শেষ হলো সিপিসি’র ঊনবিংশ কেন্দ্রীয় কমিটির পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন
2020-10-31 17:11:37

গত ২৬ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ঊনবিংশ কেন্দ্রীয় কমিটির পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিবেশনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর উত্থাপিত কর্মপ্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ ও ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য গ্রহণের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

এ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

সিপিসি’র ঊনবিংশ কেন্দ্রীয় কমিটির পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ২০৩৫ সালের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক চীন গঠনের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যকে সামনে রেখে আলোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক শক্তি, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি এবং সামগ্রিক জাতীয় শক্তি অনেক বাড়বে; অর্থনীতির আকার এবং নগর ও গ্রামীণ বাসিন্দাদের মাথাপিছু আয় একটি নতুন স্তরে পৌঁছাবে; একটি আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে; মূলত জাতীয় শাসনব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হবে ও তাতে জনগণ সমানভাবে অংশগ্রহণ করবে; একটি সাংস্কৃতিক শক্তিশালী দেশ, শিক্ষার শক্তিশালী দেশ, প্রতিভার শক্তিশালী দেশ, খেলাধুলার শক্তিশালী দেশ ও স্বাস্থ্যকর চীন নির্মাণ করা হবে; কার্বন নিঃসরণ সর্বোচ্চে পৌঁছানোর পর ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে; বাইরের বিশ্বে উন্মুক্তকরণের একটি নতুন প্যাটার্ন গঠন করা হবে; আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হবে; এবং মাথাপিছু জিডিপি মাঝারিভাবে উন্নত দেশগুলির পর্যায়ে উন্নীত করা হবে।

 

এ অধিবেশনে সবচেয়ে প্রবলভাবে নব্যতাপ্রবর্তনের পক্ষে সংকেত দেওয়া হয়েছে। এতে নব্যতাপ্রবর্তনকে এক অভূতপূর্ব নতুন উচ্চ পর্যায়ে রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়। সম্মেলনে বলা হয়, চীনে উচ্চমানের উন্নয়ন পর্যায়ের সূচনা হয়েছে এবং চীনের সার্বিক সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মান সার্বিকভাবে উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে পরবর্তী পাঁচ বছরে চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে: উচ্চমানের ভিত্তিতে অর্থনীতির টেকসই ও সুষ্ঠু উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা, আধুনিকায়নে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা, উচ্চমানের বাজার অর্থনীতিব্যবস্থা সম্পূর্ণ করা, পরিবেশ উন্নয়নে নতুন বিকাশ অর্জন ও জনজীবন নতুন পর্যায়ে উন্নীত করা।

 

সম্মেলনে প্রকাশিত এক ঘোষণায় বলা হয়, চীন উচ্চমানের উন্মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলবে, উন্মুক্তকরণের মান সার্বিকভাবে উন্নত করবে, অবাধ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাস্তবায়ন করবে, বাণিজ্যের নব্যতাপ্রবর্তন উন্নয়ন করবে, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে, এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিচালনা ব্যবস্থার সংস্কারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে। সম্মেলনের প্রস্তাবগুলো উপসংহার করে 'চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনায়' পরিণত হবে এবং তা চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসে পর্যালোচনা করে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হবে। এ পরিকল্পনা পরবর্তী পাঁচ বছরে চীনের উন্নয়নের দিক্‌নির্দেশনা হিসেবে কাজে লাগবে।

 

‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ গ্রহণের সময় চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের প্রধান লক্ষ্যগুলিকে সামনে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এতে বলা হয়: উন্নত গুণগত মান ও দক্ষতার ভিত্তিতে টেকসই ও স্বাস্থ্যকর অর্থনৈতিক বিকাশ অর্জন করতে হবে; একটি আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নির্মাণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে হবে; মূলত একটি উচ্চ-মানের বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; মানুষের জীবিকা ও কল্যাণকে একটি নতুন স্তরে পৌঁছাতে হবে।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সময়পর্ব হল সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ নির্মাণের নতুন যাত্রার প্রথম পাঁচ বছর। এতে চীনের উন্নয়নের নতুন পর্যায় শুরু হবে। উচ্চমান, উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া, জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, জনগণের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করা, নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া, ইত্যিাদি হবে চীনের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উল্লেখ্য, চীনের 'পাঁচসালা পরিকলল্পনা' হল সিপিসি'র দেশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এটি চীনের উন্নয়নকে যাচাই করার গুরুত্বপূর্ণ উপায়ও বটে। একে বলা হয় চীনের ভবিষ্যত উন্নয়নের ব্লুপ্রিন্ট। ১৯৫৩ সালে চীনের প্রথম 'পাঁচসালা পরিকল্পনা' গ্রহণ করা হয়েছিল। আর এখন 'চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা' গ্রহণের কাজ চলেছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে চীন নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।