চীনে ডাবল ইলেভেনে কেনাকাটা: আমাদিকৃত পণ্যের বিক্রয় বেড়েছে
2020-11-12 14:50:24

নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে চীনের অর্থনীতি। ইতোমধ্যেই দেশে অভ্যন্তরীণ বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন ধারণা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বাজার হবে মূল কেন্দ্র। এমনি এক প্রেক্ষাপটে এবার ডাবল ইলেভেন আসে। এদিন চীনারা প্রচুর কেনাকাটা করেন। কারণ, এসময় জিনিসপত্রের দাম কমানো হয়। চলতি বছরের ডাবল ইলেভেন অনলাইন কেনাকাটা দিবসে বিদেশি পণ্যের বিক্রি অনেক বেড়েছে।

মার্কিন ব্লুমবার্গ নিউজ এজেন্সি চীনের ডাবল ইলেভেন অনলাইন কেনাকাটা দিবসকে বিশ্বের বৃহত্তম কেনাকাটা কার্মকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছে। চলতি বছরের ডাবল ইলেভেন অনলাইন কেনাকাটা দিবসে ২৫ হাজার বিদেশি দোকান টিমলের প্রমোশন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। ২৬০০টির বেশি নতুন ব্রান্ড ও ১২ লাখ নতুন আমদানিকৃত পণ্য প্রথমবারের মতো টিমল ডাবল ইলেভেন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ থেকে ১১ নভেম্বর দুপুর ১২ টা পর্যন্ত টিমল  প্ল্যাটফর্ম আমাদিনকৃত পণ্যের বিক্রয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৭.৩ শতাংশ বেশি ছিল। এর মধ্যে ১৮০টি বিদেশি ব্রান্ডের বিক্রির পরিমাণ ১ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়েছে। ৮১০টি বিদেশি ব্রান্ডের বিক্রির পরিমাণ ১০ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়েছে। টিমলের একজম কর্মকর্তা বলেন: “আমরা আবিষ্কার করেছি যে, রুয়ান্ডার কফি, চেক প্রজাতন্ত্রের গ্লাস ও দুবাইর উটের দুধের মতো বিদেশি পণ্য চীনা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। বিশ্বে ৩০ হাজার ব্রান্ড আলিবাবার প্ল্যাটফর্মে অনলাইন দোকান খুলেছে। তারা একদিকে টিমল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনা ভোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, অন্যদিকে দোকানের ৬০০০ ধরনের পণ্য চীনা অর্থনীতি ও চীনা নির্মাণের নতুন বৃদ্ধি পয়েন্ট সৃষ্টি করে।

চলতি বছরে চীনের আমাদিকৃত পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় অনলাইনে হচ্ছে।  চীনা ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্মও বেশি বেশি বিদেশি পণ্য চীনে নিয়ে এসেছে।

চিং তুং প্ল্যাটফর্মের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডাবল ইলেভেন উত্সব চলাকালে ১০০টি দেশ ও অঞ্চলের ৫ লাখের বেশি পণ্য চিং তুং প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হয়। বিশ্বের ১০টি বিলাসবহুল ব্র্যান্ড  ডাবল ইলেভেনের সময়ে নিজ নিজ সর্বশেষ পণ্য প্রকাশ করে।

বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন কেনাকাটা কর্মকাণ্ড হিসেবে চলতি বছরের ডাবল ইলেভেন কেনাকাটা উত্সবের সময়ও বেড়েছে। ১ থেকে ৩ নভেম্বর ছিল প্রথম দফা উত্সব এবং ১১ নভেম্বর ছিল দ্বিতীয় দফার উত্সব। এতে, একদিকে কোম্পানিগুলো আরও বেশি পণ্য বিক্রির সুযোগ পেয়েছে, অন্যদিকে ভোক্তারাও আরও বেশি সময় পেয়েছে পছন্দের পণ্য বাছাই করতে।

পাশাপাশি নানান এক্সপ্রেস কোম্পানিও ব্যক্তি, প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম বিনিয়োগ করে ডাবল ইলেভেন উত্সবের সময়ে লজিস্টিক সেবা নিশ্চিত করেছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, আলিবাবার অধীনে লজিস্টিক কোম্পানি চাই চিয়াও ডাবল ইলেভেন সময়ে ৪০০০টি বিশেষ বিমান ও মালবাহী জাহাজে বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য চীনে নিয়ে আসে। এ প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী ৩০ লাখের বেশি মানুষ গুদাম ও বন্দরে লজিস্টিকসংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত থাকে। পাশাপাশি, ৪০ লাখের বেশি প্যাকেজ চীন-ইউরোপ রেলপথের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন অধিবেশন থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ হ্রাস পায়। তবে চীনের রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

চীনা জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনে অনলাইনে খুচরা বিক্রির পরিমাণ ৮ ট্রিলিয়ান ইউয়ান ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৭ শতাংশ বেশি।

বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ডাবল ইলেভেন থেকে দেখা যায়, চীনাদের ভোগের ক্ষেত্রে নতুন প্রবণতা এবং এটা চীনা অর্থনীতির নতুন উন্নয়ন প্যাটার্নে শক্তি যোগাবে। (শিশির/আলিম/রুবি)