দাই স্যিং ছাও হলেন তিব্বতের চাগোলা ফাঁড়ি স্টেশনের একজন সেনা। তাঁর জন্মস্থান গুইচৌ প্রদেশের ওয়েইনিং স্বায়ত্তশাসিত জেলা। তাঁর ছোট ভাইও তাঁর সঙ্গে সীমান্তরক্ষা বাহিনীর একজন সেনা।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ১৯ বছর বয়সী দাই স্যিং ছাও তিব্বতের চাগোলা ফাঁড়িতে যোগ দেন। চাগোলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৩০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এটি হলো তিব্বত সামরিক অঞ্চলের সবচেয়ে উচ্চ ফাঁড়ি।
‘চাগোলা’ তিব্বতী ভাষায় মানে ‘প্রস্ফুটিত ফুলের জায়গা’। কিন্তু এখানে কোন গাছ, ঘাস ও ফুল দেখা যায় না। এখানকার বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ সমতল ভূমির তুলনায় মাত্র ৩৫ শতাংশ এবং বার্ষিক গড় তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দাই স্যিং ছাও চার বছর ধরে এখানে আছেন।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আগে দাই স্যিং ছাও অনেক ফর্সা ছিলেন। তিনি একজন সুদর্শন ছেলে ছিলেন। কিন্তু চার বছরে মালভূমিতে থাকার পর তিনি কালো হয়ে গেছেন। তিনি স্থানীয় মানুষের মতো হয়েছেন।
কিন্তু দাই স্যিং ছাও বলেন, ‘কালো খারাপ না। কালো হলো সেনার প্রতীক। আমার কোনো ভয় লাগে না।’
বাহিনীতে যোগ দেয়ার প্রথম দিন দাই স্যিং ছাও অসুস্থ ছিলেন। তাঁর মাথায় বেশি ব্যথ্যা ছিল। তিনি প্রথম চাগোলার পরিবেশের কাঠিণ্য বুঝতে পারেন।
কিন্তু তিনি পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন দ্রুত। এক সপ্তাহ পর তিনি আস্তে আস্তে স্থানীয় পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেন এবং স্বাভাবিকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা শুরু করেন।
দাই স্যিং ছাও বলেন, বাহিনীতে পুরানো সেনারা তাঁকে বেশি উত্সাহ দিয়েছেন। তিন মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি ফাঁড়িতে নিয়মিত টহলের দায়িত্ব পান।
চাগোলায় শীতকাল সুদীর্ঘ। চারপাশ তুষারে ঢাকা থাকে। প্রথমবারের টহলের স্মৃতি এখনো তাঁর মনে আছে। এসম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তখন তুষারপাত হয়েছে অনেক। একবার আপনি তুষারের মাঠে পা রাখলে আপনার পা হাঁটু পর্যন্ত তুষারে ডুবে যাবে। খুব ক্লান্তিকর একটা ব্যাপার। সেনারা হাঁটতে গিয়ে বার বার পরেও যান। কিন্তা তারা আবার উঠে হাঁটতে থাকেন। তাঁরা ৫৮৭৬ মিটার উচ্চ একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। প্রচণ্ড বাতাসে পাহাড়ে টহল দেওয়ার পর তাঁরা বরফের নদীর মধ্য দিয়ে স্টেশনে ফিরে আসেন।’
এত উঁচু পাহাড়ে চাগোলা ফাঁড়ি স্টেশনের সেনা ও কর্মীরা প্রতিবার টহল দেওয়ার পর কমবেশি আহত হন। তাদের হাত ও মুখ থেকে রক্তপাতও হয়।
এখানে কাজটি সম্পন্ন করা কেবল শারীরিক শক্তির ব্যাপার নয়, ইচ্ছার ওপরও নির্ভর করে। দাই স্যিং ছাও এভাবে বলেন। প্রতিদিন টহল প্রায় চার ঘন্টার। কোনো কোনো সময় পুরো একদিনই টহল দিতে হয়।
২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি ছিল তার বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর প্রথম বসন্ত উত্সব। তিনি অন্যান্য সেনা ও কর্মীদের সঙ্গে চোগোলায় প্রথম বসন্ত উত্সব কাটান। ‘আমরা একসঙ্গে রান্না করেছি, আমার নেতা আমাকে উপহার দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি ছিলাম’, দাই স্যিং ছাও বলেন।
এবার বসন্ত উত্সব তিনি বাবা-মার সঙ্গে কাটাননি। কিন্তু তাতে তার দুঃখ নেই। কারণ তিনি জানেন তাকেই মাতৃভূমির সীমান্ত অঞ্চল সুরক্ষা করতে হবে।
দাই স্যিং ছাও একজন সেনা। আর তাই তিনি তাঁর বাবা-মা’র গর্ব ও ছোট ভাইয়ের আদর্শ। বড় ভাইয়ের প্রভাবে ছোট ভাই দাই স্যিং গাং তিব্বতে গিয়ে সীমান্তরক্ষা বাহিনীতে যোগ দেন।
গত সেপ্টেম্বরে দাই স্যিং গাং লাসায় প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। বাড়ির দু’জন সন্তান বাহিনীতে যোগ দেন। এর জন্য তাঁদের বাবা-মা অনেক গর্ব করেন।
‘আমার ছোট ভাই বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর অনেক বদলে গেছে। সে পরিবারের সদস্যদের আরও বেশি যত্ন নেয় এখন’, দাই স্যিং ছাও বলেন।