রোববারের আলাপন-201115
2020-11-13 16:38:41

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আলিম এবং শিয়েনান আকাশ।

সম্প্রতি একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় যে, ৭ বছর বসয়ী একটি বাচ্চা মেয়ে—যার বাম পা অকেজো—অসাধারণ দক্ষতায় নাচছে! একটা ছোট বাচ্চা মেয়ের আশা ও আনন্দ অনেক নেটিজেনকে উৎসাহিত করেছে, করেছে মুগ্ধ। বড় ভাই, আমরা আজকে এ মেয়ের গল্প আমাদের শ্রোতাদের সাথে শেয়ার করব, কেমন?

ছোট মেয়ের নাম হচ্ছে চুন সি, তার জম্মস্থান হচ্ছে সান তোং প্রদেশের থাই আন শহর। সে এ বছর মাত্র ৭ বছরে পা দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়েটি খুবই অসাধারণভাবে দ্রুতলয়ে ও আনন্দের সঙ্গে নাচ করছে। ক্যামেরার সামনে তার নাচ ও আনন্দ দেখে অনেকে মুগ্ধ হয়েছেন। তবে, মেয়েটি অসুস্থ। তার বাম পা ছোট হয়ে গেছে ও বাম পায়ের আঙ্গুলগুলো ডিফর্মড হয়ে গেছে। তারপরও সে প্রতিদিন নাচ করে। সে বলল, “নাচ করতে আমার ভাল লাগে। নাচ করলে আমার পা শক্তিশালী হয়। নাচলে আমার পা আর ছোট হবে না। ” 
গত বছরের এপ্রিল মাসে, গ্রামের খোলা মাঠে অনেক প্রবীণের সঙ্গে প্রথম নাচে মেয়েটি। মেয়ের নানি অবিষ্কার করেন যে, তার নাতনির নাচের প্রতিভা আছে। তিনি তার নাতনির নাচ মোবাইলে রেডর্ক করেন ও অনলাইনে ছেড়ে দেন। মেয়েটি দ্রুতলয়ে নাচতে পারে। নানি বলেন, “চুন সি নাচে দক্ষ। সে কোনো নাচ মাত্র একবার দেখেই করতে পারে।”

ইন্টারনেটে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত হওয়ার পর, চুন সি প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি করে live করে। পর্যায়ক্রমে তার ফ্যানের সংখ্যা মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। অনেক ফ্যান মেয়েটিকে উপহার পাঠায়।

মেয়ের বয়স যখন মাত্র ২ বছর, তখন তার বাম পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। তার পিতামাতা তাকে নিয়ে অনেক হাসপাতাল গিয়েছেন, চিকিৎসা করিয়েছেন। মেয়ের যখন ৫ বছর বয়স, তখন তাঁর রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন। তার বুঝতে পারেন যে, মেয়েটি lupus panniculitis নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মেয়েটির রোগ নিয়ে কথা বলতে চান না তার নানী; তিনি কষ্ট পান।  তিনি বলেন, ‘তার রোগ এখন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। যদি এ রোগ কিডনিতে আক্রমণ করে, তাহলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে।’ 

মেয়েকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য পরিবার ইতোমধ্যে দুই লক্ষাধিক ইউয়ান ব্যয় করেছে। তার পিতামাতা নতুন বাড়ি বিক্রি করেছেন। তারা টাকা উপার্জনের জন্য সান তোং প্রদেশের ওয়েই হাইতে চাকরি করেন। মাত্র বসন্ত উৎসবের সময় দেশের বাড়িতে আসতে পারেন মেয়েকে দেখতে।  
নিজের রোগের চিকিৎসা খুবই কঠিন, অনেক টাকা লাগে—এটা মেয়ে ভালো করেই বোঝে। হয়ত সে জানে একদিন তাকে দুনিয়া থেকে চলে যেতে হবে। এজন্য মেয়ে নানির ক্যামেরার সামনে নাচে ও সেই নাচ ইন্টারনেটে আপলোড করতে দেয়। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় কোনোকিছুই তাকে নাচ থেকে বিরত রাথতে পারে না। প্রতিদিন সে নাচে ও সেই নাচ রেকর্ড করে। কারণ, সে নানির জন্য কিছু স্মৃতি রেখে যেতে চায়।  মেয়ে নানিকে বলে: “ভবিষ্যতে যখন আমি থাকবো না, তখন তুমি এই ভিডিওগুলো দেখো।” 

সাংবাদিক মেয়েকে প্রশ্ন করেন: “ভবিষ্যতে তুমি কী করতে চাও?তোমার স্বপ্ন কী?” মেয়ে জবাবে বলল, “বড় হওয়ার পর আমি কিছু টাকা উপার্জন করতে চাই এবং তা দিয়ে মানুষকে সাহায্য করতে চাই। কারণ, তারা সবাই আমাকে সাহায্য করছে।” 

মেয়ের ভিডিওগুলো দেখার পর, নিটিজেনরা মেয়ের সুস্থতা কামনা করেছে ও মেয়েকে উৎসাহিত করেছে। “যদি স্বপ্ন থাকে, তবে মিরাকল ঘটা সম্ভব” “বেবি, তুমি বিস্ময়কর, তুমি ফাটাফাটি!”, ইত্যাদি মন্তব্য করেন তারা।

বড় ভাই, আমি গল্প শুনে অনেক মুগ্ধ, অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়েছি, পাশাপাশি মনে কষ্টও পেয়েছি। আমি মেয়েটির শুভ কামনা করি। আশা করি মেয়েটি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।