মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার কারণ বিশ্লেষণ
2020-12-10 10:51:48

মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার কারণ বিশ্লেষণ

মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার কারণ বিশ্লেষণ

চার দিনব্যাপী ৩৩তম গোল্ডেন রুস্টার চলচ্চিত্র উত্সব ২৮ নভেম্বর রাতে চীনের বিখ্যাত সিয়ামেন শহরে শেষ হয়েছে। ‘My People,My Country’ এবং ‘তুওকুয়ান’ নাম বেশ কয়েকটি মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্র এবারের গোল্ডেন রুস্টার চলচ্চিত্র উত্সবে বেশ কয়েকটি পুরস্কার জয় করে। চীনের চলচ্চিত্র বাজারের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলো আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে।

 

মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলো চীনে কেমন জনপ্রিয় হয়েছে? বক্সঅফিসের পরিসংখ্যান থেকেই  তা বোঝা যায়। ২০১৭ সালে ‘Wolf Warriors-২’ নামের চলচ্চিত্রটি ৫৬৮ কোটি ইউয়ান আয় করে। বক্সঅফিসে ডোমেস্টিক চলচ্চিত্রের বাজারে এটি সর্বোচ্চ আয় করেছে। ২০১৯ সালে জাতীয় দিবসের ছুটির সময় ‘My People,My Country’, ‘The Captain’ ও ‘The Climbers’- এ তিনটি মৌলিক থিম-ভিত্তিক বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র একই সময় প্রদর্শিত হয়েছিল এবং বক্সঅফিসে আয় ও দর্শক আকর্ষণের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ডও সৃষ্টি করেছিল।

 

এ বছর নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে চলচ্চিত্র শিল্প মন্দায় পড়ে। এ অবস্থায় মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্র গোটা চলচ্চিত্র বাজার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ‘My People My Homeland’ এবং ‘The Eight Hundred’ এ দুটি চলচ্চিত্র প্রায় ৬০০ কোটি ইউয়ান আয় করে। যা ২০২০ সালে চীনের চলচ্চিত্র বাজারে আলোড়ন তোলে।

 

‘চীনা চলচ্চিত্র পত্রিকার’ প্রধান ও ‘আধুনিক চলচ্চিত্র’ পত্রিকার প্রধান হুয়াং পুই ছুয়েন বলেন, তিনি এসব মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রকে মূলধারার নতুন ফিল্ম হিসেবে আখ্যায়িত করতে পছন্দ করেন। কারণ, সেসব চলচ্চিত্রের প্রধান বিষয় মূল্যবোধের পাশাপাশি এতে দর্শক ও বাজারের স্বীকৃতিসহ আধুনিক সাংস্কৃতিক বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

 

সাধারণত বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রগুলো বাজার দখল করে রাখে। এ প্রেক্ষাপটে মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলো কীভাবে বক্সঅফিস ভালো ফল অর্জন করে এবং দর্শকের প্রশংসা পায়?

চলচ্চিত্র পরিচালক লিউ সিয়াও মনে করেন, আগের তুলনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রদর্শিত মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্র কাহিনীর কাঠামো ও গল্প বলার পদ্ধতি পরিপক্ব হয়েছে। তা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের মতো বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে।

 

‘Operation Mekong’ নামের চলচ্চিত্রকে উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে। গোটা চলচ্চিত্রে ‘উদ্ধার লাইনকে’ কেন্দ্র করে একটি কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের প্রতিটি চরিত্র এই ‘উদ্ধার লাইন’ রক্ষার জন্য কাজ করে। চলচ্চিত্রের ছন্দোবদ্ধ যুক্তি ও কাহিনী বেশ আকর্ষণীয়। এটি হলো মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রের সফলতার প্রধান কারণ।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রের ঘটনার প্রধান চরিত্র নায়ক থেকে সাধারণ মানুষে পরিবর্তন হয়েছে। ‘The Eight Hundred’ নামের চলচ্চিত্রে  এক একজন সাধারণ মানুষ গল্পের প্রধান চরিত্রে পরিণত হয়। ‘My People,My Country’ নামে চলচ্চিত্র যুগের উন্নয়ন এবং দেশের বিশাল পরিবর্তন সাধারণ মানুষের আনন্দ ও দুঃখে প্রতিফলিত হয়েছে। চলচ্চিত্র অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

