৩য় চীন আন্তর্জাতিক আমদানিমেলা চীনের উন্মুক্তকরণ ও মহামারি প্রতিরোধের সফলতার প্রমাণ
2020-11-06 17:16:31

গত বুধবার সন্ধ্যায় শাংহাইয়ে তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা শুরু হয়। এবারের মেলার আয়তন গতবারের চেয়ে ৩০ হাজার বর্গমিটার বাড়ানো হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারির প্রেক্ষাপটে এই মেলা চীনের অর্থনীতির বলিষ্ঠতা প্রমাণ করেছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন প্রাণশক্তি যুগিয়েছে। পাশাপাশি, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। বিভিন্ন তথ্যে দেখা গেছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্থবিরতা বাড়লেও চীনের অর্থনীতিতে বিদেশি পুঁজির প্রবাহ বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সার্বিক দৃষ্টিতে প্রাথমিক পর্যায়ে মহামারি প্রতিরোধে চীনের যে কঠোর ভূমিকা ছিল- তা আজ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। প্রিয় শ্রোতা, এ সম্পর্কে বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

গত বুধবার সন্ধ্যায় শাংহাইয়ে তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা শুরু হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এতে অনলাইন মূল ভিডিও-ভাষণে বলেন, চীন কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সময়মতো এ বিশ্ব-মেলা আয়োজন করেছে। এতে বিশ্বের সঙ্গে সুযোগ ভাগাভাগি এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেছেন, সময়মতো চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা আয়োজন করে বিশ্বের সঙ্গে সুযোগ ভাগাভাগি এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে চায় চীন। চীনের বাজার বিশ্বের বাজার, ভাগাভাগির বাজার ও সবার বাজারে পরিণত হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

 

এসব কথার মাধ্যমে অর্থনীতির বিশ্বায়ন এগিয়ে নেওয়া এবং উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তুলতে চীনের আন্তরিক আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়। পাশাপাশি, কোভিড-১৯ মহামারীর  গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি বড় রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল মনোভাবও ফুটে উঠেছে। বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতিতে বৃহত্ এ মেলা আয়োজন বেশ কঠিন কাজ ছিল।

 

এদিকে, আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা উপলক্ষ্যে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় উন্নয়ন সংস্কার কমিটি ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ ৯টি বিভাগ ও ইউনিট ঘোষণা করেছে যে, চীনের শাংহাই, লিয়াওনিং ও চিয়াংসু-সহ মহানগর ও প্রদেশে আমদানি পণ্যের নব্যতাপ্রবর্তন-সংক্রান্ত ১০টি দৃষ্টান্তমূলক এলাকা স্থাপন করা হবে। এই ১০টি দৃষ্টান্তমূলক এলাকা চীনের পূর্ব, মধ্য-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে  চীনের আমদানি-শক্তি ও ভবিষ্যত্ সম্ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে তত্ত্বাবধান ব্যবস্থার নব্যতাপ্রবর্তন, সেবা বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি ও লেনদেনের নমনীয় রূপান্তরের আলোকে এসব দৃষ্টান্তমূলক আমদানি অঞ্চল স্থাপন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

আমদানি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ বিদেশ-সম্পর্কিত বৈধ ব্যবস্থা অব্যাহতভাবে আরও উন্নত করবে চীন; পাশাপাশি মেধাসত্ব রক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করা হবে, বিদেশি পুঁজির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা হবে। চীন আরও বেশি দেশের সঙ্গে উচ্চ মানের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে আগ্রহী। চীনে ডিজিটাল অর্থনীতি, ইন্টারনেট খাত জোরদার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুবিধার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্কার ও উদ্ভাবন গভীরতর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সময় অর্থাৎ ২০১৬ সাল-২০২০ সাল পর্যন্ত চীনে বিদেশি পুঁজির পরিমাণ ৬৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের পরিমাণ দ্বাদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার তুলনায় ১০০০ কোটি ডলার বেড়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল-২০২০ সাল পর্যন্ত চীনে বিদেশি পুঁজির প্রতিষ্ঠানগুলোর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার; যা দেশীয় রপ্তানির ৪১.৭ শতাংশ।

এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী দশ বছরে চীনে আমদানি করা পণ্যের অর্থমূল্য ২২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

 

চীনের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি, আর মধ্যম আয়ের মানুষ ৪০ কোটিরও বেশি। তাই, চীন হলো বিশ্বের বৃহত্তম সুপ্তশক্তির বড় বাজার। এ বাজারের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্রমশঃ আকৃষ্ট হচ্ছেন।

 

মোহাম্মদ তৌহিদ

বেইজিং।