তৃতীয় প্যারিস শান্তি ফোরামে সি চিন পিংয়ের ডিভিও-ভাষণ ও প্রসঙ্গকথা
2020-11-13 15:22:25

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (বৃহস্পতিবার) তৃতীয় প্যারিস শান্তি ফোরামে ‘একসাথে মহামারি মোকাবিলা করা, পুনরুদ্ধার এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও শান্তি অনুসন্ধান করা’ শিরোনামে এক ভিডিও-ভাষণ দিয়েছেন।

ভাষণে সি চিন পিং বলেন, বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি দ্রুত ও গভীরভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা-হুমকি বাড়ছে; আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা বাড়ছে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সারা বিশ্বের প্রচেষ্টা দরকার।

তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ থেকে একে অপরকে সাহায্য করতে হবে, একসাথে মহামারি মোকাবিলা করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি এখনও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ ও জীবনকে প্রথম স্থানে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে; ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি বলেন (রে)

“চীন অব্যাহতভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মহামরি প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা ও চিকিত্সার প্রযুক্তি ভাগাভাগি করতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিত্সা ও প্রতিরোধক সামগ্রী সরবরাহ করতে ইচ্ছুক। চীন কোভিড-১৯ টিকাকে বিশ্ব গণস্বাস্থ্য পণ্য হিসেবে ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি পালন করবে। আন্তর্জাতিক সমাজ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় দক্ষতা জোরদার করতে হবে এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের স্বাস্থ্য কমিউনিটি গড়ে তুলতে হবে।”

 

তিনি বলেন, সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধার করতে হবে। চীন উন্নয়নের নতুন ধারণা অনুসরণ করে উন্নয়নের নতুন পরিস্থিতি গড়ে তুলবে এবং উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাবে। চীন সংস্কার গভীর করবে, উন্মুক্তকরণ প্রসারিত করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশ্ব শিল্প চেইন, সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে। চীন উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তুলবে। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য জি-টোয়েন্টির ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মেনে চলবে চীন এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন

(রে)

“চীনের অবদান বাড়ানোর প্রস্তাব দেই আমি। চীনে ২০৩০ সালের আগে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন শীর্ষে পৌঁছাবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বননিরপেক্ষ উন্নয়ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাবে চীন। ইউরোপ ও ফ্রান্সের সঙ্গে ২০২১ সালে যথাক্রমে জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতি সংরক্ষণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করবে চীন এবং এ সুযোগে সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা জোরদার করবে দু’পক্ষ।”

সি চিন পিং বলেন, ন্যায়বিচারে অবিচল থেকে শান্তি রক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন পক্ষের উচিত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা, পরস্পরের উন্নয়নের অধিকার ও নিজের উন্নয়নের পদ্ধতিকে সম্মান করা। একতরফাবাদ, আধিপত্যবাদী শক্তির রাজনীতি, বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরোধিতা করতে হবে এবং বহুপক্ষবাদে অবিচল থাকতে হবে। বিশ্বের ন্যায্যতা, নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষা করা জরুরি। তিনি জোর দিয়ে বলেন (রে)

“চীন স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে থাকে এবং দৃঢ়ভাবে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে চলে। আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতি রক্ষার জন্য সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানায় চীন। বাস্তবতা অনুযায়ী, পক্ষপাতিত্ব ও বৈরিতা ছেড়ে, নিজের অবস্থান ঠিক করতে হবে। চীন ও ফ্রান্স জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদেশ। ফ্রান্সসহ নানা দেশের সঙ্গে বিনিময় ও সমন্বয় জোরদার করতে এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক চীন। বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় নিজের অবদান রাখবে চীন।”

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, শান্তি ও উন্নয়ন এ যুগের প্রধান বিষয় এবং অপ্রতিরোধ্য প্রবণতা। মানবজাতি অভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্মুখীণ। এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশের উচিত বিচ্ছিন্ন না-হয়ে ঐক্য জোরদার করা, সংঘাত সৃষ্টির পরিবর্তে সহযোগিতা বাড়ানো। একসাথে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করতে হবে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করতে হবে। (শিশির/আলিম/রুবি)