আজকের টপিক: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীন-ইউরোপ সহযোগিতা প্রসঙ্গ
2020-12-02 15:20:50

গত ২২ নভেম্বর জি-২০ গোষ্ঠীর রিয়াদ শীর্ষসম্মেলনে ‘পৃথিবী রক্ষা’ শীর্ষক আলোচনায় চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন,  পৃথিবী আমাদের যৌথ বাড়ি, আমাদের অবশ্যই মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটির ধারণা কাজে লাগিয়ে জলবায়ু ও পরিবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসাথে কাজ করতে হবে, যাতে আমাদের এই নীল গ্রহ রক্ষা করা যায়। এর আগে চীনা শীর্ষনেতারা একাধিক আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক কর্মক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, চীন এ খাতে তার জাতীয় অবদান বৃদ্ধি করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চূড়ান্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনে পৌঁছতে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনে সচেষ্ট হবে। আন্তর্জাতিক অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকিং’ বিশ্বাস করে যে, এ লক্ষ্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ০.২ থেকে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মানবজাতির সামনে সবচেয়ে কঠোর চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম। জাতিসংঘের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ২১ শতাব্দীর প্রথম ২০ বছরে বৈশ্বিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোট সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। জলবায়ুসংক্রান্ত দুর্যোগের সংখ্যা বাড়া হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোট সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রধান ফ্যাক্টর। এই বছরের নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে, বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর একটি বৃহৎ নির্গমনকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’ থেকে সরে যায়। চুক্তিতে ১৯৭টি স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই এই কাণ্ডটি করে। ২২ নভেম্বর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জি-২০ শীর্ষসম্মেলনে বলেন, এই চুক্তি ‘অন্যায় ও একতরফা’। এটি ‘আমেরিকান অর্থনীতিকে দমিয়ে রাখতে’ করা হয়েছে বলে তিনি প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন। এই সম্পর্কে মার্কিন ‘ফরেন পলিসি’ ওয়েবসাইট বলেছে, মানবজাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্বের প্রধান বড় রাষ্ট্রগুলো এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপেক্ষা করে না।

প্রকৃতপক্ষে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার গুরুত্ব সম্পর্কে চীন ও ইউরোপের মতৈক্য রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্কও রয়েছে। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে, জ্বালানি সাশ্রয়সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে সহায়তা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ, যাতে চীনের পুনঃব্যবহারযোগ্য শক্তি শিল্পের বিকাশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। চলতি বছর হঠাৎ করে কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, কিন্তু এটি জলবায়ু এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে চীন-ইইউ সহযোগিতা বাধাগ্রস্ত করেনি। সেপ্টেম্বরে, চীন ও ইইউর নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, চীন ও ইইউ পরিবেশ ও জলবায়ুসংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ এবং দু’পক্ষের ডিজিটাল ক্ষেত্রের উচ্চ পর্যায়ের সংলাপব্যবস্থা গড়ে তুলবে। ইউরেশীয় মহাদেশের দুই প্রান্তে ‘দুটি শক্তি’ হিসেবে চীন ও ইউরোপ হাতে হাত রেখে যৌথ ভূমিকা পালন করেছে। দু’পক্ষ দৃঢ়ভাবে ‘জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কাঠামোগত কনভেনশন’ ও ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তির’ সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক সহযোগিতায় একতরফাবাদ ও বাণিজ্যের সংরক্ষণবাদের নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনায় প্রবল চালিকাশক্তি যুগিয়েছে এটি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে, যেটি বিশ্বে দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে ব্যবস্থাপনার সর্বোচ্চ দেশ এবং এর কার্যকারিতা অর্জনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দেশ। পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত বছরের শেষ দিক পর্যন্ত, চীনের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ২০১৫ সালের তুলনায় ১৮.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সূক্ষ্ম পার্টিকুলেট পদার্থের (পিএম ২.৫) গড় বার্ষিক ঘনত্ব ২৩.১ শতাংশ কমেছে। ১৯৯৯ সাল থেকে চীনে কৃষিজমির পরিবর্তনে বনাঞ্চল আবার গড়ে তোলার আয়তন ৩৪৩৩ কোটি হেক্টর।(ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)