মার্কিন রাজনৈতিক আধিপত্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে: সিআরআই সম্পাদকীয়
2020-12-09 15:40:30

মার্কিন রাজনৈতিক আধিপত্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে: সিআরআই সম্পাদকীয়

ডিসেম্বর ৯: চীন আইন অনুযায়ী ‘হংকংয়ের নিরাপত্তা আইন’  প্রণয়ন করেছে ও প্রয়োগ করেছে। এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। গতকাল (মঙ্গলবার) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি ভিত্তিহীন এ অভিযোগ করেন। বিবৃতিতে তিনি চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের ওপর তথাকথিত নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ঘোষণা করেন। তার এ আচরণ অযৌক্তিক, পাগলামি ও জঘন্য। এটি গুরুতরভাবে চীনের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থার স্বাভাবিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়েছে,  আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করেছে, চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ আচরণ হলো সার্বিক বিকারগ্রস্ত রাজনৈতিক আধিপত্যবাদী আচরণ। যুক্তরাষ্ট্রের জঘন্য আচরণের শক্তিশালী পাল্টা জবাব দেওয়ার মাধ্যমে নিজের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষা করবে চীন।

 

গত বছরের জুন মাসে দেশের বাইরের শক্তির ষড়যন্ত্র ও উত্সাহে ‘হংকংয়ের পলাতক কয়েদি আইন সংশোধনকে’ কেন্দ্র করে ধারাবাহিক ঘটনা ঘটে। ‘স্বাধীন হংকংবাসীসহ’ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অপরাধের ফলে হংকংয়ের সমাজে গুরুতর দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি হয়। হংকংয়ের কিছু সরকারি কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরাসরি হংকংয়ের নিরাপত্তা, রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও গণনিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাদের আচরণ হংকংয়ের দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও চীনের জাতীয় স্বার্থে গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে।

 

নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তার ত্রুটি নিয়ে কোনো দেশ চুপ থাকতে পারে না। চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি দেশীয় আইন ও আন্তর্জাতিক প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ‘হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন করে— যা আইন অনুযায়ী হংকংয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা এগিয়ে নিয়েছে এবং স্থানীয় অপরাধ দমনে ভূমিকা পালন করেছে। এই আইন হংকংয়ের সমাজকে সুসংহত করার পাশাপাশি অর্থনীতি ও গণজীবিকার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা সমাধানে নিশ্চয়তা দিয়েছে। হংকংয়ের অসংখ্য মানুষ একে স্বাগত জানায়।

 

ডিসেম্বর মাসে চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটিতে হংকংয়ের আইন পরিষদের সদস্যদের পদমর্যাদা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর হংকং গবেষণা সমিতির উদ্যোগে টেলিফোন সাক্ষাত্কারে ৬০ শতাংশ সাক্ষাত্দানকারী এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানায়।  

হংকংবাসীদের ব্যাপক সমর্থন মার্কিন রাজনীতিকরা সহ্য করতে পারেন নি। তারা চীনের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থার নিজস্ব আইনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেন। তাদের অস্বাভাবিক উদ্বেগের পিছনে রয়েছে সুগভীর ষড়যন্ত্র।

 

তারা ন্যায়সঙ্গত শক্তি প্রতিরোধের মাধ্যমে হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইন এবং জাতীয় গণকংগ্রেসের সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে চায়। তারপর ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা নীতির’ অনুশীলন নষ্ট করা এবং চীনের উন্নয়ন প্রতিরোধ করতে চায়।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, গত ৭ ডিসেম্বর মার্কিন-চীন বিজনেস কাউন্সিল বোর্ডের প্রতিনিধি দলের ভিডিও সংলাপে চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, বর্তমানে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তে এসেছে। বর্তমানে সবচে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো- নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে চীন-মার্কিন সম্পর্কের সুষ্ঠু উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা। ওয়াং ই’র কথার পরপরই, পম্পেওসহ কিছু রাজনীতিক তথাকথিত ‘নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করেন। তাদের আরেকটি ইচ্ছা হলো- নতুন মার্কিন সরকারের প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করা এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ককে স্বাভাবিক হতে বাধা দেওয়া। তাদের এই নিকৃষ্ট আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।
 

তবে, মার্কিন রাজনীতিকরা যত বাধাই সৃষ্টি করুক-না-কেন, হংকংয়ে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থার’ বাস্তবায়ন বন্ধ করা যাবে না। হংকংয়ে স্থিতিশীল সমাজ গঠন এবং উন্নয়নের জনমত অটল থাকবে। চীনা জাতির পুনরুত্থানের মহান ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াও প্রতিরোধ করা যাবে না। তাদের আচরণ হংকংবাসীসহ ১৪০ কোটি চীনা মানুষের তীব্র ক্ষোভ চাঙ্গা করবে এবং হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রতিজ্ঞা আরও দৃঢ় করে তুলবে। মানব ইতিহাসে পম্পেও’র মতো কিছু রাজনীতিকের জঘন্য ভাবমূর্তি রয়ে যাবে বলে মনে করে সিআরআই সম্পাদকীয়।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)