গতকাল (রোববার) ছিল চীনের ঐতিহ্যবাহী ছোং ইয়াং উত্সব। ৯ সেপ্টেম্বরকে চীনা ভাষায় বলা হয় চিউ। চিউ মানে দীর্ঘস্থায়ী। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত এ উত্সবকে ‘বয়স্কদের উত্সব’ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চীনের মানুষ ‘বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শনের চেতনায় নিজকে গড়ে তুলেছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তার বক্তব্যের মাধ্যমে চীন- এমনকি বিশ্বের বয়স্ক মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর কথা বলেছেন এবং চীনের ‘বয়স্কদের শ্রদ্ধার’ চেতনা সম্প্রসারণ করেছেন।
১৯৮৪ সালে ‘পিপলস ডেইলি’ পত্রিকায় সি চিন পিংয়ের নামে প্রকাশিত প্রথম সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিলো ‘মধ্যবয়সী ও তরুণ’ কর্মকর্তাদের উচিত বয়স্কদের শ্রদ্ধা জানানো’। সম্পাদকীয়টি তেমন বড় ছিল না। তবে তাতে সি চিন পিংয়ের ‘বয়স্কদের শ্রদ্ধা’ জানানোর চেতনা প্রকাশিত হয়েছে। সেসময় সি চিন পিং হ্যপেই প্রদেশের চেং থিং জেলার সিপিসি’র সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেলা প্রশাসনের একমাত্র গাড়িটি বয়স্ক কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য দিয়েছিলেন। তিনি নিজে সাইকেল চড়ে অফিসে যাতায়াত করতেন।
চীনে একটি প্রবাদ আছে, নিজের বয়স্ক আত্মীয়দের শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি অন্যান্য বয়স্কদের শ্রদ্ধা জানাতে ভুলবে না। সি চিন পিং নানা ইভেন্টে বয়স্কদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ভোলেন নি।
চীনের ‘জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধ বা বিশ্বের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধ’ জয়ের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যখন বয়স্ক সেনাদল সামনে চলে আসে, তখন সি চিন পিং উঠে দাঁড়িয়ে তাদের সম্মান জানান।
৯৪ বছর বয়সী বয়স্ক বীর চাং ফু ছিংকে দেখে সি চিন পিং শরীর ঝুঁকিয়ে তার হাত ধরে কথা বলেন।
৯১ বছর বয়সী ‘চীনের পরমাণু ম্যারিনের পিতা’ হুয়াং স্যু হুয়াকে দেখে তিনি তার হাত ধরে তাকে নিয়ে নিজের পাশে বসান এবং ছবি তোলেন।
সাধারণত বয়স্কদের শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেন নি সি চিন পিং। এ চেতনা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
২০১৪ সালে লানচৌ শহরে পেনশন রেস্তোরাঁ পরিদর্শনের সময় যখন ৭২ বছর বয়সী বয়স্ক ইয়াং লিন থাই’র সামনে কোনো খাবার ছিল না, তখন সি চিন পিং সেবকের হাত থেকে খাবার নিয়ে নিজে তার কাছে পৌঁছে দেন।
২০১৩ সালের নববর্ষ উপলক্ষ্যে সি চিন পিং বেইজিংয়ের হাই থিয়ান অঞ্চলের নার্সিং হোমে বয়স্কদের দেখতে যান এবং তাদের খোঁজখবর নেন। একসঙ্গে ছবি তোলার পর তিনি বয়স্কদেরকে ছবি দিতে না-ভোলার নির্দেশ দেন।
বিশ্বের বুকে চীনে বয়স্কদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০১৯ সালের শেষে ৬০ বছর বয়সী বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ছিল ২৫ কোটি ৪০ লাখ; যা জনসংখ্যার ১৮.১ শতাংশ। এর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী ও এর বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১৭ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে।
সি চিন পিংয়ের কাছে ‘বয়স্কদের লালন, আনন্দ ও নিরাপত্তা’ শুধু পরিবার নয়, ‘দেশের জন্য বড় কাজ। তার নির্দেশনায় চীনের পেনশন ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত হয়েছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে পেনশনের শয্যার সংখ্যা ৭৬ লাখ ১০ হাজার এবং পেনশন সংস্থার সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সামাজিক খাতে অবদান ৫০ শতাংশ।
আশা করা যায়, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নিজের উদাহরণ থেকে চীনের বয়স্কদের জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।
(রুবি/তৌহিদ)