বেইজিং-থিয়ানচিন-হ্যপেই সমন্বিত উন্নয়নের পাথফাইন্ডার
2020-11-11 09:11:05

বেইজিং-থিয়ানচিন-হ্যপেই সমন্বিত উন্নয়নের পাথফাইন্ডার

বেইজিংয়ের অ-রাজধানী ফাংশন স্থানান্তর করা হল বেইজিং, থিয়ান চিন শহর ও হ্য পেই প্রদেশের সমন্বিত উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। গেল ৬ বছরে, ১০ হাজারের বেশি কোম্পানি ও সংস্থা বেইজিং থেকে হ্যপেই প্রদেশে স্থানান্তরিত হয়েছে।

অনেক মানুষ বেইজিং ছেড়ে নতুন একটি জায়গায় এসে স্বপ্ন অনুসন্ধান করছেন। ২০২০ হল বেইজিং-থিয়ানচিন-হ্যপেই সমন্বিত উন্নয়নের মাঝারি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের শেষ বছর। আমরা আজ যারা প্রথমে বেইজিং ছেড়ে হ্য পেই ও থিয়ান চিন শহরে গেছেন তাদের গল্প শুনাব।

হ্য পেই প্রদেশের চাং চৌ শহরে একটি আধুনিক বায়োমেডিসিন শিল্প পার্ক নির্মিত হয়েছে। বেইজিং থেকে আসা বায়োমেডিসিন কোম্পানির অধিকাংশ এখানে স্থানান্তর করা হয়। এ পর্যন্ত স্বাক্ষরিত প্রকল্প ৯৭টির বেশি।

চি ওয়ে ওয়ে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপক। তার কোম্পানি প্রথম কোম্পানিগুলোর অন্যতম যেগুলো এ শিল্প পার্কে এসে উত্পাদন শুরু করে। তিনি জানান, ৫ বছর  আগে যখন তারা প্রথমে এখানে আসেন, তখন এখানে চারপাশে ছিল বর্জ্যভূমি। তবে এখন সবখানে কারখানা গড়ে উঠেছে। বেইজিংয়ে তার কারখানা ছিল ৩০ মু ভূমিজুড়ে। আর এখন কারখানা গড়ে উঠেছে ১০০ মু এলাকাজুড়ে। কর্মীর সংখ্যাও ৭০ থেকে ১২০ জনে উন্নীত হয়েছে। কোম্পানির বার্ষিক উত্পাদনও বেড়েছে।

তিন বছর আগে, ফাং সুয়ান খবরে দেখেন হ্য পেই প্রদেশের তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে সিং আন এলাকা। তিনি সাপ্তাহিক ছুটিতে কয়েক বার বেইজিং থেকে সিং আন এলাকা পরিদর্শন করতে যান। তিনি বলেন, নতুন এলাকায় রয়েছে নানান সুযোগ এবং তিনি এখানকার উন্নয়ন-কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে চান। ২০১৭ সালের শেষ দিকে, ফাং সুয়ান পদত্যাগ করে বেইজিং থেকে সিং আন এলাকায় আসেন। তিনি আবিষ্কার করেন, খাবার সময় ছাড়া এখানে চারপাশে কোনো আড্ডা দেবার জায়গা নেই। তাই তিনি একটি কফির দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে, স্থানীয় মানুষ তার কফির দোকানে এসে রুটি আছে কি না জানতে চাইত। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করত ইনস্ট্যান্ট কফি খেতে মাত্র আড়াই ইউয়ান লাগে, সেই তুলনায় তার দোকানের কফির দাম বেশি। এখন দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা তার দোকানে আসেন, কফি খেতে খেতে আলাপ করেন। তিনি সিং আন এলাকায় নিয়ে এসেছেন আধুনিক জীবনরীতি।

