প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার জেনিভা (Geneva) আকৃতিতে ছোট হলেও সুইজারল্যান্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে দামী এবং বিলাসবহুল এই শহরে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিস ও সদর দফতর রয়েছে জেনিভাতে। পরিস্কার পরিছন্ন এবং জাঁকজমকপূণ এই শহর বিশ্ব সম্মেলনের জন্য সারা পৃথিবীতে সমাদৃত। এছাড়া ঐতিহাসিক ভবন ও দুর্গ পরিদর্শন, আলপাইন লেকে সাতার কাটা, আউটডোর এক্টিভিটি এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য অন্বেষণে জেনিভার তুলনা নেই।
জেনিভা ভ্রমণের সময়
বছরের যেকোন সময়ই জেনিভা ভ্রমণে যেতে পারেন তবে গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এছাড়া বিভিন্ন ঋতুতে অপরুপ সুইজারল্যান্ড (Switzerland) ভিন্ন ভিন্ন রুপে পর্যটকদের মন জয় করে।
জেনিভার দর্শনীয় স্থান
লেক জেনিভা (Lake Geneva) : জেনিভার অন্যতম আকর্ষনের নাম লেক জেনিভা। জেনিভার বুক চিরে বয়ে চলা ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই লেকে পযটকদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। আছে ছোট থেকে মাঝারি নৌকা বা জাহাজে লেক ভ্রমণের ব্যবস্থা। আর লেকের দুইপাশে গড়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল, শপিংমল ও স্যুভেনিয়র শপ।
জেট ডি’আউ (Jet d’Eau – Water Jet) : জেনিভার সবচেয়ে আইকনিক ও বিখ্যাত ল্যান্ডমার্কের নাম জল জেট। একটি শক্তিশালী পাম্প প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 500 লিটার পানি ১৪০ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত করে। লেকে সাতার কাটা এবং জেট ডি’আউ এর বিস্ময়কর কৃত্রিম ঝর্ণাটি স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়।
ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম (Natural History Museum) : ১৯৬৬ সালে চালু হওয়া ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামটিতে কীট পতঙ্গের নমুনা থেকে শুরু করে চাঁদের পাথর এবং নানারকম জীবাশ্ম সংরক্ষিত আছে। পরিবার নিয়ে পরিদর্শনের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত জায়গা। এই যাদুঘরে জনস নামে দুই মাথাওয়ালা একটি জীবন্ত কচ্ছপ আছে, এটি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবেশের প্রতিকুলে লড়াই করে চলছে।
জারদিন বোটানি (Jardin Botanique) : ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত জারদিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে পৃথিবীর প্রায় ১৪,০০০ টিরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ছয় লক্ষ লতাগুল্মের নমুনা সংরক্ষনে রয়েছে। একই সাথে চিড়িয়াখানা এবং বৃক্ষের মেলবন্ধন উপভোগ করার জন্য জারদিন বোটানিক্যাল গার্ডেন একটি আদর্শ জায়গা।
জারডিন ইংলাইস (Jardin Anglais) : ১৮৫৫ সালে নির্মিত জারডিন ইংলাইস পার্কটি জেট ডি’আউ বেশ কাছেই অবস্থিত। সুন্দর গোলাপ বাগান, ফুলের বিছানা কিংবা বিভিন্ন রাইডের জন্য পার্কটি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মিউজিয়াম অফ আর্ট এন্ড হিস্টোরি (Museum of Art and History) : জেনিভার কেন্দ্রে অবস্থিত সুইজারল্যান্ডের সর্ব বৃহৎ শিল্প জাদুঘর জেনিভা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া এখানে ১৬শ থেকে ১৮শ শতকের পৃথিবী বিখ্যাত ডাচ, ফ্লেমিশ এবং ফরাসি শিল্পীদের শিল্পকর্ম রয়েছে।
পার্ক ডেস বাস্টিন্স (Parc Des Bastions) : Place Neuve সংলগ্ন শান্ত ও সুন্দর এই পার্কটি বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আদর্শ স্থান। এখানে প্রশস্ত লন, রেস্টুরেন্ট এবং শিশুদের খেলার মাঠ রয়েছে। এছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় এখানে নানান রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পার্কটি ব্যাপক জনপ্রিয়।
প্যালিস ডেস নেশনস (Palais des Nations) : ১৯৩৮ সালে নির্মিত প্যালিস ডেস ন্যাশনাল কমপ্লেক্সে প্রতি বছর হাজার হাজার আন্তঃসরকার সংশ্লিষ্ট সভায় অনুষ্ঠিত হয়। তাই বলা যায় পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী জায়গা বা প্রধান কূটনীতিক কেন্দ্র হচ্ছে প্যালিস ডেস নেশনস। এখানে জাতিসংঘের নিউইয়র্ক সদর দফতরের পরবর্তী দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে।
প্যাটেক ফিলিপ মিউজিয়াম (Patek Philippe Museum) : ১৮৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত জগৎ বিখ্যাত সুইস ঘড়ি তৈরির ইতিহাস জানা যাবে প্যাটেক ফিলিপ মিউজিয়ামে। ৫০০ বছরের ঘড়ি ক্রমবিকাশের ইতিহাস, স্বয়ংক্রিয় বাদ্যযন্ত্র ও প্রাচীনতম ঘড়ির সংগ্রহশালা দেখতে এখানে পর্যটকগণ ভিড় করেন।
জেনিভা ভ্রমণের কিছু টিপস:
জেনিভায় পরিবহণ এবং মিউজিয়াম পরিদর্শণের খরচ কমাতে এক, দুই ও তিন দিন মেয়াদে জেনিভা পাস কিনতে পারেন।
হোটেল বুকিং দেয়ার ক্ষেত্রে কি কি পরিবহণ সেবা বিনামূল্যে পাবেন তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
জেনিভায় ট্রেন ভ্রমণ বেশ সাশ্রয়ী। ট্রেনের টিকিটের বিভিন্ন রকম পাস পাওয়া যায়।
এক বোতল পানি কিনতে ২ থেকে ৪ CHF খরচ হয়। প্রয়োজনে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে এমন পানির বোতলে পানি বহন করুন।
জেনিভায় অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। পায়ে হেটে জেনিভার পুরাতন শহরটা ঘুরে দেখতে পারেন।
সরাসরি ট্যাক্সি ভাড়া না করে রাইড শেয়ারিং (উবার, গ্রাব) অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি বুকিং করতে পারেন।
(রুবি/তৌহিদ)