গেল ৫ বছরে চীনের স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা খাতে অর্জিত অগ্রগতি প্রসঙ্গে
2020-11-16 16:25:18

গেল ৫ বছরে চীনের স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা  খাতে অর্জিত অগ্রগতি প্রসঙ্গে

গেল ৫ বছর তথা ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল ছিল চীনের ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সময়। এ সময়ে  চীন সরকার ‘স্বাস্থ্যবান চীন’ নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রধান কাজ চিকিত্সা দেওয়া থেকে স্বাস্থ্যের ওপর স্থানান্তর করা হয়। চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মৌলিক চিকিত্সাব্যবস্থা কাঠামো তৈরি করা হয়। সকল নাগরিক গণস্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার আওতায় আসে।

চীন জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের উপ-পরিচালক ইউয়ু সুয়ে জুন কিছুদিন আগে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের শেষ দিক পর্যন্ত, চীনা মানুষের গড় আয়ু ৭৬.৩ বছর থেকে উন্নীত হয় ৭৭.৩ বছরে। ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা চলাকালে চীনের প্রধান স্বাস্থ্য সূচক উচ্চ ও মাঝারি আয়ের দেশের গড় পর্যায়ের তুলনায় ভাল ছিল। ৪ বছরে চীনের গড় আয়ু এক বছর বৃদ্ধি পায়। যখন গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন চীনের মানুষের গড় আয়ু মাত্র ৩৫ বছর ছিল, যা বর্তমান গড় আয়ুর অর্ধেক। ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনায় মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্বাস্থ্য সম্মেলনে জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কৌশল উত্থাপন করা হয়। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র অষ্টাদশ সম্মেলনের পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ‘স্বাস্থ্যবান চীন’ নির্মাণকাজ এগিয়ে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয় হয়। সিপিসির উনবিংশ সম্মেলনে ‘স্বাস্থ্যবান চীন’ কৌশল জাতীয় কৌশল পর্যায়ে উন্নীত করা হয়।

 

পাশাপাশি, জনগণের চিকিত্সা খরচের ব্যক্তিগত অংশ ২০১৫ সালের ২৯.৩ শতাংশ থেকে ২০১৯ সালে ২৮.৪ শতাংশে নেমে আসে। রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন—এই দুই বিষয়কে কেন্দ্র করে চীনে চালু হয় ১৫টি বিশেষ কর্মকাণ্ড। মানুষ যাতে অসুস্থ না-হয়, তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা।

চীনে ৯৫ শতাংশ মানুষ মৌলিক চিকিত্সাবীমার আওতায় এসেছে। বীমা খাতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধের সংখ্যা ৫২০ থেকে ৬৮৫-তে উন্নীত হয়েছে। তার মানে এ ৬৮৫ ধরনের ওষুধ বীমার আওতায় এসেছে। পাশাপশি রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে মানুষের ব্যক্তিগত ও ভিন্ন চাহিদা পূরণে নানান ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

২০১৯ সালে বিশ্ববিখ্যাত চিকিত্সা ম্যাগাজিন ‘ল্যানসেট’ চীনা ইস্যু প্রকাশ করে। এতে ১৪টি প্রবন্ধ রয়েছে। ‘স্বাস্থ্যবান চীন’ ও গণস্বাস্থ্যের দিক থেকে চীনের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করা হয় ম্যাগাজিনে এবং ‘স্বাস্থ্যবান চীন’ নির্মাণে চীনের সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

চিকিত্সাব্যবস্থ্যার সংস্কার বিশ্বের সকল সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। চিকিত্সা ও ওষুধ ব্যবস্থা সংস্কার থেকে ১৪০ কোটি চীনা মানুষ উপকৃত হয়েছে। বিশেষ করে চিকিত্সা নেয়ার অসুবিধা ও খরচ বেশি—এই দুটি বিষয় মোকাবিলায় একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার।