পাও তিং শহরে জুং কুয়ান ছুন নবায়ন কেন্দ্র, ২০১৫ সালে বেইজিংয়ের বাইরে জুং কুয়ান ছুন প্রতিষ্ঠিত প্রথম নবায়ন কেন্দ্র। কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, শুরুতে চাপ ও প্রত্যাশার কারণে তিনি বেইজিং ও পাও তিং শহরের মধ্যে বার বার আসা-যাওয়া করতেন। শুরুতে নবায়ন কেন্দ্রের পাশের প্রায় সব হোটেলে তিনি রাত্রিযাপন করেছেন। ধাপে ধাপে অনেক কোম্পানি এ কেন্দ্রে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। তবে তিনি দ্রুত ভবনের সব অফিস ভাড়া দিতে চান না। কারণ তিনি জানেন, ভাড়ার মাধ্যমে অর্থ অর্জন করা এ কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য নয়। এ ভূমিতে নবায়নের ব্যবস্থা গড়ে তোলা আরও গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনি ও তার দল একটি মানদন্ড তৈরি করেন। উচ্চ-প্রযুক্তি কোম্পানি না হলে তাদের এ কেন্দ্রে নিয়োগ করা হবে না। এখন ৩৭১টি কোম্পানি এ কেন্দ্রে যোগ দিয়েছে এবং এর মধ্যে অর্ধেক কোম্পানি বেইজিংয়ের।

হুয়াং পেং ছেং পোশাক দোকানের মালিক। হ্য পেই প্রদেশের লাং ফাং শহরের ইউন শাং নামের ব্যবসা এলাকায় একটি দোকান খোলেন তিনি। ২০০৫ সালে ২৫ বছর বয়সী হুয়াং পেং ছেং বেইজিংয়ে আসেন এবং বেইজিং তা হং মেন পোশাক পাইকারী বাজারে ব্যবসা শুরু করেন। বেইজিং-থিয়ানচিন-হ্যপেই সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প চালু হবার পর বেইজিংয়ের পাইকারী বাজার পর্যায়ক্রমে হ্য পেই প্রদেশে স্থানান্তর করা হয়। এখন পর্যন্ত তা হং মেন পাইকারী বাজারের ৩৮০০ জন ব্যবসায়ী ইউন শাং ব্যবসা এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। হুয়াং পেং ছেং বলেন, ৪০ জন নিয়ে গঠিত নকশা দল এখনও বেইজিংয়ে আছেন এবং প্রতি প্রান্তিকে তারা ২০০টির বেশি ধরনের নতুন পোশাক বাজারে উপহার দেন। ইউন শাং ব্যবসা এলাকা ছাড়া, বেইজিংয়ের পাইকারী বাজারের ব্যবসায়ীরাও ছাং চৌ শহরের মিং চু বাণিজ্যিক এলাকায় স্থানান্তরিত হন। একজন ব্যবসায়ী বলেন, ২০১৭ সালে তিনি বেইজিং থেকে এখানে আসেন এবং তার ব্যবসা দিন দিন ভাল হয়ে উঠছে। আগে বেইজিংয়ে তার বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬০ লাখ ইউয়ান এবং এখন তা আরও বেড়েছে। ছাং চৌ শহরে তার একটি কারখানাও চালু হয়েছে। এ কারখানা যেখানে আছে সেখানে ৫০০টির বেশি বেইজিংয়ের পোশাক প্রসেসিং কোম্পানি যোগ দিয়েছে।

 একটি ছিপাও পোশাক তৈরি কারখানার মালিক জানিয়েছেন, বেইজিংয়ে নীতির কারণে তারা কয়েক বারের মতো বেইজিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় কারখানা স্থানান্তর করেছেন। এখন হ্য পেই প্রদেশে এসেছেন; আর স্থানান্তর করার দরকার নেই। আগে চিন্তিত ছিলেন, এখন চিন্তা দূর হয়েছে।

