একজন জার্মান অভিনেতার ‘হংকং স্বপ্ন’
2020-11-19 10:42:04

একজন জার্মান অভিনেতার ‘হংকং স্বপ্ন’

একজন জার্মান অভিনেতার ‘হংকং স্বপ্ন’

আজ আমরা একজন জার্মান অভিনেতার জীবনের ঘটনার সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।

 

তাঁর নাম জুলিয়ান গার্টনার, চীনা নাম ই ইউ হাং। তিনি টানা দশ বছর ধরে হংকংয়ে বাস করছেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি নরওয়েগামী প্রমোদ তরীতে চীনা পর্যটকদের দেখেন। সেই থেকে অপরিচিত দেশ চীনের প্রতি তাঁর আগ্রহের শুরু হয়। ‘সে সময় চীনাদের স্বাধীন ও উন্মুক্তকরণের চিন্তাভাবনা আমার আশেপাশের মানুষের চেয়ে বেশ ভিন্ন রকম ছিল।’ তিনি দশ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রমোদ তরীতে চীনাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা এভাবেই স্মৃতিচারণ করেন। তারপর চীনের প্রতি কৌতূহল নিয়ে তিনি চীনে আসেন এবং ২০০৮ সালে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। তারপর তিনি হংকংয়ে বাস করতে শুরু করেন।

 

এক দশক পর তাঁর মর্যাদা ছাত্র থেকে উদ্যোক্তা ও অভিনেতা পর্যন্ত অব্যাহতভাবে রূপান্তরিত হয়। বহুমুখী এই সংস্কৃতি শহরে তাঁর ‘হংকং স্বপ্ন’ ধাপে ধাপে বড় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি সেতু হয়ে উঠতে চাই এবং পূর্ব ও পশ্চিমের সংযোগ করতে চাই।’

ই ইউ হাং এখন হংকংয়ের পিং চাউ দ্বীপে বাস করছেন। দ্বীপের আয়তন এক বর্গকিলোমিটারেরও কম। হংকংয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অনেক ঝামেলা থেকে পিংচাউ দ্বীপে তাঁর জীবন প্রশান্তিময় ও উন্নত। তিনি একাই তিন তলার একটি ভবনে বাস করেন।

 

মানুষের ভিড় ও স্থানীয় পরিবহনব্যবস্থার সঙ্গে তিনি প্রথমে অভ্যস্ত ছিলেন না। রাস্তায় প্রতিটি লোক দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়ে যান। ই ইউ হাং মনে করেন, হংকংয়ের আকর্ষণীয় শক্তি হচ্ছে এর সংস্কৃতির সহনশীলতা।

তিনি বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমা জগত যেন দুই নতুন মানুষ এসে হংকংয়ে মিলিত হয়, সমন্বিত হয় এবং একে অপরকে আলিঙ্গন করে।

 

ই ইউ হাং বলেন, চীনা বা জার্মান, এমন লেবেল তার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। কারণ হংকংয়ের উন্মুক্তকরণ তাকে নতুন একটি মর্যাদা দিয়েছে, তিনি একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তি।

চাকরির কারণে তিনি মাঝেমাঝে মুলভূভাগ ও হংকংয়ে যাতায়াত করেন। তিনি সাবলীল ম্যান্ডারিন এবং ক্যান্টনিজ বলতে পারেন।

বাভরিয়ান ভাষায় বাড়ি মানে একজনের টুপি রাখার জায়গা। আমার কাছে হংকং হচ্ছে আমার টুপি রাখার দ্বিতীয় জায়গা। আমার অনেক ভালো বন্ধু হংকংয়ে থাকেন এবং আমার পছন্দসই অনেক ভালো জিনিস সেখানে আছে।

 

