করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও বিশ্ব অর্থনীতি উন্নয়নের চীনের ভূমিকা অনুসরণযোগ্য
2020-11-14 19:25:54

 

সারা বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারি চলছে। বিশ্বে মোট ৫ কোটিরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে; মৃতের সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এরই মধ্যে চীন সফলভাবে নিজ দেশে মহামারি প্রতিরোধ করেছে। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অব্যাহত সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে মহামারি প্রতিরোধে কার্যকর ভ্যাকসিন-সংক্রান্ত গবেষণা। বর্তমানে চীনের ৪টি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও বিশ্ব অর্থনীতি উন্নয়নের চীনের অভিজ্ঞতা অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন বিশ্লেষকরা। এ সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে; মৃতের সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। অনেক দেশে মহামারির দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ভারত জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী দিল্লিতে মহামারির তৃতীয় দফার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ব্যাপক হারে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এ অবস্থায় মহামারি প্রতিরোধে টিকার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। বিশ্বের নানা দেশ টিকা গবেষণায় জোর গুরুত্ব দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে মহামারি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন দেশ টিকা গবেষণা শুরু করে। এর মধ্যে চীন সবার আগে নিজস্ব কোভিড-১৯ টিকা গবেষণা শুরু করেছিল এবং বিশ্বের সঙ্গে করোনাভাইরাসের জিনের গঠন শেয়ার করেছিল। বর্তমানে চীনের ৪টি টিকা তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এদিকে সম্প্রতি চীনে ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ ও ‘২০৩৫ সাল নাগাদ চীনের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কিত প্রস্তাব’ সম্পর্কিত খসড়া প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। যা চীনের ভবিষ্যত উন্নয়নের ব্লু-প্রিন্ট। গোটা বিশ্ব যখন মহামারি মোকাবিলায় ব্যস্ত ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে গভীর সংকটে আবর্তিত হচ্ছে, তখন চীনের উন্নয়ন পরিকল্পনা বিশ্বকে এক নতুন আশা দেখিয়েছে।

চীনের ভবিষ্যত উন্নয়নের ব্লু-প্রিন্ট দেশের অগ্রযাত্রার দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। একইসঙ্গে এটি বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। চীনে মধ্যম আয়ের ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ রয়েছে। যাদের ভোগ প্রবণতাকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছে। অতি সম্প্রতি চীনে দুটি আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করা হয়। মহামারি পরিস্থিতিতেও এতে আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ও লেনদেনের ব্যাপকতা দেখা গেছে।

চীনের ‘নতুন উন্নয়নের কাঠামোতে’ শুধু দেশের নয়, দেশ ও আন্তর্জাতিক চক্র গুরুত্ব পায়। ২০০৮ সালে আর্থিক সংকট শুরু হলেও চীনা অর্থনীতি ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশীয় ব্যয় ও বিনিয়োগের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

চীনের গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়ন এবং সরবরাহ খাতের কাঠামোগত সংস্কার গভীর করাকে কেন্দ্র করে দেশের উন্নয়ন-কৌশল ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে চীন আন্তর্জাতিক পরিষেবা বাণিজ্য মেলা আয়োজন করে। এরপর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হয় ৩য় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা। বিশ্বের একমাত্র আমদানি কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম এই মেলা। এর মাধ্যমে চীনের কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বর্তমান কঠিন অবস্থায় বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের শক্তিশালী বার্তা দেওয়া হয়েছে।

১৪০ কোটি মানুষের এ বড় বাজার গোটা পৃথিবীর বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকর্ষণ করেছে। চীনে সুস্পষ্টভাবে অর্থনৈতিক বলিষ্ঠতা দেখা গেছে। চীনের ভোগ বাজার পুনরুদ্ধার ও বৃদ্ধির সম্ভাবনার আলোকে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান চীনে তাদের কার্যক্রম বাড়িয়েছে।

এসবের পাশাপাশি চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগও ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে। গত মে মাস পর্যন্ত, বিশ্বের ১৩৪টি দেশ ও ৩০টি আন্তর্জাতিক সংস্থা চীনের সঙ্গে ২০০টি 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দলিল স্বাক্ষর করেছে।

দেখা যাচ্ছে, নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বৈশ্বিক কল্যাণকর প্রবণতাগুলো বরাবরই উন্নয়নের পথ বেছে নিয়েছে। আর এর বড় একটি অংশই চীনের উন্নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তাই আশা করা যায়, চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের হাত ধরেই বর্তমান বিশ্ব জটিল এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।