স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ও মহাকাশ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করবে চীন ও রাশিয়া
2020-12-07 14:34:38

স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ও মহাকাশ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করবে চীন ও রাশিয়া

ডিসেম্বর ৭: সম্প্রতি প্রকাশিত ‘চীন ও রুশ প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের ২৫তম নিয়মিত বৈঠকের যৌথ ইস্তাহারে’ বলা হয়, দেশ দু’টি স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশনের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা চালাবে এবং চাঁদে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা চালাবে। চীন ও রাশিয়ার সহযোগিতার প্রাধান্যের পারস্পরিক পরিপূরকতা বাস্তবায়িত হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় এ নিয়ে শুনবেন একটি প্রতিবেদন।

চীন ও রাশিয়া মহাকাশে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, চাঁদ ও গহীন মহাকাশ অনুসন্ধান, বিশেষ উপাদান বিকাশ, স্যাটেলাইট সিস্টেম, আর্থ রিমোট সেন্সিং এবং মহাকাশে ধ্বংসাবশেষ সনাক্তকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করছে। যৌথ ইস্তাহার অনুযায়ী চীন ও রাশিয়া ‘পেইতৌ’ ও ‘গ্লোনাস’ ব্যবস্থার সমন্বিত সেবার মান বাড়াবে, চীন ও রাশিয়া ভূভাগে পেইতৌ ও গ্লোনাস তত্ত্বাবধান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বেগবান করবে এবং চীন ও রাশিয়ার আন্তঃদেশীয় পরিবহনসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রকল্পের বাস্তবায়ন এগিয়ে নেবে।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মহাকাশ ফেডারেশন মহাকাশ পরিবহন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াং ইউ কুয়াং এক সাক্ষাত্কারে বলেন, স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন সিস্টেমের মধ্যে সামঞ্জস্য বাস্তবায়ন করা হলো আন্তর্জাতিক প্রবণতা; যা ব্যবহারকারীদের আরো ভালো পরিষেবা দিতে পারে। তিনি বলেন,

 ‘বর্তমানে স্যাটেলাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘প্যাসিভ পজিশনিং প্রিন্সিপাল’ ও ‘সময়ের পার্থক্যমুক্ত অবস্থানের’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তাই স্যাটেলাইটের সংখ্যা যত বেশি হবে, যথাযথ অবস্থান নির্ধারণের যথার্থতা ও গতি তত বাড়বে। তাই স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন রিসিভার যত বাড়ানো হবে, বিভিন্ন ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের সংকেত পেলে নিঃসন্দেহে ব্যবহারকারীরা আরো বেশি সুবিধা পাবে। এটি হলো বিশ্বের প্রবণতা।’

ইয়াং ইউ কুয়াং মনে করেন, চীন ও রাশিয়ার স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন সিস্টেমের সহযোগিতা দু’দেশের প্রাধান্যের পরিপূরকতা বাস্তবায়ন করবে। দু’দেশে পারস্পরিক তত্ত্বাবধান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ফলে স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন সিস্টেমের উচ্চমানের নির্ভুল এলাকা বাড়বে এবং পারস্পরিক কল্যাণ ও উইন-উইন অবস্থা বাস্তবায়ন করা যাবে।

চাঁদ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর চন্দ্র অনুসন্ধান ও মহাকাশ প্রকৌশল কেন্দ্র সম্প্রতি জানায় যে, ভবিষ্যতে চীন চাঁদে আরো গভীর অনুসন্ধান চালাবে এবং যথাক্রমে ছাংএ্য-৬, ৭, ৮ নংসহ বিভিন্ন মিশন পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চন্দ্র-বিজ্ঞান ও গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, চন্দ্র অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলে খরচ কমাবে এবং প্রযুক্তি খাতে একে অপরের সহযোগিতা বাড়বে।

তিনি বলেন,

‘চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর প্রকাশিত চাঁদ অনুসন্ধানের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ছাংএ্য-৬ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অঞ্চল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে। ছাংএ্য-৭ চন্দ্রপৃষ্ঠে সুনির্দিষ্ট ও সার্বিক পর্যবেক্ষণ করবে এবং ছাংএ্য-৮ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি এলাকায় পর্যবেক্ষণ করবে এবং মানবহীন বিজ্ঞান ও গবেষণাকেন্দ্রের পরীক্ষা চালাবে। এতে বরাদ্দের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে। মহাকাশ খাতে বড় দেশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গভীর মহাকাশ অনুসন্ধানের প্রকল্পে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চালিয়ে থাকে।’

যৌথ ইস্তাহার অনুযায়ী ভবিষ্যতে দু’দেশে আন্তর্জাতিক চন্দ্র-বিজ্ঞান ও গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা চালাবে।

ইয়াং ইউ কুয়াং মনে করেন, চাঁদ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে রাশিয়ার গভীর প্রযুক্তি রয়েছে এবং চীনের উন্নয়নের প্রাধান্যও স্পষ্ট। তাই দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র কাজে লাগবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন,

 ‘চীনের মহাকাশ খাতের উন্নয়নের প্রাধান্য অনেক স্পষ্ট। আমাদের শুরুটা অনেক উচ্চ পর্যায়ের। এবার ছাংএ্য-৫ নং নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার ক্ষেত্রে চাঁদের কক্ষ প্রদক্ষিণ ও ডকিং পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এর জটিলতা অনেকটা মানুষবাহী নভোযানের চাঁদে অবতরণে সামিল। তা ছাড়া, চন্দ্রযানে অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।’

ইয়াং ইউ কুয়াং বলেন, মহাকাশ অনুসন্ধান হলো মানবজাতির অভিন্ন আশা। শান্তিপূর্ণভাবে মহাকাশ ব্যবহার করা এবং বিশাল মহাকাশে অনুসন্ধান করা হলো মানবজাতির অভিন্ন স্বপ্ন। মহাকাশ খাতে চীন ও রাশিয়ার সহযোগিতা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে দু’দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনা আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)