বেইজিং-থিয়ানচিন-হ্যপেই সমন্বিত উন্নয়নের পাথফাইন্ডার

বেইজিংয়ের থুং চৌ এলাকা থেকে একটি নদী অতিক্রম করলে হ্য পেই প্রদেশের  ইয়ান তা হাসপাতালে যাওয়া যায়। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ ভাল, সরঞ্জাম উন্নত, রোগী কম। তবে মানুষ না আসলে হাসপাতালের ব্যবসাও চলবে না। একসময় এ হাসপাতাল টিভি নাটকের শুটিং সেট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরে বেইজিং চাও ইয়াং হাসপাতালের চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ দল এখানে আসেন এবং ইয়ান তা হাসপাতালের পরিস্থিতিও বদলে যায়। ডাক্তার লু ছাং লিন এখানে আসা প্রথম দলের বিশেষজ্ঞদের অন্যতম। তিনি হার্ট বিভাগের উপ-পরিচালক এবং ইয়ান তা হাসপাতালে আসার পর তার প্রথম কাজ হল ডাক্তার ও রোগীর সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করা। তার ব্যাজে লেখা আছে দুটি হাসপাতালের নাম। তিনি প্রথমে রোগীদেরকে নিজের ব্যাজ দেখান এবং তাদেরকে জানান, তিনি বেইজিং থেকে আসা ডাক্তার। এতে রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। ইয়ান তা হাসপাতালে চালু হয়েছে ক্রস অঞ্চল চিকিত্সা বীমা লেনদেন ব্যবস্থা। তার মানে হ্য পেই, থিয়ান চিন ও বেইজিং—যে কোনো একটি জায়গায় আপনি চিকিত্সাবীমায় যোগ দিলে এ হাসপাতালে বিমার আওতায় চিকিত্সা করাতে পারবেন। পাশাপাশি, ইয়ান তা হাসপাতালও হ্য পেই প্রদেশের প্রথম বেসরকারি থ্রি-এ পর্যায়ের হাসপাতাল।

২০১৮ সালের মার্চ মাসে বেইজিং হাই তিয়ান জুং কুয়ান ছুন তৃতীয় প্রাথমিক স্কুলের সিং আন শাখা চালু হয়। ফেং সিয়াও ইয়ু প্রথম দলের শিক্ষক হিসেবে বেইজিং থেকে সিং আন এলাকায় আসেন। একবার, বেইজিং সদর দফতরের শিক্ষার্থীরা সিং আন শাখা স্কুলে এসে মডেল বিমান উড়ানোর প্রদর্শনী আয়োজন করে। সিং আন শাখা স্কুলের শিশুরা প্রথম বারের মতো এমন প্রদর্শনী দেখে উল্লসিত হয়ে ওঠে। ফেং সিয়াও ইয়ু এ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, তিনি মাইক্রোফোন ছাত্রছাত্রীদের হাতে দিয়ে তাদেরকে নিজেদের মনের কথা বলতে বলেন। সবাই মাইক্রোফোন দেখে ভায় পায়। তারা হৃদয়ের কথা প্রকাশে অভ্যস্ত নয়। তখন তিনি একটি সিদ্ধান্ত নেন। শিশুদেরকে আরও নতুন ও আধুনিক জিনিস দেখাবেন। তিনি আশা করেন, তার ছাত্রছাত্রীরা যে কোনো একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারবে একদিন।

ফেং সিয়াও ইয়ু স্কুলে প্রতিষ্ঠা করেন কোরাস দল, নাচ দল এবং আয়োজন করেন নৃত্য ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের দৃষ্টিপথ ও মন খুলে যায়। দু’বছরের মেয়াদ শেষ হবার পর ফেং সিয়াও ইয়ু মেয়াদ বাড়ানের আবেদন করেন। তিনি মনে করেন, তার অনেক লক্ষ্য পূরণ হয়নি এবং তিনি এখানে অব্যাহতভাবে কাজ করবেন এবং শিশুদের মনে আশা ও নতুন ধারণা যোগাবেন। (শিশির/আলিম/রুবি)