অলিম্পিক বন পার্ক
তা ছাড়া অলিম্পিক স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণের সময় সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি ও ভূগর্ভস্থ তাপসহ নানা সবুজ জ্বালানি প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে পেইচিং অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সবুজ জ্বালানির অনুপাত ২৬ শতাংশেরও বেশি। সৌর শক্তি চালিত বিদ্যুত্ উত্পাদন অনুপাতের দিক দিয়ে পেইচিংয়ের অলিম্পিক স্টেডিয়ামগুলো বিশ্বে প্রথম সারিতে স্থান করে নিয়েছে। এখানে বিদ্যুত্ উত্পাদনের বার্ষিক পরিমাণ ৫ লাখ ৮০ হাজার কিলোওয়াট ঘন্টা। এর জন্য ৫৭০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমেছে।
'সবুজ অলিম্পিক' এর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য পেইচিং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাত্রাও জোরদার করেছে। অলিম্পিক গেমস প্রস্তুতির প্রক্রিয়ায় পেইচিংয়ের রাজধানী ইস্পাত কোম্পানির ধাতব শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরিত হয়েছে। রাজধানী ইস্পাত কোম্পানীর পরিবেশ রক্ষা বিভাগের প্রধান মু হুয়াই মিং বলেন, '২০০৮ সালে পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেয়ার পর রাজধানী ইস্পাত কোম্পানির দূষিত পদার্থ নিঃসরণের পরিমাণ ২০০৭ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমেছে।'
বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নের জন্য রাজধানী ইস্পাত কোম্পানি ছাড়া পেইচিংয়ের আরেকটি বড় কারখানা কোক কয়লা কারখানাও উত্পাদন বন্ধ করে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরিবেশ রক্ষা বিভাগের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পেইচিং কোক কয়লা কারখানার উত্পাদন বন্ধ করার ফলে প্রতি বছর নিঃসৃত কয়লার গুড়াঁ ৭৩০০ টন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ৭৫০০ টন কমেছে। এই কারখানার প্রধান চাং শি ওয়েন বলেন, 'কারখানা স্থানান্তর করা হচ্ছে সবুজ অলিম্পিক গেমসের অন্যতম দাবি। পেইচিং কোক কয়লা কারখানা নির্মাণের সময় পেইচিং শহরের কেন্দ্রস্থলের দূরত্ব দশ বারো কিলোমিটার ছিল। তখন এটা বেশ দূরে মনে হতো। কিন্তু এখন দেখি, এই দূরত্ব ঠিক না। তা ছাড়া এখন প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে, যা দিয়ে কৃত্রিম গ্যাসকে স্থলাভিষিক্ত করা যায়। ফলে কোক কয়লা কারখানার রাজধানীর গ্যাস বাজার থেকে সরে যাওয়া হচ্ছে ইতিহাসের অনিবার্য চাহিদা।'
গুরুতর দূষিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে দূরে স্থানান্তর করার পাশাপাশি পেইচিং মোটর গাড়িগুলোর গ্যাসের নিঃসরণে কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা চালাচ্ছে। অলিম্পিক গেমস চলাকালে পরিবহন সীমিত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া অলিম্পিক গেমসের সময় পেইচিংয়ের বায়ুর গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য পেইচিং শহরের নিকটবর্তী অঞ্চলের বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর অনেক ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ছাত্রী ইয়ে লু
'সবুজ অলিম্পিক' ধারণা চীনা জনগণের মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছে। পেইচিং বাছুই দ্বি-ভাষা স্কুলের ছাত্রী ইয়ে লু 'সবুজ অলিম্পিক' ধারণার বাস্তব অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। তিনি দশ বছর বয়স থেকে পরিবেশ সুরক্ষা চেতনা প্রচার ক্ষেত্রে খুব সচেতন। সবাই তাকে 'পরিবেশ রক্ষাকারী মেয়ে' বলে ডাকে। তিনি অন্তর্মঙ্গোলিয়ার মরুভূমিতে গিয়ে বৃক্ষরোপণ করতেন। তিনি পাবলিক বাসের পুরোনো ব্যাটারি ফেরত আনতেন। তার ব্লকে পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক সচেতনতা গড়ে তুলতেন। তিনি বলেন, 'সবুজ অলিম্পিকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পরিবেশ রক্ষার ব্যক্তি সচেতনতা। প্রতিটি মানুষ সচেতন থাকলে আমার মনে হয়, ব্যাটারির সমস্যা, বর্জ্য পদার্থের সমস্যা, পানি ও জ্বালানি সাশ্রয়ের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। আমরা পরিবেশ সচেতনতা প্রচার করতে চাই, পরিবেশ রক্ষার দু'একটি বিশেষ কর্মসূচী নয়।'
ইয়ে লুর প্রয়াস গোটা সমাজের স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি এথেন্স অলিম্পিক গেমস ও পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মশাল বাহক হয়েছেন।
সবুজ অলিম্পিক ধারণা কার্যকরের জন্য পেইচিং সকল শহরবাসীকে সবুজায়নে অংশ গ্রহণ উত্সাহিত করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭ সালে পেইচিংয়ের বনাঞ্চলের আয়তন ৫১ শতাংশের বেশি। শহরাঞ্চলের ২৪৬ দিন বায়ুর মান ভালো ছিল। এখন সবুজ পাহাড় ও বন পেইচিং শহরকে ঘিরে রেখেছে। পেইচিংয়ের উপকন্ঠে সবুজ বাগানের মতো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) 1 2
|