মহামারী নিয়ে রাজনীতি করা দায়িত্বহীন আচরণ ও নিন্দাজনক: জাতিসংঘ হাই কমিশনার
2020-12-10 14:21:53

মহামারী নিয়ে রাজনীতি করা দায়িত্বহীন আচরণ ও নিন্দাজনক: জাতিসংঘ হাই কমিশনার

ডিসেম্বর ১০: প্রতি ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়।  এ বছরের থিম হলো “আরো ভালোভাবে পুনরুদ্ধার করা— মানবাধিকার রক্ষায় বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা।” চলতি বছরের প্রতিপাদ্য নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর বৈশ্বিক সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত। বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে মানবাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং আরো সুন্দর বাসস্থান নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার-বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল বাচেলেট জেনিভায় অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আরো সুন্দর ভবিষ্যত্ সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিছু রাজনীতিক মহামারী নিয়ে রাজনীতি করছেন- যা দায়িত্বহীন কাজ; তাদের আচরণ নিন্দাযোগ্য।

বাচেলেট বলেন, কেউ ২০২০ সালের কথা ভুলতে পারবে না। কারণ, এ বছর আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কোভিড-১৯ মহামারী এখনও চলছে। বর্তমানে ৬ কোটি ৭০ লাখ লোক এই রোগে আক্রান্ত এবং প্রায় ১৬ লাখ লোক মারা গেছে। মহামারী বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি এবং কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, বেতন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য সরবরাহে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। দারিদ্র্যমুক্তকরণ এবং নারী ও শিশুর উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত করেছে। মহামারী বিশ্বের নানা দেশ ও অঞ্চলে সংক্রমণ ছাড়াও, মানবাধিকার রক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মহামারী থেকে সমাজের ফাটল ও দুর্বলতা উন্মোচিত হয়েছে, সামাজিক অসঙ্গতি প্রকাশিত হয়েছে।

বাচেলেট বলেন, কিছু দেশ নাগরিকদের প্রাথমিক চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য অধিকারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় নি। এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার খরচ অনেক বেশি হলেও বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যে, এক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর নেই। কিছু কিছু দেশ মহামারী প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি। তিনি বলেন,

 ‘আশ্চর্য বিষয় হলো- এখনও কিছু নেতা ইচ্ছাকৃতভাবে মহামারীর ক্ষতি অস্বীকার করছেন। মাস্ক পড়া, সমাবেশ এড়ানোসহ বিভিন্ন সহজ ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করছেন। মহামারী নিয়ে তাদের রাজনীতি দায়িত্বহীন আচরণ ও নিন্দাজনক।’

বাচেলেট বলেন, আরো খারাপ বিষয় হলো, মহামারী মোকাবিলায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয় নি; বরং, কিছু স্থানে বিভেদ দেখা দিয়েছে। একদিকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণে আস্থা রাখা হয় নি; অন্যদিকে, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন,

এ দুর্যোগের পর ফের সুন্দর বিশ্ব গঠন করতে হলে পারস্পরিক আস্থা বাড়ানো উচিত্।

বাচেলেট বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে টিকার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এটি সংকটের সময় মানবজাতির বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার প্রতিফলন। বিভিন্ন দেশের উচিত্ যথাযথ স্থানে ন্যায়সঙ্গতভাবে এসব টিকা বণ্টন করা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা।

বাচেলেট মানবাধিকার ক্ষুধা, দারিদ্র্য, ভারসাম্যহীনতা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানবজাতির সম্মুখীন নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টিকার উদাহরণ দেন। ‘বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

 ‘নির্দিষ্ট গ্রুপের অধিকার রক্ষা করতে ‘বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণার’ পর আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তির জন্ম হয়। যেমন, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও অভিবাসী শ্রমিক প্রমুখ।’

মহামারী সংক্রমণের ফলে আমাদের স্বচ্ছতা ও দুর্বলতা উন্মোচিত হয়েছে। কীভাবে এ দুর্যোগকে সুযোগে পরিণত করা যাবে? কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে? এবং আরো সুন্দর ভবিষ্যত্ কীভাবে সৃষ্টি করা যাবে? – এ প্রশ্নগুলো সামনে চলে এসেছে।

বাচেলেট বলেন, উন্নত ভবিষ্যত্ গঠনের প্রধান উপাদান হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সমতার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করতেই হবে। সমাজ ও অর্থনীতি উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও শুল্ক খাতের সংস্কার করা উচিত্। এবারের সংকট কাটিয়ে উঠতে তুলনামূলক ধনী দেশগুলোর গরীব দেশগুলোকে সাহায্য করা উচিত্। সার্বিক পুনরুদ্ধারে বহুপক্ষবাদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রতিটি দেশের কাজ। কেবল বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমেই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ সামগ্রিক পুনরুদ্ধার-কাজ নষ্ট করতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারী বারবার আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিটি মানুষ নিরাপদ না-হওয়া পর্যন্ত এ বিশ্বের কেউ নিরাপদ নয়।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)