আগামী বছরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশে দাঁড়াবে: ওইসিডি
2020-12-02 16:25:03

 ডিসেম্বর ২:  ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) গতকাল (মঙ্গলবার) বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে সর্বশেষ পূর্বাভাস সম্বলিত  প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে আগামী বছরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি বিভিন্ন দেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে যৌথ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।

 

গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশের আগে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ওইসিডি’র মহাসচিব এনগেল গুরিয়া বলেন,“২০২০ সালের শুরুতে কোভিড-১৯ প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমরা প্রথমবারের মতো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। ভ্যাকসিন সবার কাছে সুখবর এনে দিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করেছে। তবে, আমরা এখনও দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারি নি”।

 

ওইসিডি’র পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ৪.২ শতাংশ সংকুচিত হবে, যা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের পূর্বাভাসের তুলনায় ০.৩ শতাংশ বেড়েছে। এতে আরও  বলা হয় যে, চলতি বছরমার্কিন অর্থনীতি ৩.৭ শতাংশ, ইউরো ব্যবহৃত অঞ্চলের অর্থনীতি ৭.৫ শতাংশ এবং জি-টোয়েন্টির অর্থনীতি ৩.৮ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে ২০২০ সালে একমাত্র চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

 

একই সঙ্গে ওইসিডি জানায় যে, আগামী বছরে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ শতাংশ, যা বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।চীন বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে তিন ভাগের এক ভাগ অবদান রাখবে। অন্য প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হার ৩.২, ইউরো ব্যবহৃত অঞ্চলের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৩.৬ এবং জি-টোয়েন্টির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৪.৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

ওইসিডি জানায়,  আগামী বছরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হারের ওপর ভ্যাকসিনসহ নানা উপাদানের প্রভাব পড়বে। সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিক মাদাম লাউরেন বুন বলেন,“বিশ্ব অর্থনীতি ২০২১ সালে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হবে বলে আমরা অনুমান করছি। বলা যায় পুরো ২০২১ সাল পুনরুদ্ধার চলতে থাকবে। তবে পুনরুদ্ধারের কাজে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ভ্যাকসিন যত দ্রুত বাজারে আসবে ততই ভালো, ভ্যাকসিন বিতরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে হবে”।

 

প্রতিবেদনে আরও  বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ প্রকোপের কারণে সারা বিশ্বে অসমতা বেড়েছে।  সমাজের সর্বত্র দুর্বল মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিম্ন আয়কারী, অদক্ষ জনগোষ্ঠি ও তরুণ-তরুণীরা আগামী কয়েক বছর সংকটে থাকতে পারেন। ঋণ সংকট ও অনিশ্চয়তার কারণে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান সংকটে পড়তে পারে। তাই বিভিন্ন অর্থনীতিকে গণস্বাস্থ্য সেবা, দুর্বল জনগণ ও মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ওইসিডি।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,  ভ্যাকসিনের ব্যাপক অগ্রগতি আশার আলো দেখিয়েছে। তবে বিভিন্ন পক্ষকে এ আশা বাস্তবতায় রুপান্তর করার জন্য যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায় ওইসিডি।

 

ওইসিডি’র মহাসচিব এনগেল গুরিয়া বলেন, কোভিড-১৯ প্রকোপ প্রমাণ করেছে যে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,“কোভিড-১৯ প্রকোপ প্রমাণ করে যে, কিছু বিষয় বিশ্বব্যাপী বিষয়, যাকে মোকাবিলা করতে বিশ্বব্যাপী সকলের প্রচেষ্টা দরকার। এর মধ্যে কিছু সমস্যা সমাধান করতে অনেক মূল্য দিতে হয়। তবে মূল্য দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কতোটা শক্তিশালী তাও প্রমাণ করেছে মহামারি। আমি আশা করি কোভিড-১৯ প্রকোপ নতুন চালিকাশক্তি তৈরি করবে,এবং বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের  সমস্যার সমাধান করা যাবে।

 

(রুবি/এনাম/শিশির)