বিদেশী ধর্মপ্রচারক যেমন পাই হুয়া লিন গ্রামবাসীদের জন্য খ্রীস্টান ধর্ম বয়ে এনেছেন , তেমনি তাদেরকে যিশু খ্রীস্টের বন্দনার সময় পাঠ করা ধর্মীয় সংগীত ও কবিতাও শিখিয়েছেন । যিশু খ্রীস্টের বন্দনার ধর্মীয় সংগীত ও কবিতা পাঠ করা প্রসংগে গ্রামের বৃদ্ধ ইয়া কুও বলেছেন ,
যখন ধর্মপ্রচারক আসলেন , তখন তিনি খুব অল্পবয়সী ছিলেন । ধর্মপ্রচারকের উদ্যোগে গ্রামবাসীদের জন্য যিশু খ্রীস্টের বন্দনার সময় ধর্মীয় সংগীত ও কবিতা পাঠ করা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে । বৃদ্ধ ইয়া কুও শুধু একবার এই প্রশিক্ষণ কোর্সে গিয়েছিলেন । তিনি একাগ্রচিত্তে শেখেন নি । তিনি যে সংগীত ও কবিতা আবৃত্তি করতে পারেন , তা অন্যান্য গ্রামবাসীদের কাছ থেকে শিখেছেন । পরে ধীরে ধীরে তিনি অন্যদের এই ধরনের সংগীত ও কবিতাও শেখানো শুরু করেন ।
পাই হুয়া লিনের গ্রামবাসীরা নিজ জাতির বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে খ্রীস্টান ধর্মের সংস্কৃতিকে কাজে লাগিয়ে লি সু ভাষায় এই ধর্মীয় সংগীত ও কবিতা পাঠ করেন । এই ধরনের সংগীত ও কবিতা পাঠ করার জন্য কন্ঠস্বরের দিক থেকে গায়কদের চার ভাগে বিভক্ত করা যায় । প্রথম ভাগ অল্পবয়সীদের জন্য উপযোগী । দ্বিতীয় ভাগ মহিলাদের জন্য এবং তৃতীয় ও চতুর্থ ভাগ প্রৌঢ়দের জন্য । গীর্জার গায়কদের মধ্যে তখনকার অনেকেই মারা গেছেন । গীর্জায় শুধু ৭০ বছরেরও বেশী বয়সী প্রধান ধর্মপ্রচারক বেঁচে আছেন । কিন্তু লি সু জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এই ধরনের ধর্মীয় সংগীত ও কবিতা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে ।
পাই হুয়া লিন গ্রামের গীর্জা ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । গীর্জায় সপ্তাহে পাঁচ বার ধমীয় ক্রিয়াকর্ম আয়োজন করা হয় । তখন ধর্মীয় সংগীত ও কবিতা পাঠ করা হয় । প্রতি বার ধমীয় ক্রিয়াকর্ম এক ঘন্টা স্থায়ী হয় । রবিবার গীর্জায় দু'শোরও বেশি খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী সমবেত হন । গত কয়েক বছর ধরে অধিক থেকে অধিকতর পর্যটক লি সু জাতির খ্রীস্টান ধর্মীয় সংগীত ও কবিতা উপভোগ করার জন্য পাই হুয়া লিন গীর্জায় যান । সেজন্য গীর্জায় পর্যটকদের খ্রীস্টান ধর্মীয় সংগীত ও কবিতা উপভোগ করার জন্য একটি বিশেষ সংগীত দল গড়ে তোলা হয়েছে । এই দলের সকল সদস্যই পাই হুয়া লিনের অধিবাসী । সংগীত দলের নেতা লি চুং ওয়েন জানিয়েছেন , দলের সদস্যরা গান গাওয়াতে পারদর্শী । তাদের বেশি প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজন নেই ।
গীর্জায় সপ্তাহে পাঁচ বার উপাসনা করা হয় । এর পাশাপাশি সংগীত দলের সংগীত ও কবিতা পাঠ করার চর্চাও করা হয় । শীতকালে কৃষি কাজ তেমন থাকে না । সংগীত দলের সদস্যরা তাই প্রতি দিন রাতে সংগীত ও কবিতার অভিনয় চর্চা করেন ।
স্থানীয় ধর্ম বিষয়ক ব্যুরোর কর্মকর্তা হু স্যুই ছাই সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , এই সংগীত দল পর্যটকদের ব্যাপক কদর পেয়েছে । তাঁরা ইউন নান প্রদেশের রাজধানী খুনমিনেও সংগীতপরিবেশন করেছেন । ভবিষ্যতে পাই হুয়া লিনের লি সু জাতির সংগীত দল চীন ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে সংগীত পরিবেশন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন ।
গত কয়েক বছরে স্থানীয় সরকার লি সু জাতির ধর্মীয় সংগীত ও কবিতা পাঠ করাটাকে নু চিয়াং নদীর দর্শনীয় স্থানের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বলে নির্ধারণ করেছে । ২০০৮ সালের পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লি সু জাতির এই অনুষ্ঠান যাতে পরিবেশিত হয় , সেজন্য যাচাই করার জন্য তা অলিম্পিক গেমসের সাংগঠনিক কমিটির কাছে তা পাঠানো হয়েছে ।
1 2
|