টানা ছয় মাস ধরে চীনের আমদানি ও রপ্তানি বেড়েছে
2020-12-08 16:22:48

ডিসেম্বর ৮: সোমবার চীনের রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসন দেশের আমদানি ও রপ্তানি-সংক্রান্ত এক পরিসংখ্যানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত চীনের বাণিজ্যিক আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ হয়েছে ২৯.০৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান; যা গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ১.৮ শতাংশ বেশি। টানা ছয় মাস ধরে চীনে আমদানি ও রপ্তানির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বছরও চীনের আমদানি-রপ্তানির ইতিবাচক ধারা বজায় থাকবে।

 

এ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে চীনে ৩.০৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এই পরিমাণ ৭.৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ১.৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান এবং আমদানি হয়েছে ১.২৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। আমদানি ও রপ্তানি গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ১৪.৯ শতাংশ বেশি ও ০.৮ শতাংশ কম হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের কর্মকর্তা লি খুই ওয়েন বলেন,

 

 ‘এ বছর সারা বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী দেখা দেয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ পতন শুরু হয়। তবে চীন মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছে। বিদেশি বাণিজ্য স্থিতিশীল করার সংশ্লিষ্ট নীতিগুলো শক্তিশালী ও কার্যকর হয়েছে। গত জুন মাস থেকে টানা ছয় মাস ধরে চীনের বিদেশি বাণিজ্যের আমদানি ও রপ্তানি খাতে ইতিবাচক বৃদ্ধি বাস্তবায়িত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের অংশগ্রহণ আরো বেড়েছে।’

 

প্রথম ১১ মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আসিয়ান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া— এই ৫টি বাণিজ্যিক অংশীদার অঞ্চলে চীনের আমদানি ও রপ্তানি বেড়েছে। এর মধ্যে আসিয়ান জোট চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। আসিয়ানের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যে ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ পরিমাণ চীনের মোট বিদেশি বাণিজ্যের ১৪.৬ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) হলো চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ইইউ’র সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ দেশের মোট বিদেশি বাণিজ্যের প্রায় ১৪ শতাংশ। এসময় যুক্তরাষ্ট্র চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বেড়েছে ৬.৯ শতাংশ; যা চীনের বিদেশি বাণিজ্যের মোট পরিমাণের ১২.৬ শতাংশ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ৬.৯ শতাংশ বেড়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে আমদানি ৭.২ শতাংশ বেড়েছে।

 

এ বছর মহামারীর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে, বিদেশি বাণিজ্য স্থিতিশীল রাখতে চীন ধারাবাহিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এসব ব্যবস্থার কারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে।

 

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান চাও চিয়েন পিং বলেন,

 

‘এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গোটা বিদেশি বাণিজ্য রোলার কোস্টারের মতো জটিল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। শুরুতে বিদেশি অর্ডার ছিল না; পরে উত্পাদন পুনরুদ্ধার হলে অর্ডার গ্রহণ শুরু হয়। এখন আমরা নিচ থেকে উপরের দিকে উঠেছি এবং প্রবৃদ্ধির ভালো প্রবণতা অর্জন করেছি। আমরা ধারাবাহিক ব্যবস্থা যেমন—শুল্ক ও খরচ কমানোর নীতি এবং মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সমর্থনের মাত্রা বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করি। এসব ব্যবস্থার কল্যাণে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছে।’

চাং বলেন, চলতি বছর আমাদের এই ফলাফল অর্জন সহজ ছিল না। গোটা বছর বিদেশি বাণিজ্যে অব্যাহতভাবে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন,

 ‘বিদেশি বাণিজ্যে আমদানির চেয়ে রপ্তানির অবস্থা ভালো। তাই, সামষ্টিক অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অন্যভাবে বলা যায়, চলতি বছর বিদেশি বাণিজ্য ও বিদেশি পুঁজি স্থিতিশীল করার নীতি এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন সুরক্ষার কারণে চীন দেশি-বিদেশি প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করেছে। ফলে বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশকে শক্তিশালী করে তোলার পথে চীন এগিয়ে যাচ্ছে।’

 

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)