চিকিত্সা নেয়ার অসুবিধার সমস্যা সমাধানে ৮ প্রদেশে চালু হয় আঞ্চলিক চিকিত্সাকেন্দ্র এবং ৮৪ শতাংশ জেলা পর্যায়ের হাসপাতালকে দ্বিতীয় বা তার চেয়ে ভাল শ্রেণির হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। ২০১৯ সালে সারা চীনে সাধারণ রোগের চিকিত্সার হার ছিল ৯০ শতাংশ।

 

চেচিয়াং প্রদেশে স্বাস্থ্য ই কার্ড ও সামাজিক বীমা ই কার্ড একীকরণ হয়ে একটি কার্ডে পরিণত হয়। একটি কার্ড দিয়ে হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে এবং খরচ পরিশোধ করা যায়।

২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের ২৫৮টি শহরে চালু হয় এমন ব্যবস্থা যে একটি কার্ড দিয়ে হাসপাতালের সব কাজ করা যায়। চীনে প্রতিষ্ঠিত হয় ৯০০টি অনলাইন হাসপাতাল এবং সব শহরের ১৪ হাজারটি হাসপাতাল যোগ দেয় টেলিমেডিসিন সহযোগিতা নেটওয়ার্কে। ৫৫০০টির বেশি দ্বিতীয় শ্রেণী বা তার চেয়ে ভাল হাসপাতাল অনলাইন সেবা প্রদান শুরু করে। রিজার্ভেশন ও খরচ পরিশোধ—সব অনলাইনে করা যায়। থ্রি-এ তথা চীনের প্রথম শ্রেণীর হাসপাতালে অর্ধেক চিকিত্সা রিজার্ভেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়।

চিকিত্সা খরচ কমানোর বিষয়ে ওষুধের দাম কমানোর প্রচেষ্টা করে সরকার। শুরুতে ২৫ ধরনের ওষুধের গড়ে ৫২ শতাংশ দাম কমানো হয় এবং দ্বিতীয় দফায় ওষুধের গড় দাম ৫৩ শতাংশ কমানো হয়। অ্যান্টিক্যান্সারের আমদানিকৃত ওষুধের শুল্ক মওমুফ করা হয়। পাশাপাশি, মাথাপিছু চিকিত্সা ভাতা প্রতি বছর বৃদ্ধি পায়।

অভূতপূর্ব কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে চীনের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকাজে বড় সাফল্য অর্জিত হয়। এটি প্রমাণ করে যে, চীনের গণস্বাস্থ্য সেবাব্যবস্থা, চিকিত্সা পরিষেবা ব্যবস্থা, চিকিত্সা বীমাব্যবস্থা, ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ মহামরি নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি অবস্থা মোকাবিলা ব্যবস্থা কার্যকর।

২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট থেকে রোগ নিয়নন্ত্রণকেন্দ্রের নির্মাণসহ ৮০০০টি গণস্বাস্থ্য চিকিত্সা প্রকল্পে মোট ১৪১৫০ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করা হয়, যা দ্বাদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। চীনে প্রতিষ্ঠিত হয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, জরুরি চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য ত্বত্তাবধান ব্যবস্থা। সকল নাগরিক গণস্বাস্থ্য সেবাব্যবস্থার আওতায় আসে।

কোভিড-১৯ ছাড়া, গেল ৫ বছরে চীন সফলভাবে এইচ১এন১ ফ্লু, এইচ৭ এন৯ফ্লু, ইবোলাসহ নানা মহামারি মোকাবিলা করেছে। মহামারির সংক্রমণ হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয় চীন। হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা কমে যায় এবং ২০১৯ সালে গুরুতর ক্রনিক রোগের কারণে মৃতের হার ২০১৫ সালের তুলনায় ১০.৮ শতাংশ কমে যায়।

সকল মানুষের সুস্বাস্থ্য ছাড়া সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। চীন সকল  নীতিতে স্বাস্থ্য বিষয়টি যোগ করেছে এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে দেশের দক্ষতা দিন দিন বাড়ছে। আরও আধুনিক একটি দেশ হবার যাত্রায় স্বাস্থ্যশিল্পও একসাথে এগিয়ে যাচ্ছে। (শিশির/আলিম/রুবি)