গুইচৌ প্রদেশের দরিদ্র বাসিন্দাদের পানি সমস্যার সমাধান
2020-11-23 10:43:57

 

গুইচৌ প্রদেশের দরিদ্র বাসিন্দাদের পানি সমস্যার সমাধান

পাহাড়ের নিচে স্প্রিং রয়েছে, কিন্তু পাহাড়ের চূড়ায় থাকা মানুষ স্প্রিংয়ের পানি খেতে পারেন না। অনেক দূরে গিয়ে পানি আনতে হয়। কঠিন কাজ ছিল প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত। প্রদেশটিতে রকি মরুভূমি অঞ্চলটি দেশের মোট পাথুরে মরুভূমির প্রায় এক চতুর্থাংশ। কুইচৌ প্রদেশের আকার একটি বিশালাকার ফানেলের মত। সেজন্য যদিও প্রদেশটিতে বৃষ্টি বেশি, তবুও মাটিতে পানির অভাব। গত দশ বছরে কুইচৌ প্রদেশের বাসিন্দারা নিজের ভৌগোলিক পরিবেশ ব্যবহার করে জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা নির্মাণ করার চেষ্টা করতে থাকে। বর্তমানে কুইচৌ’র ২ কোটিরও বেশি গ্রামবাসী সুখের জীবন বাস্তবায়ন করেছেন।

মাশান পাহাড়ের গভীর এলাকায় অবস্থিত জিইউন জেলার দরিদ্র বাসিন্দা উ গুয়ান ফু’র আগে খাওয়ার পানির কষ্ট করতেন।  তিনি প্রতিদিন অনেক দূর থেকে পানি নিয়ে বাড়িতে আসতেন। পাহাড়ে রাস্তার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। তিনি সবসময় হেঁটে হেঁটে আসতেন। কিন্তু এখন তাঁর বাড়িতে কলের পানি চালু হয়েছে।

গুইচৌ প্রদেশের দরিদ্র বাসিন্দাদের পানি সমস্যার সমাধান

কুইচৌ প্রদেশের মানুষ জানে, পানির ব্যবস্থা নির্মাণ না-করলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে না। গত দশ বছরে কুইচৌতে জলব্যবস্থা নির্মাণ ও স্বচ্চল সমাজ জল পরিকল্পনাসহ ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। পৌর সরকারের ক্যাডার ও নাগরিকরা পাহাড় ও নদীতে জলসম্পদ খুঁজে পান এবং জলাধার ও জলের পাইপ নির্মাণ করেন। এর মাধ্যমে কুইচৌ প্রদেশে পানি খাওয়ার কঠিন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।

গুইচৌ প্রদেশের দরিদ্র বাসিন্দাদের পানি সমস্যার সমাধান

সন্ধ্যায় উ গুয়ান ফু’র দোতলা ভবনে সূর্য জ্বলে। তাঁর ছেলে শহরে কাজ করেন। কিন্তু তিনি বাড়িতে ফিরে বিয়ে করবেন। উ গুয়ান ফু’র মনে আরো সুখের জীবন হবে।

ইংচাই গ্রামে আগে যখন বৃষ্টি হতো, তখন ভবন ভিজে যেত। আগে গ্রামবাসীরা বৃষ্টির পানি সঞ্চয় করতেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁরাও কলের পানি খান।

মারাত্মক পাথুরে মরুভূমি ছাংশুন জেলায় আগে পানি পাওয়া অনেক কঠিন ছিল। ২০১০ সালে জেলাটিতে খরা দেখা দেয়। আগের সবুজ পাহাড় সে বছরে হলুদ রঙে পরিণত হয়। সে বছরের কঠিন স্মৃতি স্থানীয় বাসিন্দারা কখনও ভুলে যাবেন না। ছাংশুন জেলার দাইহুয়া থানা হলো কুইচৌ প্রদেশের ২০টি  অত্যন্ত দরিদ্র থানার একটি। ২০১৪ সালের আগে এখানে কোন শিল্প ছিল না। বর্তমানে জলাধার নির্মিত হয়েছে। তারা কলের পানি খান। থানাটির প্রধান ওয়াং ফু ছিয়াং জানালেন। তিনি বলেন, পুরানো ব্যবস্থা বর্তমান আধুনিক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হয়েছে।

গুইচৌ প্রদেশের দরিদ্র বাসিন্দাদের পানি সমস্যার সমাধান

ওয়েইনিং জেলা হলো কুইচৌ প্রদেশের সবচেয়ে উঁচু। লোকসংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। যদিও জেলাটিতে বড় ও ছোট নদী অনেক বেশি, কিন্তু সেগুলো প্রধানত জেলার সীমান্তের আশেপাশের নিম্ন-অঞ্চলে অবস্থিত। বৃষ্টিপাত হয় মূলত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। কখনো কখনো ভিজা, কখনো কখনো পানির অনেক অভাব। জেলাটির জল কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক শেন কুয়াং ছুয়ান এ কথা জানালেন।   

জেলাটির ভৌগোলিক পরিবেশ অনেক খারাপ। পাহাড়ী অঞ্চলে জল ব্যবস্থা নির্মাণ অনেক কঠিন। শেন কুয়াং ছুয়ান বলেন, সবচেয়ে কঠিন বিষয় ছিল কলের পানির পাইপ নির্মাণ। এ বছর জেলাটির জল ব্যবস্থার নির্মাণে ৮২ কোটি ইউয়ান আরএমবি বরাদ্দ করা হয়। শুধুমাত্র পাইপ নির্মাণ করা হয় ৫ হাজার কিলোমিটার। জল ব্যবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে।

ওয়েইনিং জেলায় ২৭ হাজার হেক্টর আলপাইন ঠান্ডা শাকসবজি বাজার এবং বড় সবজির পাইকারি বাজার নির্মিত হয়েছে। বাজারের সবুজি কুয়াংতং, হংকং ও ম্যাকাও মহা উপসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিক্রয় হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ স্থানীয় বাসিন্দার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

নীল আকাশে ওয়েইনিং জেলার ছাওহাই থানার চংহাই বসবাস এলাকার সবজিকেন্দ্রে এক হাজারেরও বেশি গ্রামবাসী কাজ করছেন।  আগে এখানে শুধুমাত্র আলু চাষ হতো। কিন্তু এখন বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষা করা হয়। নতুন জল ব্যবস্থায় যেকোন সবজি চাষ করা যায়।

প্রায় দশ বছরের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে কুইচৌ প্রদেশ জল ব্যবস্থার নির্মাণে বরাদ্দ করেছে ২.৮ কোটি ইউয়ানেরও বেশি। জল সংরক্ষণ প্রকল্পগুলির বার্ষিক জল সরবরাহ ক্ষমতা ১২.৩৭ বিলিয়ন ঘনমিটারে পৌঁছেছে। সেচের আওতায় এসেছে অঞ্চলটির ১৬ লাখেরও বেশি হেক্টর জমি। বন্যা প্রতিরোধ ও খরার ত্রাণ, মাটি ও জল সংরক্ষণ এবং নদী শাসন ও অন্যান্য কাজ সার্বিকভাবে উন্নত হচ্ছে।