চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উড্ডয়ন করে ইতিহাস সৃষ্টি করল ‘ছাং এ-৫’
2020-12-04 14:43:50

ডিসেম্বর ৪:  গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টা ১০ মিনিটে ‘ছাং এ-৫’ চন্দ্রযানটি চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উড্ডয়ন করে নির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করেছে।  চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে কক্ষপথে পৌঁছাতে রকেটটির ৬ মিনিট সময় লেগেছে। এটি চীনের তৈরী প্রথম চন্দ্রযান যেটি পৃথিবীর বহির উপগ্রহ থেকে প্রথমবারের মতো উড্ডয়ন করেছে। 

পৃথীবি থেকে উৎক্ষেপণের সময় ‘ছাং এ-৫’ এর সঙ্গে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর পুনরায় উড্ডয়নের জন্য স্বতন্ত্র আরোহী যন্ত্র সংযুক্ত ছিল। তবে যন্ত্রটি পুনরায় উড্ডয়নের সময় প্ল্যাটর্ফমের অবস্থা, ইঞ্জিনের সীমাবদ্ধতা, এবং পৃথিবী থেকে চন্দ্রের পরিবেশের পার্থক্যসহ বিভিন্ন বিষয় ধারা প্রভাবিত হয়। তাই  যন্ত্রটিকে  পৃথীবি থেকে তত্ত্বাবধানের সহায়তায় এর বিশেষ সেন্সরের মাধ্যমে তার অবস্থান, চলার পথ, ও গতিবিধি ঠিক করা হয়।

চীনের মহাকাশ প্রযুক্তি গ্রুপের পঞ্চম একাডেমীর ‘ছাং এ-৫’ প্রকল্পর ডেপুটি চিফ ডিজাইনার সিং চুও ই বলেন,“আমরা হিসেব করেছি, আরোহী যন্ত্রের ওজন এক কেজি বাড়লে চন্দ্রযানকে ৪ কেজি অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। ফলে আরোহী যন্ত্রের গুণগতমান খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডিজাইন করার সময় এর এমন গুণগতমান নিশ্চিত করেছি, যাতে যন্ত্রটি সহজেই পুনরায় উড্ডয়নের কাজ সম্পন্ন করতে পাড়ে। আরোহী যন্ত্রের এ গুণগতমান নিশ্চিত করে অনুসন্ধানযান ডিজাইন করা খুবই কঠিন ছিল। তবে আমরা সফল হয়েছি”।

‘ছাং এ-৫’ এর ডিজিটাল ব্যবস্থা বিষয়ক প্রধান ডিজাইনার ছেং হুই সিয়া বলেন, চন্দ্রযানটিকে আগুন দিয়ে নিক্ষেপের প্রথম সেকেন্ড সবচেয়ে ভীতিজনক ছিল।

তিনি বলেন,“পুনরায় উড্ডয়নের প্রথম সেকেন্ডে আগুন পুড়ানোর সময়টি খুবই জটিল এবং কঠিন। প্রক্রিয়াটি ইঞ্জিনের মাধ্যমে চালিত হয়। কিন্তু এ সময়টিতে কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এটি মানুষের লাফ দেওয়ার এক সেকেন্ড সময়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তবে সে এক সেকেন্ডের পর স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ শুরু করে। তারপর আরোহী যন্ত্র স্থিতিশীলভাবে উড্ডয়ন করতে শুরু করে। তাই আগুন পুড়ানোর এক সেকেন্ড সময় নিয়ে সবাই চিন্তিত ছিল।

আগুন পুড়ানোর আগে যন্ত্রটি চীনের জাতীয় পতাকা প্রসারিত করে দেখিয়েছে। এটি হচ্ছে চন্দ্রপৃষ্ঠে চীনের প্রথমবারের মতো জাতীয় পতাকার স্বাধীন প্রদর্শন। উড্ডয়নের পর আরোহী যন্ত্রটি নিজেকে তিনটি অবস্থায় রূপান্তর করে নির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করে।

‘ছাং এ-৫’ এর পরবর্তী কাজ নিয়ে চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর চন্দ্র অনুসন্ধান ও মহাকাশ প্রকল্প কেন্দ্রের উপমহাসচিব ওয়াং ছিং বলেন,“আরোহী যন্ত্রটি উড্ডয়নের পর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কক্ষপথ যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ দুই যন্ত্র আবার ফিরে আসার যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এ সময় আরোহী যন্ত্রটি  চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে সংগ্রহ করা নমুনা ফিরে আসার যন্ত্রটির কাছে হস্তান্তর করবে। তারপর এটি পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিবে। তাই সামনে আমাদের অনেক কাজ রয়েছে। তবে সব কাজ উড্ডয়ন থেকে পরবর্তী তিনদিনের মধ্যে করতে হবে”।

চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উড্ডয়নের পর বর্তমানে  ‘ছাং এ-৫’ ফেরার পথে রয়েছে। তার কাজ নিয়ে বেইজিংয়ের মহাকাশ উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান ডিজাইনার  সিয়ে চিয়ান ফেং বলেন,‘ছাং এ-৫’ কক্ষপথে পাঠানোর পর থেকে বেশ কয়েকবার নিয়ন্ত্রণ ও সুবিন্যাস্ত করার পর এটি সাফল্যের সঙ্গে চন্দ্রপৃষ্ঠে ড্রিল করে মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছে। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, এবারের মিশন সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে। এর সব কার্যক্রম পূর্বপরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ‘ছাং এ-৫’ খুব দ্রুত পৃথিবীতে ফিরে আসবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উড্ডয়ন করে ইতিহাস সৃষ্টি করল ‘ছাং এ-৫’

(রুবি/এনাম/শিশির)