কৃষক দু এবার জেলা প্রশাসনের সাহায্যে তাঁর দারিদ্র্যমুক্তির স্বপ্ন দেখেন, তাঁর মন উষ্ণ হয়ে উঠে। তিনি মাশরুম চাষে আন্তরিকভাবে যোগ দেন। দু বলেন, “প্রতিষ্ঠান থেকে মাশরুম পাওয়া যাবে, তারপর আমরা তা চাষ করবো। ফসল হলে প্রতিষ্ঠানগুলো তা কিনে নেবে, আমাদের আয়ের নিশ্চয়তা আছে, কোনো দুশ্চিন্তা নেই।”

২০১৯ সালে ফুপিং জেলার মাশরুম চাষ করে স্থানীয় কৃষকদের আয় হয় ৯৮ কোটি ইউয়ান; মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ৫৩৭৩ ইউয়ান।

 

২.

হ্যপেই প্রদেশের ফুপিং জেলার আনজুই আবাসিক কমিউনিটিতে ঢুকলে দেখা যায়- বৃদ্ধ বৃদ্ধারা বিল্ডিংয়ের সামনে একসাথে বসে গল্প করছেন। ফুপিং জেলার থান হুই ভু গ্রামের মানুষ চু হাই হুং-এর নতুন বাড়ি এই কমিউনিটিতেই।

সূর্যের আলো কাঁচ ভেদ করে চু-এর নতুন বাড়িতে প্রবেশ করে। ঘরে অনেক ফুল আছে, সবখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং বেশ আরামদায়ক একটা অনুভূতি।

চু এর পরিবার স্থানান্তরের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। তিনি ২০১৯ সালে আনজুই কমিউনিটিতে স্থানান্তরিত হন।

 

 

নতুন বাড়ির লিভিং রুমের দেয়ালে পুরানো বাড়ির সামনে তোলা পরিবারের পাঁচজনের একটি ছবি ঝুলানো আছে। পুরানো বাড়ি একটি জরাজীর্ণ পাথরের বাড়ি, হলুদ রং-এর মাটি দিয়ে দেয়ালগুলো তৈরি।

চু জানান, পুরানো পাথরের বাড়ি খুব ছোট ছিল, তাঁর দাদার আমলে নির্মিত। পাথরের মাঝ দিয়ে ঘরের ভিতরে বাতাস আসত, শীতকালে ভীষণ ঠান্ডা হয়ে যেতো। আর যদি বাইরে বৃষ্টি হয়, তাহলে বৃষ্টির পানি পাথরের মাঝখান দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকত। তাই প্রতিবছর বৃষ্টির সময় গ্রামের প্রতিটি পরিবারে প্লাস্টিক বিতরণ করা হতো, যাতে ছাদে লাগিয়ে বৃষ্টির পানি ঠেকানো যায়।

 

চু স্মরণ করে বলেন, যে ব্যাপারটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে তা হলো, শীতকালে পাথরের বাড়িঘর ভীষণ ঠান্ডা হয়ে যেত। ভোরবেলা উঠে নাস্তা তৈরি করতে হবে। কিন্তু, ঘরের ভিতর বালতির পানি বরফ হয়ে রয়েছে, বরফ ভেঙে পানি বের করতে হতো। খাবার খাওয়ার সময়ও মোটা মোটা গরম কাপড় পরতে হতো। একসাথে আগুনের পাশে বসে খাবার খেতে হতো; কিন্তু তা সত্ত্বেও ভীষণ ঠান্ডায় হাত দিয়ে চপস্টিক্স ধরা যেত না।

 

রাতে ঘুমানোর আগে আগুন দিয়ে মাটির তৈরি বিছানা কিছুটা গরম করতে হতো, কিন্তু রাতে আগুন নিভে হলে ভীষণ ঠান্ডায় আবার জেগে উঠতাম। ছোট বাচ্চারা ভয়ঙ্কর এ ঠান্ডায় সবসময় কান্নাকাটি করতো। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হল, যদি কারো ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হতো, তাহলে এই ভীষণ ঠাণ্ডা অন্ধকার রাতে এক কিলোমিটার দূরের পায়খানায় দৌড়াতে হতো!

চু বর্তমান জীবন সম্পর্কে বলেন, এখন আমাদের জীবন একেবারে আলাদা। ঘরের ভিতরে হিটিং সিস্টেম আছে, শীতকালেও ঘরের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। একদম বসন্তকালের মত আরাম অনুভব করি।

 

চু-এর মত অনেক কৃষক দারিদ্র্যমুক্তকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন বাড়িঘরে উঠতে পেরেছেন। এমন নতুন কমিউনিটির সংখ্যা ফুপিং জেলায় ৩৯টি। এসব কমিউনিটিতে ৩০ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত দরিদ্র মানুষ জরাজীর্ণ বাড়িঘরগুলোকে বিদায় দিয়ে নতুন বাসস্থানে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এ ছাড়া, স্থানীয় সরকার তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছে।

 

৩.

