বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আরো কঠোর সরকার
2020-11-29 19:14:10

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে দেশের মানুষ। সরকারও আগে থেকেই জনগণকে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সতর্ক করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েক দিন ধরে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর হার বেড়ে দ্বিগুণে দাঁড়িয়েছে। সংক্রমণ হারও উর্ধ্বমুখী। মাস দুয়েক সংক্রমণ হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশে ওঠানামা করলেও কদিন ধরে তা ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। দৈনিক সংক্রমণ সংখ্যা ফের দু’হাজারের কোঠা পার হয় আড়াই মাস পর। এমন অবস্থায়ও সরকারে বিধিনিষেধে গা করছে না অনেকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়ার নির্দেশনা এসেছে সরকারের তরফে।

২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়ে কঠোর হবার নির্দেশনা দেয়া হয়। যে কোনো মূল্যে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

সরকারের কঠোর নির্দেশনার পর রাজধানী বিভিন্ন স্থানে জোরদার করা হয় ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম। ২৪ নভেম্বর রাজধানীর অন্তত ১৬টি স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। মাস্ক না পরার নানা অজুহাত দেখিয়েও অনেকে পার পাননি জরিমানা থেকে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমান আদালত মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালায় ও বিনামূল্য মাস্ক বিতরণ করে। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষকে জরিমানার বদলে মাস্ক বিতরণ করা হয়। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। একে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজধানীবাসী। তবে এ কার্যক্রম যতটা জোরালো হওয়া দরকার ততটা হচ্ছে না বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে, করোনার এ সংক্রমণ বৃদ্ধি শীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা সে বিষয়ে নিঃসংশ না হতে পারলেও একে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তাদের আশঙ্কা প্রথম ধাপের মতো এবারো যদি করোনা মোকাবেলায় সমন্বয়হীনতা থাকে তবে তা হবে ভয়াবহ। করোনা মোকাবেলায় এখনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত বিভাগ করা হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। তাদের পরামর্শ বিমান বন্দরগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আইসিউ পরিকল্পন বাস্তবায়ন জরুরি বলেও মনে করেন তারা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ বাড়ানোর পরামর্শ জনস্বাস্থ্যবিদদের। এছাড়া নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি এন্টিজেন পরীক্ষা সহজলভ্য করারও পরামর্শ তাদের।

এতসব মন খারাপ করা খবরের মধ্যে করোনা নিয়ে বড় সুখবরটি হলো আন্তর্জাতিক টিকা দান সংস্থা গ্যাভি’র কাছ থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারের কম হওয়ার শর্তে বিনামূল্যে এ টিকা পাবে বাংলাদেশ। গ্যাভি টিকা বিতরণ শুরু করলে বাংলাদেশ প্রথম দিকেই টিকা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি ডোজ টিকা আনার চুক্তি করেছে সরকার। টিকা সংগ্রহের উদ্যোগে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে টিকা পাওয়ার পর তা সংরক্ষণ ও বিতরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে চলা জরুরি বলে মনে করেন তারা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন করোনা টিকা এলে পর্যায়ক্রমে তা সবাই পাবেন। বলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী প্রথমে টিকা পাবেন করোনার সম্মুখযোদ্ধারা। পরবর্তীতে তা সবার জন্য নিশ্চিত করা হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। রাজধানীর বেশ কিছু হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে এ কথা ঠিক। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতো জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ সুবিধাসহ করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল।   

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

 

 

 

 

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।