ইয়ুন নান ও আমার দেশের অনেক প্রথা প্রায় একই। ইয়ুন নান আমার বাড়ির মত। খাবার জিনিস লাওসের মত। যেমন চীনের সিশায়ুংবাননা। এখানে আপনি চীনা ও লাওসের লোক ঠিক পৃথক করতে পারবেন না। আমি বলি আমি একজন চীনা। তা অনেক লোকই বিশ্বাস করে।
ভিয়েতনামের সুন্দরী মেয়ে নুয়েন থি আন থুয়ান ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর চীনা ভাষা শিখছে। তার চীনা ভাষাও খুব ভালো। সংলাপের সময় তার কোন অসুবিধা হয় না। সে বলেছে,
এখানকার শিক্ষকগণ খুব ভালো। তারা ক্লাসে আমাদেরকে সাহায্য করা ছাড়াও, ক্লাসের বাইরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে খান বা গল্প করেন। চীনা ভাষা কোর্সে কিছু বিষয়বস্তু আমরা বুঝতে না পারলে তারা ভাবভংগী দিয়ে বা অন্য পদ্ধতির মাধ্যমে তা ব্যাখ্যা করেন। আমরা বোঝার পরই কেবল তারা অন্য বিষয়বস্তু আমাদের বলেন। শিক্ষকগণ খুব সহিষ্ণু। যেমন যে ছাত্রের শ্রবনশক্তি ভালো নয়, শিক্ষক তাকে এককভাবে সাহায্য করেন।
ক্লাসের শিক্ষাদান ছাড়া, ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য চীনের কুংফু, চীনা হস্তলিপি, চীনের জাতীয় বাদ্যযন্ত্র এবং নৃত্যসহ বিভিন্ন ক্লাসের অবসরকালীন কর্মসূচী চালু করেছে। নুয়েন থি আন থুয়ান বলেছেন,
আমি চীনের কুংফু ও হস্তলিপি কোর্স খুব পছন্দ করি। হস্তলিপি কোর্স শেখার সময় আমি খুব শান্তি ও আরাম বোধ করি। বিশেষ করে, আমি চীনের প্রাচীন ইতিহাস বুঝতে পারি।
এছাড়া, প্রতি বর্ষের শেষে ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় "চীনা ভাষা প্রীতি সম্মিলনী" নামে নিয়মিতভাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকের পরিচালনায় বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান পরিবেশেন করে। সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় সব ছাত্রছাত্রী গভীর আবেগের সঙ্গে বলেছেন, সদ্য-সমাপ্ত চীনা ভাষা প্রীতি সম্মিলনী খুব ভাল। ভিয়েতনামের মেয়ে তাও থি হং টোন আনন্দের সঙ্গে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, যদিও সে শুধু তিন মাস চীনা ভাষা শিখছে , ক্লাসে লেখাপড়া খুব ব্যস্ত এবং তাদের অনুষ্ঠান প্রস্তুতির সময়ও খুব কম। তবুও তারা তৃতীয় স্থান লাভ করেছে। তারা খুব খুশি। সে তার সহপাঠী ছুন য়েলিমের সঙ্গে তাদের অনুষ্ঠান---তা বান ছেংর মেয়ে নামক একটি চীনা গান পরিবেশন করেছে।
বিদেশী ছাত্রছাত্রী ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্যু কুয়াং ইউয়ান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা এই প্রীতি সম্মিলনীর ব্যাপারে খুব আগ্রহী। তারা খুব ভালো পরিবেশন করেছে। এ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর এই রকম অনুষ্ঠান দুবার আয়োজন করা হয়েছে। ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্রছাত্রী ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এই প্রীতি সম্মিলনীতে যোগ দিতে আসে। তারা এ সময়কে নববর্ষের মত মনে করে। অধ্যাপক স্যু কুয়াং ইউয়ান বলেছেন,
চীনা ভাষা প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়ায়, তারা নিজেদের মাতৃভাষা বলে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হচ্ছে,প্রথমতঃ এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের এক শিক্ষা বর্ষে তাদের লেখাপড়ার ফলাফল প্রদর্শন করা। দ্বিতীয়তঃ তাদের নৈপূণ্য প্রকাশ করার প্লাটফরম দেয়া। তৃতীয়তঃ চীনা ভাষা প্রীতি সম্মিলনীর মাধ্যমে তাদের চীনা ভাষার মান উন্নত করা এবং তাদের মধ্যে চীনা ভাষা শিক্ষার আগ্রহ সৃষ্টি করা।
ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা ছাড়া, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক সহযোগিতা চালাচ্ছে। গত বছর ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের ঢাকায় গড়ে উঠেছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় ইরানের তেহরাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে পরামর্শ করেছে। পরিচালক স্যু কুয়াং ইউয়ান ইরান সফরকালে ইরানের সাধারণ লোকদের সঙ্গেও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন,
আমি ইরানে একজন ঘড়ি বিক্রির ব্যবসায়ী দেখেছি। তিনি তেহরাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক হয়েছেন। তিনি বলেছেন, তেহরাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টটিউট প্রতিষ্ঠার পর তিনি নিশ্চয় প্রথম ছাত্রে পরিণত হবেন। বর্তমানে তিনি চীনের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। প্রতি বছর তিনি কুয়াং চৌ পণ্য মেলায় দু'বার যান। চীনা ভাষা জানার পর তার আরো সহায়ক হবে। ইরানে কুফসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা সেখানকার সামাজের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে পারবে। বর্তমানে ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় ইরানের তেহরাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইচ্ছা পত্র স্বাক্ষর করেছে।
গত পাঁচ বছরে ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উ সুং বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণপূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার বহু ছাত্রছাত্রীকে আকৃষ্ট করেছে , শুধু তাই নয়, বরং বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতার প্রকল্পও ইতিবাচকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। 1 2 3
|