কৃষকের বাড়িতে গ্রন্থাগার
2020-10-25 17:04:10

কৃষকের বাড়িতে গ্রন্থাগার

প্রতি শুক্রবার চীনের জিয়াংসু প্রদেশের রুফু শহরের রুছেং থানার শিলি বসবাস এলাকার বাসিন্দা ছেন চাও ইউ'র বইবন্ধুদের সম্মেলন আয়োজিত হয়। তাঁর স্ত্রী তাঁর জন্য কাপ, বই ও চশমা প্রস্তুত করেন। দুপুর ১২টায় ৭৮ বছর বয়সী ছেন চাও ইউ বাড়িতে কাজ করার পর বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রন্থাগারে যান।

এক কিলোমিটার দূরে এক আবাসিক এলাকায় অবস্থিত গ্রন্থাগারে ৭২ বছর বয়সী কর্মী স্যু ইউয়ান গুই হলেন একজন স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি গ্রন্থাগারের বই সাজিয়ে রাখেন। প্রতি বইয়ে পরিচয় লেখা আছে। গ্রন্থাগারে অনেক বই। কিন্তু হিসেবে তার ভুল হয় না। কোন বই কোথায় আছে, তা স্যু ইউয়ান গুই জানেন।

২০০৯ সালে শিলি আবাসিক এলাকায় কৃষক বাড়ির গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন গ্রন্থাগারে মাত্র ২৬০০টি বই ছিল। বর্তমান ৪৬৮৪টি আছে। গ্রন্থাগারের পাঠক স্থানীয় শিশু ও কৃষকরা। স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে বই পড়ায় উত্সাহ দেয়ার জন্য স্যু ইউয়ান গুই বিশেষ করে বই পড়া গ্রুপ গড়ে তুলেছেন। প্রতি শুক্রবার হলো গ্রুপটির নিয়মিত সম্মেলন দিন। অংশগ্রহণকারীরা বই পড়ার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। যদিও তাঁরা বেশি লেখাপড়া করেননি, তবুও তাঁদের বই পড়ায় আগ্রহ বেশি।

স্থানীয় বাসিন্দা ছেন চাও ইউ সংবাদিককে বলেন, বর্তমানে পরিবহনব্যবস্থা খুবই ভাল। তিনি চাষের কাজ ছাড়াও ব্যবসা করেন। আগে মাত্র চাষ করতেন। তখন তাঁর পরিবারের বার্ষিক আয় ছিল ১৫০০ ইউয়ান। এখন তাঁর আয় কমপক্ষে এক লাখ ইউয়ান। তাঁর নাতি-নাতনিরও কাজ আছে, মাসিক বেতন ৮ হাজার ইউয়ানেরও বেশি।

কাজ ছাড়া ছেন চাও ইউ বই পড়তে পছন্দ করেন। তিনি বই পড়ার পর পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদেরকে গল্প বলেন। সেজন্য সবাই তাঁকে সম্মান করেন।

তিনি বলেন, "গোটা গ্রামের ৭০৬টি পরিবারের বাসিন্দারা আমার গল্প শুনতে পছন্দ করেন।" তিনি নয় বছর ধরে নিয়মিত বই পড়ছেন। তাঁর জীবন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে।

রুফুতে এ ধরণের গ্রন্থাগার আরো প্রায় ৬০টি আছে। কোনো কোনো গ্রন্থাগার ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। ছেন চাও ইউ বলেন, তিনি আরো বেশি বই পড়তে চান এবং অন্যকে পড়ে শোনাতে চান।

তিব্বতের পাহাড়ী গ্রামে পশুপালক ও কৃষকরা পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন জীবন পেয়েছেন

অধিংকাংশ মানুষের কাছে তিব্বত হলো তুষারময় মালভূমি ও আল্পাইন ঘাট। কিন্তু 'শাননান ১০ মাইল গ্যালারী' বলে পরিচিত লেবুগৌর ভিন্ন দৃশ্য দেখা যায়। এখানে কুমারী বন সুদৃশ্য, খেলাধুলারত বানর ও পাখি সর্বত্র।

লেবুগৌ ইয়ারলুং জাংবো নদীর মাঝারি ও নিম্ন প্রান্তে অবস্থিত শাননান শহরে অবস্থিত। ঘন ঘন কুয়াশার অতিক্রম করলে তুষার মালভূমি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি দৃশ্য আপনার সামনে উপস্থিত হবে।

পাহাড়ে জলপ্রপাত দেখা যায়। সড়কের দুই পাশে বন্য বানর দেখা যায়। গরুগুলো সড়কের পাশে আস্তে আস্তে হাঁটে।

পাহাড়ের গভীর এলাকায় জাতিগত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভবন রয়েছে। এখানে শাননান শহরের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত মামা নামের একটি পরিবেশবান্ধব সচ্ছল গ্রাম।

গ্রামটি ২০১৫ সালে গড়ে ওঠে। এলাকায় বাড়িঘর রয়েছে ৬২টি। এখানে পরিবার মোট ৫২টি। গ্রামটি গড়ে ওঠার পর মামা থানার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কমিটি ও পৌর সরকারের নির্দেশনায় বাসিন্দারা চারটি হোটেল, পাঁচটি রেস্তোরাঁ, পাঁচটি টি হাউস, পাঁচটি দোকান ও পাঁচটি জাতিগত বৈশেষ্ট্যময় পণ্যের দোকান খুলেছেন।

বর্তমানে মামা থানার বসবাসের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। গ্রামটিকে পৃথক পৃথকভাবে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রনালয় 'চীনের সুন্দর গ্রাম' ও 'জাতীয় পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম' হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

মামা থাকার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ছুওনা জেলার লেমেব লেমেনবা জাতি থানা। থানার দক্ষিণে ভারত সীমান্ত, পশ্চিমে ভুটান সীমান্ত। থানাটি হলো চীনের একটি প্রধান সীমান্ত থানা ও সংখ্যালঘু মেবা জাতির একটি এলাকা।

২০১৭ সালে লেমেনবা জাতি থানা তিব্বতের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যময় থানার স্বীকৃতি পায়। লেমেনবা থানার কৃষি ও পশুপালন শিল্প আছে। থানাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৩৫০ মিটার উপরে অবস্থিত। বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে থানাটিতে মালভূমির চা চাষ করা হয়। সেজন্য থানাটি দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়।

বর্তমানে স্থানীয় বাসিন্দারা পর্যটন ও পরিবেশগত শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে ধনী হয়েছে এবং নতুন জীবন পেয়েছেন।