গত ৮ সেপ্টেম্বর চীনে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান বেইজিংয়ের গণ-মহাভবনে জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় মর্যাদাপূর্ণ পদক অর্জনকারীদের পদক প্রদান করেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি’র) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, দেশের প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণও দেন প্রেসিডেন্ট সি।
মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থাত্ এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন প্রাথমিকভাবে মহামারীর বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে এক মাসের কিছু বেশি সময় নিয়েছে। পাশাপাশি, এই ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত দৈনিক রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রায় ২ মাস সময় লেগেছে। উল্লেখ্য, উহান শহর ও হুপেই প্রদেশে ভাইরাস প্রতিরোধে মাত্র তিন মাস সময় লেগেছিল।
প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেছেন, চীন মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার নেতৃত্বের উল্লেখযোগ্য সুবিধা ফুটে উঠেছে এবং চীনের জনগণ এবং চীনা জাতির বিশাল শক্তি প্রতিফলিত হয়েছে। পাশাপাশি, এর মাধ্যমে চীনা সভ্যতার গভীরতা ও একটি দায়িত্বশীল বড় রাষ্ট্রের দায়িত্ব ফুটে উঠেছে। এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর, চীন যথাযথভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলকে প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়েছে, নভেল করোনভাইরাসের জিনের গঠন এবং অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি, দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিত্সার পরিকল্পনা এবং প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি, মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বহু দেশ, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সঙ্গে চীনের ৭০টিরও বেশি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে, মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অনলাইন জ্ঞানকেন্দ্র চালু করে চীন এবং এটি সব দেশের জন্য উন্মুক্ত করে চীন। এভাবেই বিভিন্ন পক্ষের সাথে ভাইরাস মোকাবিলা ও চিকিত্সার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছে বেইজিং। তা ছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দুই দফার ৫ কোটি মার্কিন ডলার নগদ সহায়তা প্রদান করেছে, ৩২টি দেশে ৩৪টি চিকিত্সা বিশেষজ্ঞদল পাঠিয়েছে, ১৫০টি দেশ ও ৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২৮৩ ব্যাচ অ্যান্টি-মহামারী সামগ্রী পাঠিয়েছে এবং ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে মহামারী প্রতিরোধক পণ্য সরবরাহ করেছে চীন। এই ধারাবাহিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকে মহামারীর বিরুদ্ধে বিশ্বের লড়াইয়ে চীনের অবদান ফুটে ওঠে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের সিনিয়র উপদেষ্টা ব্রুস অলওয়ার্ড মহামারী সংক্রান্ত নিয়মিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মহামারীর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে চীনের অবদানের প্রশংসা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনটি বিষয় ছিল যা তাকে খুব উত্সাহিত করেছিল। প্রথমটি হল- জনস্বাস্থ্য অবকাঠামোতে চীনের অবদান, যা জাতীয় স্তর থেকে প্রদেশ ও শহরগুলোর সব স্তরের কমিউনিটিতে তথ্য ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির সুযোগ করে দেয়। বিশেষত আশ্চর্যের বিষয় হল- চীন প্রতি সপ্তাহে তার জাতীয় নির্দেশিকাগুলো আপডেট করতে পারে, যাতে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ ভাইরাসের সর্বশেষ তথ্য পায়। দ্বিতীয় বিষয়টি হল- চীনা জনগণের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা বোধ। তিন সপ্তাহের মধ্যেই হোটেল বা ট্রেন হোক না কেন, চীনা জনগণ বিভিন্ন স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছে। সমষ্টিগত এই দায়িত্ববোধটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ব্রিটিশ পণ্ডিত ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কার্লোস মার্টিন উল্লেখ করেন, এই মহামারী সত্যই অসাধারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, মহামারী নিয়ন্ত্রণে চীন সবচেয়ে দক্ষ ও কার্যকর দেশ। চীন সরকার ও সমাজ সবার প্রাণ রক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এটি চীনের প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল্যায়ন।
(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)