আরসিইপি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সুদূর প্রসারি ভূমিকা রাখবে
2020-11-26 16:11:29

নভেম্বর ২৬: বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ, একপক্ষবাদ ও কোভিড-১৯ মহামারির নেতিবাচক ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

 

এ ধাক্কা সামাল দিতে দক্ষিণ পূর্ব  এশিয়ার আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ানের দশটি সদস্য দেশ এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও চীন সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারি সম্পর্ক চুক্তি’ (আরসিইপি) স্বাক্ষর করেছে।

এ চুক্তির মাধ্যমে দেশগুলো যৌথভাবে অবাধ বাণিজ্য, বহুপক্ষবাদ ও আঞ্চলিক অর্থনীতির একত্রীকরণ উন্নয়নের কথা ঘোষণা করেছে।

বর্তমান বিশ্বে এ চুক্তির দ্বারা সৃষ্ট সংগঠনটি বিশ্বের বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এর ফলে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার উন্নয়ন, আঞ্চলিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলেও তাঁরা বিশ্বাস করেন।

জাতি সংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আরসিইপি হলো বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি। এটি হলো বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক গোষ্ঠী। এর সদস্য দেশসমূহে বিশ্বের ৩০ শতাংশ লোকসংখ্যার বসবাস।

আরসিইপি দেশসমূহের জনসংখ্যা ‘বিস্তৃত ও প্রগতিশীল ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্ব চুক্তি’ (সিপিটিপিপি)-এর সদস্য দেশগুলোর জনসংখ্যার ৪.৫ গুণ এবং ইইউ’র জনসংখ্যার ৫ গুণ বেশি।

আরসিইপিভূক্ত দেশগুলোতে বিশ্বের উৎপাদিত শিল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ রয়েছে। এছাড়া সারা বিশ্বর ৫০ শতাংশ গাড়ি ও ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎও উৎপাদিত হয় এসব দেশে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরেশিয়া অঞ্চলের মধ্যকার বাণিজ্যিক সংঘাত চলমান থাকে।  ফলে অবাধ বাণিজ্যি অঞ্চল নির্মাণের মাধ্যমে সার্বিক শিল্প চেইন সমন্বয় করে যৌথভাবে শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়ানো ও বাণিজ্যিক বাধা ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার কনকুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চেং ইউন মো সম্প্রতি বলেন, আরসিইপি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে।  অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে ছাড়িয়ে অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যান্য বিনিময়ও বৃদ্ধি করবে।

ধারণা করা হচ্ছে, আরসিইপির মাধ্যমে চীন আসিয়ান দেশগুলোতে মধ্যবর্তী ও চূড়ান্ত পণ্য রফতানির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি করবে। চীনের অভ্যন্তরে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার অপ্রত্যক্ষ রফতানিও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।

মালয়েশিয়ার চীনের সাধারণ ব্যবসা মালিক সমিতির চেয়ারম্যান দাই লিয়াং ইয়ে বলেন, আরসিইপি সরবরাহ চেইন উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এটি আসিয়ান ও পূর্ব এশিয়ার শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ জোরদার করবে। মালয়েশিয়া আরসিইপির সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। চুক্তিটি সেদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে। এটি মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক সামর্থ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব এশিয়া অর্থনীতি গবেষণালয়ের প্রধান পিটার ড্রাইসডেল বলেন, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য বৃদ্ধি বর্ধিত সুরক্ষাবাদের দ্বারা হুমকির মধ্যে রয়েছে।  সেজন্য এ চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তিটিকে বাণিজ্য উদারকরণ ও একটি উন্মুক্ত বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা সুরক্ষার জন্য একটি প্রধান বিবৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

বিশ্ববিখ্যাত থিঙ্ক ট্যাংকগুলো ধারণা করছে যে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত আরসিইপি বেস লাইন থেকে সদস্য দেশগুলির রফতানি,বৈদেশিক বিনিয়োগের তালিকা ও জিডিপি যথাক্রমে ১০.৪, ২.৬ ও ১.৮ শতাংশ বৃদ্ধি করবে।

আরসিইপি বহু দেশ ও লোকসংখ্যাকে সংযুক্ত করেছে। পারস্পরিক কল্যাণের একটি সুপার ফ্রেন্ডস সার্কেল গঠিত করেছে। বিশেষত, বিশ্বায়নের বাধার মুখোমুখি আজকের বিশ্বে মুক্ত বাণিজ্য শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ছাই/এনাম/আকাশ