মুজিববর্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশন সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ
2020-11-14 18:44:32

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ৯ থেকে ১২ নভেম্বর হয়ে গেল জাতীয় সংসদের চারদিনব্যাপী বিশেষ অধিবেশন। মুজিববর্ষের এ বিশেষ আয়োজনে জাতীয় সংসদে তুলে ধরা হয় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। সংসদকক্ষে স্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সংসদ সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানাদিকে আলোকপাত করেন।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৯ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় ৮০ জন সংসদসদস্য যোগ দেন বিশেষ এ অধিবেশনে। শুরুতেই ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণ প্রচার করা হয়। পরে সংসদে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে স্মারক বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের নানাদিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাঙালির অধিকার আদায় ও মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে  জানতে হলে, বাঙালি জাতিকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে।

ভাষণে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর শৈশব, শিক্ষাজীবন এবং মানবিকতার নানা দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের সুখসুবিধার কথা কখনো ভাবেননি। দল ও দেশের  জন্য মন্ত্রীত্ব ছাড়তে দ্বিধা করেননি। শুধু বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম আর জেল-জুলুমে কেটেছে বঙ্গবন্ধুর জীবনের সিংহভাগ। বঙ্গবন্ধু বিরোধী মতকেও গুরুত্ব দিতেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিরোধীপক্ষের কথা আগে শুনতে হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়াই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সর্বোত্তম উপায় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতির স্মারকবক্তব্যের পর সংসদে ১৭৪ বিধিতে সাধারণ আলোচনার আগে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের ওপর আলোকপাত করেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তিনি। দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তব্যের ওপর সাধারণ আলোচনায় যোগ দেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনায় যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, পৃথিবীতে হয়তো অনেক নেতা আসবেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতা আর আসবেন না। জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা স্মরণ করেন তোফায়েল আহমেদ। এ জন্য বঙ্গবন্ধু যে অবর্ণনীয় জুলুম সহ্য করেন সে কথাও তুলে ধরেন তিনি। ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, কারো কারো আপত্তির কারণে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফায় বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিটি অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। ওই সময় মত ও পথের ভিন্নতা থাকার পরও সবার এ বিশ্বাস ছিল যে ১১ দফা দাবি শেষ পর্যন্ত এক দফায় পরিণত হবে। পল্টনের জনসভার পর তা ঠিকই একদফায় পরিণত হয়।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আরো বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রমুখ।

১২ নভেম্বর শেষ হয় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন। চার দিনের বিশেষ অধিবেশনের পাশাপাশি সংসদ ভবন চত্বরে প্যান্ডেল করে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর ছিল প্রদর্শনীর আয়োজন। অধিবেশনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সংশোধন আইন ২০২০ সংসদে পাশ হয়। তবে বিশেষ এই অধিবেশনের মূল বিষয় ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন।

সংসদের বিশেষ এ অধিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতির সামনে আরেকবার উদ্ভাসিত হয়েছে ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম। তাই সংসদের এ বিশেষ অধিবেশনটি ছিল সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।