চাঁদ গবেষণায় বিশ্ব রেকর্ড করে ‘ছাং এ-৫’-এর সফল উৎক্ষেপণ
2020-11-24 12:34:23

চাঁদ গবেষণায় বিশ্ব রেকর্ড করে ‘ছাং এ-৫’-এর   সফল উৎক্ষেপণ

নভেম্বর ২৪: আজ (মঙ্গলবার) চীন তার ‘ছাং এ-৫’ অনুসন্ধানী উপগ্রহ বহনকারী ‘লংমার্চ-৫’ রকেট  চাঁদের উদ্দেশ্যে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে। ফলে চীনের মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম নতুন এক মাইলফলক অতিক্রম করেছে। কারণ এর মাধ্যমে চীনের চাঁদ অনুসন্ধান কার্যক্রম তৃতীয় পর্যায়ে পৌছেছে। ‘ছাং এ-৫’  মহাকাশের সবচেয়ে জটিল ও কঠিন দায়িত্ব নিয়ে উৎক্ষেপিত হয়েছে।

অনুসন্ধানী উপগ্রহটি চাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে চীনের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নিকট ফেরত  পাঠাবে।  উপগ্রহটি চাঁদের উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে সঠিক তথ্য বিজ্ঞানীদের নিকট  প্রেরণ করলে, তাঁরা এসব তথ্য উচ্চতর বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ব্যবহার করবেন। আজকের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে আমি এ বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলবো।

মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটায় চীনের হাইনান প্রদেশের ওয়েনছাংয়ে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ‘ছাং এ-৫’ চাঁদের উদ্দেশ্যে সফলভাবে উৎক্ষেপিত হয়েছে।

চীনের উপগ্রহটি ১১টি স্তর অতিক্রম করে ২০ দিন পর চাঁদে অবতরণ করে সেখান থেকে ২ কেজি নমুনা সংগ্রহ করে আবার পৃথীবিতে ফিরে আসবে।

চীনের চাঁদ অনুসন্ধানের তৃতীয় পর্যায়ের প্রধান পরিকল্পনাকারী ফেই চাও ইউ বলেন, পরিকল্পনাটির তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, নমুনা সম্পর্কিত নতুন প্রযুক্তি গবেষণা করা। দ্বিতীয়ত, পৃথীবির বাইরে মনুষ্যবিহীন উপগ্রহ ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নমুনা ফেরত আনা। তৃতীয়ত, চাঁদ অনুসন্ধান ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন করা। নতুন এ অভিযানের ফলে মনুষ্যবাহী যানের চাঁদে অবতরণ ও মহাকাশের গভীরে অনুসন্ধানের পথ সুগম হবে।

চাঁদ গবেষণায় বিশ্ব রেকর্ড করে ‘ছাং এ-৫’-এর   সফল উৎক্ষেপণ

আগে কয়েকটি দেশ চাঁদ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে সফল হয়েছিল। কিন্তু চীনের এ অভিযানের সঙ্গে সেসবের মৌলিক পার্থক্য হলো, চীন মনুষ্যবিহীন যান প্রেরণ করে নমুনা সংগ্রহ করছে। এটি বিশ্বে আর কেউ করে দেখাতে পারেনি।

চীন এরোস্পেস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্পোরেশন (সিএএসসি)-এর অনুসন্ধানী উপগ্রহ ব্যবস্থার উপপরিচালক শি ফেং জিং বলেন, ইতোপূর্বে কয়েকজন নভোচারী চাঁদে অবতরণ করে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁরা প্রতি বারে কেবল ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম নমুনা  সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু চীন এটাকে কেজি পর্যায়ে উন্নীত করতে চায়। যা বিশ্বের কোন দেশই এখনও পর্যন্ত করতে পারে নি।

চীনের ‘ছাং এ-৫’ হলো এ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে জটিল অনুসন্ধানী উপগ্রহ ব্যবস্থা। এটি অরবিটার, রিটারার, ল্যান্ডার এবং আরোহী চারটি অংশ নিয়ে গঠিত। আর চারটি অংশ একসঙ্গে কাজ করে থাকে।

অনুসন্ধানী উপগ্রহটির উপপরিচালক ও সিএএসসি’র শাংহাই মহাকাশ প্রযুক্তি গবেষণালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিশনের স্থায়ী সম্পাদক চাং ইউ হুয়া বলেন, এ উপগ্রহে স্বয়ংক্রিয় চন্দ্র পৃষ্ঠের নমুনা ফেরত প্রযুক্তি চীন বিশ্বে প্রথম বার ব্যবহার করছে। সেজন্য এ উপগ্রহটিকে অনেক চ্যালেন্ঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

উপগ্রহটির সহকারী পরিকল্পনাবিদ শি ফেং জিং বলেন, চীনা বিজ্ঞানীরা চাঁদের ইতিহাসের একটি সম্পূর্ণ চিত্র পেতে চান। সেজন্য বিভিন্ন যুগের নমুনা প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সেসব নমুনা সংগ্রহের দুটি পদ্ধতি রয়েছে: পৃষ্ঠতল ও ড্রিল সংগ্রহ। চীন উভয় পদ্ধতির প্রয়োগ করে আরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য, এবারের উপগ্রহটি উৎক্ষেপিত হয়েছে চীনের নতুন প্রজন্মের ট্রাইস্ট ক্রায়োজেনিক ক্যারিয়ার রকেটের মাধ্যমে। আর এটি ওই রকেটের ষষ্ঠ উৎক্ষেপণ। ২০২০ সালে এটির তৃতীয় উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়েছিল। তারও আগে এটি মঙ্গল অনুসন্ধানী উপগ্রহ-১ নিয়ে সফলভাবে উৎক্ষেপিত হয়েছিল।

ছাই/এনাম/ওয়াং হাইমান