আজকের টপিক: কেবলমাত্র কুসংস্কার ত্যাগ করেই কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যায়
2020-12-10 18:55:26

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের উত্সসন্ধানের বিষয়টি পুনরায় জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। গত ৩০  নভেম্বর ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’ প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই নভেল করোনাভাইরাস  যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর মানে চীনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাইরাস আবিষ্কারের আরও কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম রোগী চিহ্নিত চিহ্নিত হবার একমাস আগেই সেদেশে ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল। এর আগে জার্মানির  ভাইরোলজিস্ট আলেকজান্ডার কেকুল বলেছিলেন, বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের ৯৯.৫ শতাংশ রূপান্তরিত স্ট্রেইন উত্তর ইতালি পাওয়া যাবে। এর অর্থ, ভাইরাসের সত্যিকারের উত্স উহান নয়, বরং অন্য দেশে!

 

মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের তদন্ত রিপোর্টগুলো থেকে প্রমাণিত যে,  ভাইরাস সনাক্তকরণ একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, সময়সাপেক্ষ ও কঠিন। এতে বিশ্বব্যাপী ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট বক্তব্য দেয়া কেবল যে দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাপার, তা নয়, এটা বরং অনৈতিকও বটে। ২০০৩ সালে সার্সের প্রাদুর্ভাবকে উদাহরণ হিসাবে গ্রহণ করা যায়। তখন ট্রেসিবিলিটি কাজ দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে এবং এর পর উত্স সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে। ১০০ বছর আগে লক্ষ লক্ষ লোক স্প্যানিশ ফ্লুতে মারা গেছে। তবে এই ফ্লুটির উৎপত্তিস্থল স্পেন ছিল না, ছিল খোদ যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৫ সাল থেকে একটি নতুন ভাইরাসের নামকরণের বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণ করে, যা ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ নামকরণের মতো ঘটনা না ঘটে। যাই হোক, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর রাজনীতিকরণ ও এসম্পর্কিত  কুসংস্কারের প্রবণতা এখনও থামেনি, বরং এর তীব্রতা বেড়েছে।

 

চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে নভেল করোনাভাইরাসের খবর দেওয়ার পর থেকেই কিছু পশ্চিমা রাজনীতিবিদ ও মিডিয়া এ নিয়ে উপহাস করেছে এবং একাধিক আমেরিকান রাজনীতিবিদ মহামারীকে নিয়ে রাজনীতি করে আসছেন। এই ভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ এবং ‘কুংফু ভাইরাস’ আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং ভাইরাসের দায় চীনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। বছরের শেষের দিকে এসে, আমরা অতীতের দিকে তাকিয়ে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আদর্শ ও জনমতের পরিবর্তে একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদ বিশ্বব্যাপী মহামারীবিরোধী সহযোগিতায় বাধা সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে, কোভিড-১৯ মহমারীর কারণে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ১৪ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি পুরোপুরি মন্দার মধ্যে পড়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অনুমান করছেন যে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী ক্ষয়ক্ষতি ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পরে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মোট ব্যয়ের চারগুণ হবে।

 

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৩ ও ৪ ডিসেম্বর ভাইরাস নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ সম্মেলন আয়োজিত হয়। এর উদ্দেশ্য ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করা। এর আগে ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশেষ সম্মেলন বহুপক্ষবাদের জন্য কেবল যে ঐতিহাসিক সময় তা নয়, বরং এক পরীক্ষার মতো। সম্প্রতি মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গ অনেক দেশকে প্রভাবিত করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেকটি দেশে মহামারী শেষ হবে না, বিশ্বের কোনও স্থান ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ  হবে না। সুসংবাদটি হল এই মহামারীর ভ্যাকসিনের সাম্প্রতিক বিকাশ চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এক্ষেত্রে মহামারী-পরবর্তী যুগে মানবস্বাস্থ্যের সম্প্রদায় গড়ে তোলার জন্য একটি ভাল প্রস্তাব দিয়েছে চীন। বাস্তবতা থেকে পুনরায় প্রমাণিত যে, কেবলমাত্র কুসংস্কার ত্যাগ করে এবং সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে দেশগুলো মহামারী মোকাবিলা করতে পারে।  (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)