 

পরিচালক লিউ সিয়াও বলেন, যে কোনো চলচ্চিত্রকে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে সবার মনে একই আবেদন সৃষ্টি করতে হবে। চরিত্রটি একটি রক্ত-মাংসের মানুষ হতে হবে। ভালোবাসা আছে, ঘৃণা আছে ও ভয়ও আছে। আগে মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রে নায়কের চরিত্র ক্রটিমুক্ত ছিলো। ফলে নায়ককে অবিশ্বাস্য মনে হতো।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্র আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। ফলে দর্শক চিন্তার সঙ্গে চরিত্রের ব্যবধান কমেছে ও তা মানুষের খুব কাছাকাছি হয়েছে।

তা ছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলো শুধুমাত্র বিপ্লবী ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ নয়, তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষও চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে পরিণত হয়েছেন।

 

তরুণ পরিচালক হান ই মনে করেন, মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে অধিক থেকে অধিকতর পেশাদার কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ। ফলে আরো গভীর ও বিস্তৃতভাবে এ যুগের থিমগুলো ব্যাখ্যা করা হয়। যেমন ‘Coffee or Tea?’ নামের চলচ্চিত্রে কয়েকজন তরুণের বড় শহর থেকে জন্মস্থানে ফিরে শিল্প-কারখানা সৃষ্টির গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এতে সমাজের পরিবর্তনও প্রকাশ পেয়েছে। একে মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্র এবং একই সঙ্গে কমেডি মুভি হিসেবে গণ্য করা হয়।

 

প্রতিদিন চীনের ৯৬ লাখ বর্গকিলোমিটার ভূমিতে প্রাণবন্ত নানা গল্প তৈরি হয়। কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনের দৃশ্য শিল্প সৃষ্টির অনুপ্রেরণা যোগায়। দারিদ্র্যমুক্ত কৃষকের অভিনয়ে তৈরি ফিচার ফিল্ম ‘A Story of Poverty Lifting’ ৩৩তম গোল্ডেন রুস্টার চলচ্চিত্র উত্সবে প্রদর্শন করা হয়। এ চলচ্চিত্রের পরিচালক কুও সিয়াও বলেন, কেউ কেউ বলেন, এই চলচ্চিত্রটি ছিল একটি পরীক্ষা। তবে আমি মনে করি, আমরা পরিবর্তনশীল যুগের সুযোগ আঁকড়ে ধরেছি। এটি হলো মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্র সৃষ্টির সবচেয়ে ভালো সময়। তাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত মানুষের বাস্তবতা তুলে ধরা এবং অগ্রগতির গল্প বলা উচিত্ বলে তিনি মনে করেন।

 

‘তুও কুয়েন’ নামে চলচ্চিত্রটি চীনের নারী ভলিবল দলের সত্যিকারের অভিজ্ঞতা অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রদর্শনের পর এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মৌলিক থিমের ভিত্তিতে জনগণের আগের রূপ পরিবর্তন হয়েছে।

অনেকে বলেন, সৃজনশীলতা হলো বর্তমানে মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্রের সফলতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ‘Operation Mekong’ এবং ‘OPERATION RED SEA’সহ ধারাবাহিক সামরিক চলচ্চিত্রে যুদ্ধ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।  ‘My People,My Country’ এবং ‘My People My Homeland’সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কাহিনী বর্ণনা করার পদ্ধতিতে নতুনত্ব তৈরির চেষ্টা করা হয়। ‘The Captain’ এবং ‘তুও কুয়েন’সহ নানা চলচ্চিত্রে তুলে ধরা মূল্যবোধ যুগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে। এসব চলচ্চিত্রের সফলতা হলো উদ্ভাবনী চিন্তাধারায় শৈল্পিক অনুশীলনের ফলাফল।

 

ভালো একটি চলচ্চিত্রের উচিত নিঃসন্দেহে ভালোবাসা প্রচার করা এবং জনগণকে সততা, ধার্মিকতা ও সৌন্দর্যের শিক্ষা দেওয়া। ভবিষ্যতে মৌলিক থিম-ভিত্তিক চলচ্চিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে মহান বিষয়গুলো তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করা উচিত্ এবং মানবিক চরিত্রসংক্রান্ত চলচ্চিত্র নিয়ে চিন্তা করা উচিত্। (লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)