অনেক বিদেশির মতো হংকং মানে কুংফু তারকা ব্রুস লি ও জ্যাকি চেনের শিল্পকর্ম। ১৮ বছর বয়সে তিনি আকস্মিক এক সুযোগে ‘২০৪৬’ নামে ওয়োং কার উয়াইয়ের পরিচালিত চলচ্চিত্র দেখেন। সে সময় চলচ্চিত্রের কথোপকথন তিনি একদম বুঝতে পারেন নি, তবে চলচ্চিত্রের দৃশ্য-বিন্যাস, গল্প, সঙ্গীত এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভিনয় তাঁকে মুগ্ধ করেছে এবং তিনি অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন।

 

হংকং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ই ইউ হাং ‘live it china’ নামে বিনামূল্যে অনলাইন ভাষা বিনিময় প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করেন। ২০১৩ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিনোদন জগতে প্রবেশ করেন এবং হংকং টিভিবি’র চুক্তিবদ্ধ অভিনেতা হয়ে ওঠেন।

 

দীর্ঘদিন ধরে টিভিবি’র আনুষ্ঠানিক বিদেশি অভিনেতার সংখ্যা ছিল অনেক কম। টিভি নাটকে তারা প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন না এবং তাদের বেতনও স্থিতিশীল ছিল না। অনেক বিদেশি অভিনেতা-অভিনেত্রী টিভিবি’ থেকে বিদায় নেন, তবে ই ইউন হাং এই চাকরি পছন্দ করেন।

 

চলতি বছর নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র শিল্প থমকে গেছে। বছরের শুরুতে অসুস্থ বাবাকে দেখাশুনার জন্য তিনি জার্মানিতে ফিরে যান। মার্চ মাসে আবার হংকংয়ে আসার পর তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর অভিনীত নতুন চলচ্চিত্র মহামারীর কারণে বন্ধ হয়েছে।

 

এ চলচ্চিত্র মুল ভূভাগ, হংকং ও জার্মানির সম্মিলিত উদ্যোগে নির্মিত। এতে একজন মানুষের নিজের মর্যাদা পরিবর্তনের মাধ্যমে মানবজাতির বিভিন্ন দুর্বলতা কাটানোর কাহিনী তুলে ধরা হয়।

 

তিনি বলেন, মহামারীর সময়, এ মহামারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মোকাবেলার পদ্ধতি ছিল ভিন্ন রকম, তাই ফলাফলও ভিন্ন রকম হয়েছে। চলচ্চিত্র মানবজাতির ভাবানুভূতি সংযোগ করতে পারে এবং মতভেদের বিষয়কে গ্রহণযোগ্য সুন্দর জিনিসে রূপান্তর করতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

গত শতকের ৯০ দশক ছিল হংকংয়ের চলচ্চিত্রের সোনালি সময়। সে সময় জোন উ, ওয়োং কার উয়াই, চাং উয়েন থিংসহ স্পষ্ট ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন। তখনকার সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক শিল্প এশিয়া তথা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হংকংয়ের চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক শিল্প তেমন উজ্জ্বলতা ছড়ায় নি।

 

এ অবস্থায় ই ইউ হাং মনে করেন, নিয়মিত ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত্। ঐতিহ্যবাহী উপায়ে পুরোনো বিষয় সৃষ্টি করা যাবে না।

চীনের মুল ভূভাগে প্রবেশের জানালা এবং বিশ্বের সঙ্গে চীনের যোগাযোগ জানালা হিসেবে হংকং আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্র ছাড়াও, পূর্ব ও পশ্চিমা সংস্কৃতির সমন্বয়ের স্থান।

 

তিনি বলেন, হংকংয়ের ভৌগলিক প্রাধান্য এবং অর্থনৈতিক মর্যাদার ভিত্তিতে বিশ্বের আরও বেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, সাংস্কৃতিক সৃজনশীল শিল্প উন্নত করা এবং তরুণ-তরুণীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আরো বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত্। এক্ষেত্রে সরকারের সমর্থন প্রয়োজন। ফলে শিল্প, চলচ্চিত্র ও মিডিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হংকংবাসী আরো দূরে এগিয়ে যেতে পারবেন।

 

(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)