তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের ভোগ বাজার সবার আগে পুনরুদ্ধার হয়েছে। এবারের আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার বিদেশি অংশগ্রহণকারীও চীনা ভোগ বাজারের সুপ্ত শক্তি দেখে চীনা ভোক্তাদের চাহিদা উন্নয়ন ও নতুন প্রবণতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এ মেলায় তারা বিশ্বের প্রথমবার প্রকাশিত পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন।
এবারের আমদানি মেলার নানা প্রদর্শনী এলাকায় অনলাইন লাইভ অনুষ্ঠান দেখা যায়। উপস্থাপকরা অনলাইন লাইভের মাধ্যমে ভোক্তাদের আমদানিকৃত পণ্য প্রদর্শন করেছেন।
ফ্রান্সের কসমেটিক্স কোম্পানি ল'রিয়েল মেলা চলাকালে দশ বারোটি লাইভ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ল'রিয়েল চীনা কোম্পানি প্রচারণা বিভাগের ম্যানেজার ছেন চিয়াং ছি বলেন, মেলা শুরু হবার আগে ল'রিয়েল লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্য বিক্রিসহ চীনে নতুন ভোগের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। বিশেষ করে, মহামারির সময় অনলাইনে বিক্রি করা চীনে বিক্রি বাড়ানোর মূল পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, মহামারির কারণে আমরা দেখেছি কাছাকাছি না এসেই ডিজিটাল অঙ্গনে কেনাকাটার পদ্ধতির প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা অনেক বেড়েছে। আমাদের কোম্পানিও অনেক আগে থেকেই অনলাইন ও অফলাইন- দু’ভাবেই পণ্য বিক্রি শুরু করে। তাই আমাদের কোম্পানি মহামারি সময়ে সংকট মোকাবিলা করতে পেরেছে এবং বিক্রির প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়ন করেছে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের খুচরা ভোগ্যপণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৭ ট্রিলিয়ন ৩৩২ বিলিয়ন ৪০০ মিলিয়ন ইউয়ান। এর মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকে খুচরা ভোগ্যপণ্য বিক্রির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। যা চলতি বছর প্রথম প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়ন করে। বিশ্বব্যাপী মহামারির আঘাত থেকে চীনা ভোগ বাজার সবার আগে পুনরুদ্ধার হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিও চীনে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।
বিএসএইচ গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি কোম্পানির ‘রান্নাঘর-সংক্রান্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বিভাগের’ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফ জায়েগার বলেন, এ বছরের শুরুতে অবস্থা বেশ কঠিন ছিল। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি বিপুলভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে চীনে মহামারি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং অর্থনীতি লক্ষ্যণীয়ভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। এজন্য চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে আমাদের ব্যবসা আগের বছরের তুলনায়ও ভাল হয়েছে। চলতি বছর চীনে আমাদের ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা বিশ্বাস করি চীনে আমরা টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে পারব।
চলতি বছর হঠাত্ করে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব শুরু হয় এবং চীনা মানুষের স্বাস্থ্য খাতে তা গুরুতর আঘাত হানে। এবারের আমদানি মেলায় স্মার্ট জীবনযাপন ও গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি-সংক্রান্ত পণ্যের কোম্পানিও এ নতুন ভোগের প্রবণতা অনুসারে জীবাণুমুক্ত ও পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দেয় এবং স্বাস্থ্যকর জীবন সম্পর্কে মানুষের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করে।
পাশাপাশি মহামারির সময় ‘গৃহ ফিটনেস’-সংক্রান্ত বিষয়াদি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিদেশের ক্রীড়া কোম্পানিও চীনা বাজারে নতুন ব্যবসার সুযোগ খুঁজে পায়। ফ্রান্সের ক্রীড়া ব্র্যান্ড ডিক্যাথলনের চীনা ম্যানেজার চু ই লিং বলেন, মহামারির পর আমরা লক্ষ্য করেছি যে, মানুষের শরীরচর্চার অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। তারা সহজে বহনযোগ্য সরঞ্জাম বেশি পছন্দ করছেন। আমরাও মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সে ধরনের পণ্য তৈরি করছি।
এবারের আমদানি মেলায়, বিদেশি কোম্পানিগুলো চীন, এশিয়া এমনকি বিশ্বে প্রথম প্রকাশিত নানা পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে। পাশাপাশি, চীনা বাজারের জন্য বিশেষ গবেষণার মাধ্যমে তৈরি পণ্যও নিয়ে এসেছেন তারা। তারা জানান, চীনের বাজারের ওপর তাদের আস্থা আছে এবং তারা চীনে তাদের বিনিয়োগ আরও বাড়াবে।
(শিশির/তৌহিদ/রুবি)