ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের পর চীনা ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন বিক্রি বেড়েছে
2020-12-04 16:23:22

চলতি বছর চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনার পর ভারত সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো চীনবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন, দেশটিতে প্রচলিত চীনের বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপলিকেশন বন্ধ করা, চীনা পণ্য বয়কট ইত্যাদি। এরমধ্যে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক জোরেশোরে উঠলেও এক হিসাবে দেখা গেছে চীনা পণ্যের বিক্রি এসময় আরও বেড়েছে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন অন্যতম। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব কর্মসূচিতে ভারতের লোকসান হতে পারে প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা পরবর্তী ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দেয় দেশটির ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। ভারতের এনডিটিভি জানায়, চীনের সমস্ত পণ্য বর্জন করার ডাক দিয়েছে ভারত। এতে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটির ছোট থেকে বড় মাপের ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে বছরে প্রায় ৭৪ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্য আমদানি করে ভারত। জানা যায়, চীন থেকে সারা বছর আমদানি করা জিনিসের মধ্যে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এসবের মধ্যে বেশিরভাগই খেলনা, পারিবারিক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক দ্রব্য এবং নানা রকমের প্রসাধনী। তবে এর মধ্যে বিভিন্ন মানের মোবাইল ফোন অন্যতম।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভারতের বাজারে তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রি হয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখের বেশি ফোন। পণ্য বর্জনের সময়ও চীনা ব্র্যান্ডের ফোনগুলো বাজারে আধিপত্য বজায় রেখেছে। চীনের সিয়াওমি এক কোটি ৩৫ লাখ মোবাইল সেট বিক্রি করেছে,  এবং অপ্পো ও ভিভো খুব বেশি পিছিয়ে ছিল না।

 

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধের পরে ভারতে এক প্রকার চীনবিরোধী ঢেউ দেখা গিয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো ও লোকজন রাস্তায় নেমেছিল এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিল। এমনকি টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রগুলোও এ জাতীয় প্রচার চালিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো। সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনেই চীনের পণ্য বর্জন করে নি। এ মুহূর্তে ভারতে চীনা পণ্য বিশেষত মোবাইল ফোনের কোনও বিকল্প নেই। চিনের ফোনগুলো ভারতের বাজারে বিক্রি হচ্ছে, সাধারণ মানুষ সেসব ফোনসেট কিনছে।

 

আন্তর্জাতিক ডেটা কর্পোরেশন (আইডিসি) গত ৬ নভেম্বর প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে এসব জানিয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ভারতীয় স্মার্ট ফোনের বাজারে ভাল কেনাকাটা হয়েছে। এই সময় দেশটিতে মোট ৪৩ মিলিয়ন স্মার্ট ফোন বিক্রি হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি। সাম্প্রতিক মহামারির আঘাতের সময় মানুষের স্মার্ট ফোন ও ল্যাপটপ-কম্পিউটারের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।

 

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই সময়ে চীনা ফোনগুলি মূলত ভারতের বাজার পুরোপুরি দখল করে রেখেছে। চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ এবং ভারতে চীনা পণ্য বর্জন করার ডাক অনেক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেও এটি সাধারণ গ্রাহকদের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। অন্যান্য খাতে চীনা পণ্যগুলির চাহিদা কিছুটা কমলেও মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে  ভারতীয়দের পছন্দের তালিকায় এখনও চীনা ব্র্যান্ডের ফোনগুলো এগিয়ে রয়েছে।

 

তথ্য অনুসারে, বছরের  তৃতীয় প্রান্তিকে সিয়াওমি ভারতের বাজারে ১.৩৫ মিলিয়ন স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। যা সমসাময়িক সময়ে ভারতে সিয়াওমি কোম্পানির সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড! এর পরে রয়েছে কোরিয়ান ব্র্যান্ড স্যামসাং; যা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। স্যামসাং প্রায় ১১ মিলিয়ন ফোন বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি।

এরপর রয়েছে চীনা ব্র্যান্ডের অন্যান্য ফোনগুলো। এর মধ্যে অন্যতম ভিভো, রিয়েলমি ও অপ্পো। ভিভো ৯০ লাখ ফোন, রিয়েলমি ৮০ লাখ ফোন ও অপ্পো ৬১ লাখ ফোন বিক্রি করেছে। ভারতীয় বাজারে বিক্রি হওয়া শীর্ষ পাঁচটি মোবাইল ব্র্যান্ডের মধ্যে চারটি ব্র্যান্ডই চীনের। গবেষণা সংস্থা আইডিসি ধারণা করছে যে, বছরের চতুর্থ ও শেষ প্রান্তিকেও ভারতের বাজারে চীনের স্মার্টফোন বিক্রি বাড়তে থাকবে।

 

মোহাম্মদ তৌহিদ

সিএমজি বাংলা