ছোট রোগ হলে সহ্য করতে হয়, বড় রোগ হলে সুস্থ হবার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ফুপিং জেলার অনেক দরিদ্র মানুষ অসুস্থতাকে এভাবেই মোকাবিলা করত।

ফুপিং জেলার তুং ছেং ভু গ্রামের নিবন্ধিত একজন দরিদ্র মানুষ হলেন লিউ কুও ছি। তিনি ৫০টি ছাগল পালন করতেন, প্রতি বছর তাঁর আয় হতো প্রায় ৩০ হাজার ইউয়ান। তিনি ততটা ধনী না হলেও জীবন নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না।

 

তবে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কৃষক লিউ-এর স্ত্রী ও ছেলের ক্যান্সার ও লিউকোমিয়া রোগ ধরা পড়ে। অস্ত্রপচার ও চিকিত্সার খরচ অনেক বেশি। এই ছোট পরিবার কীভাবে বিরাট এ খরচ বহন করবে! কৃষক লিউ একেবারে আশাহত হয়ে পড়েন।

২০১৭ সালে যখন লিউ-এর মেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন ফুপিং জেলায় গুরুতর ও বড় রোগের চিকিত্সা সহায়তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকার রোগীদের চিকিত্সায় আর্থিক বরাদ্দ দেয়। রোগীরা চিকিত্সা শেষ করে হাসপাতাল ছেড়ে যাবার সময় নিজ খরচের অংশ দিলেই যথেষ্ট। লিউ যথাসময় মেয়ের জন্য এই চিকিত্সা সহায়তার আবেদন করেন।

 

লিউ বলেন, আমার মেয়ে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। প্রতিবার সরকার মেয়ের হাসপাতালে থাকার খরচ দিয়েছে। সর্বমোট ১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান চিকিত্সা ফি’র মধ্যে আমি শুধু ২ হাজার ইউয়ান নিজের পক্ষ থেকে খরচ করেছি। লিউ বলেন, তাঁর ছেলের লিউকোমিয়া রোগ চিকিত্সার সময়ও এমন বিরাট চিকিত্সা সহায়তা পেয়েছি। এ অর্থ তার কাছে অনেক প্রয়োজনীয়।

 

২০১৯ সালের সময় লিউ নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার অস্ত্রোপচার করতে হয়। এতে ৬০ হাজার ইউয়ান ব্যয় হয়। তবে, এবার তিনি গুরুতর রোগের চিকিত্সা সহায়তার জন্য আবেদন করেন নি। কারণ, এ বছর ফুপিং জেলায় দারিদ্র্য প্রতিরোধে বিশেষ বীমা চালু করা হয়েছে। বীমা কোম্পানির কর্মীরা সোজা লিউ-এর বাসায় গিয়ে চিকিত্সাসেবা দিয়েছে।

 

আসলে জেলা সরকার ২৪ হাজার দরিদ্র মানুষের জন্য দরিদ্রতা প্রতিরোধ বীমা দিয়েছে, জেলা সরকার একটি স্মার্ট সেবার মঞ্চও স্থাপন করেছে। কারো আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হলে সরকার সরাসরি তাদের সাহায্য করতে পারে। এতে দারিদ্র্যবিমোচন, কৃষি, বাড়িঘর নির্মাণ, চিকিত্সা বীমা, শিক্ষা ও প্রতিবন্ধী সেবাসহ বিভিন্ন বিভাগ একসাথে সব সেবা দিতে পারে।

 

বিভিন্ন চিকিত্সা নিশ্চয়তা ব্যবস্থার মাধ্যমে লিউয়ের পরিবার সবচেয়ে কঠোর সময় পার করেছে।

চিকিত্সা সংস্থার অবকাঠামোর নির্মাণ জোরদার করা ও চিকিত্সার নিশ্চয়তা ব্যবস্থা স্থাপন করার পর ফুপিং জেলার মানুষের চিকিত্সা-সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেছে।


 

৪.

ফুপিং জেলা চীনের বিপ্লবী ইতিহাসে বিশেষ স্থানে রয়েছে। এখানে বিপ্লবের সময় তৈরি একটি পুরানো স্কুল আছে। স্কুলটি ফুপিং জেলার সিয়াং ইয়াং গ্রামে অবস্থিত। গ্রামে সিপিসি’র শাখা সম্পাদক লিউ পাও জুন সাংবাদিককে জানান, তখন স্কুলটি ছিল কয়েকটি পুরানো বাড়িঘর। পাথরকে চেয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই স্কুল ছিল ফুপিং জেলার সিয়াং ইয়াং গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি উদাহরণ।

 

২০ শতাব্দীর ৯০ দশকে ওয়াং লি হুয়া নামে এক নারী ফুপিং জেলার আরেকটি গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করতেন। সবাই একে স্কুল বললেও তা ছিল একটি মন্দির। ওয়াং জানান, স্কুলে পড়ার সময় শুধু রুটি ও সবজির সুপ খেতে পারতেন। কয়েকটি শিশু একসাথে একটি বিছানায় ঘুমাতো।

 

এখন তাঁর মেয়ে হান জিং ফাং গ্রামের নতুন স্কুলে লেখাপড়া করছে। স্কুলটি ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তৈরি হয়। স্কুলে এসি, ওঠা-নামা করা যায় এমন ডেস্কসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আছে। কম্পিউটার দিয়ে শিক্ষক ক্লাস নেন। এ ছাড়া, মোবাইলফোন এপিপি’র মাধ্যমে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী যোগাযোগ করতে পারে, বাবা-মা এই এপিপি’র মাধ্যমে স্কুলে শিশুদের অবস্থাও জানতে পারে।

২০১৩ সালের পর ফুপিং জেলার ১৩টি গ্রামে বোর্ডিং স্কুল তৈরি হয়। এ ছাড়া আরো ২টি শহরের স্কুল আছে। ৯৩টি গ্রামীণ স্কুল পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা সরকার দরিদ্র শিশুদের লেখাপড়ার ফি মওকুফ করেছে; তাদেরকে নানা ভর্তুকি দেওয়া হবে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে স্থানীয় শিক্ষাব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)