আরসিইপি স্বাক্ষর অবাধ বাণিজ্য ও বহুপক্ষবাদ ব্যবস্থার প্রতি সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ
2020-11-16 14:02:24

নভেম্বর ১৬: গতকাল (রোববার) আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (আরসিইপি) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি অনলাইনে আয়োজিত হয়। ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রীরা এ চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার এ অঞ্চলে বৃহত্তম অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এদিন চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনার উপ-প্রতিনিধি ওয়াং সৌ ওয়েন বলেন, আরসিইপি স্বাক্ষর অবাধ বাণিজ্য ও বহুপক্ষবাদ ব্যবস্থার প্রতি দৃঢ় সমর্থন।  বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রত্যাশা যোগাবে এই চুক্তি। এটি  মহামারী-পরবর্তী যুগে বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারেও সহায়ক প্রমাণিত হবে। বিস্তারিত শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিটি ১০টি ​​আসিয়ানভুক্ত দেশের উদ্যোগে শুরু হয়। পরে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এবং ভারতকে এতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর লক্ষ্য হলো, শুল্ক এবং অ-শুল্ক বাধা হ্রাস করে ১৬টি দেশের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলা।

 

চুক্তির আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১২ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল। এটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, পণ্য ও সেবার বাণিজ্যসহ দশটিরও বেশি ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত। ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর তৃতীয় "আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি" বৈঠকে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ১৫টি দেশ চুক্তির বেশকিছু বিষয়ে একমত হয়েছে। তখন আরও জানানো হয় যে, "গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে একমত হতে না পেরে” ভারত চুক্তির আলোচনা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

 

২০১৮ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ১৫টি দেশের লোকসংখ্যা প্রায় ২৩০ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ। এই দেশগুলোর মোট জিডিপি ২৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। ফলে এসব দেশের মধ্যে একটি অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে উঠলে সেটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল।

 

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনার উপ-প্রতিনিধি ওয়াং সৌ ওয়েন বলেন, এই চুক্তি একটি উচ্চ-স্তরের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি। আরসিইপি সদস্যদের মধ্যে উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ এবং কয়েকটি স্বল্পোন্নত দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সদস্যদের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, উন্নয়নের স্তর, স্কেল ইত্যাদির পার্থক্য অনেক বেশি। এর জন্য আরসিইপি চুক্তি সকল পক্ষের দাবির সর্বাধিক সংখ্যা বিবেচনা করেছে এবং পণ্য, পরিষেবা ও বিনিয়োগের মতো বাজার অ্যাক্সেস এবং প্রবিধানগুলির ক্ষেত্রে আগ্রহের ভারসাম্য অর্জন করেছে।

 

ওয়াং সৌ ওয়েন আরও বলেন, আরসিইপি স্বাক্ষর চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে একটি উচ্চ-স্তরের অবাধ বাণিজ্য চুক্তির জন্যও একটি ভাল ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, “এই ১৫ রাষ্ট্রের মধ্যে জাপান ও চীন এর আগে কোনো অভিন্ন অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ছিল না। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যেও কোনো অবাধ বাণিজ্য চুক্তি ছিল না। এখন আরসিইপির কারণে চীন ও জাপান এবং জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে একটি অবাধ বাণিজ্য চুক্তির সম্পর্ক রয়েছে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
 

ওয়াং মনে করেন, চুক্তিটির স্বাক্ষর পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতকরণের জন্য একটি নতুন মাইলফলক। তিনি বলেন, “ইইউ-তে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য একটি বিশাল অভিন্ন বাজার রয়েছে এবং উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর মধ্যে একটি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। পূর্ব এশিয়ায় আমরা ১৫টি দেশ মিলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ইউনিট গঠন করেছি। এটি আমাদের অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উদারকরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”

 

ওয়াং সৌ ওয়েন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, আরসিইপি স্বাক্ষর অবাধ বাণিজ্য ও বহুপক্ষবাদ ব্যবস্থার প্রতি একটি জোরালো সমর্থন। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রত্যাশা তৈরি করেছে। এ চুক্তি মহামারী-পরবর্তী যুগে বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সহায়ক প্রমাণিত হবে। (জিনিয়া/আলিম/শুয়েই)